করোনায় বিশ্বজু’ড়ে চলছে মৃত্যুর মিছিল। সময়ের যত গড়াচ্ছে লাশের স্তুপ ততই বড় হচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় লাশের পাহাড় জমেছে। এরই মধ্যে ঘাতক এই ভাইরাসের ছোবলে বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২০ লাখ। ভাইরাসটির ছোবলে প্রাণ হারানো মানুষের দিকে নিবিড় পর্যবে’ক্ষণে কিছু অভিন্ন লক্ষণ দেখতে পেয়েছেন চিকিৎসক ও গবেষকেরা। মৃ’ত্যু ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রধানত পাঁচটি মূল কারণ খুঁ’জে পেয়েছেন তারা।
১) বয়স
গবেষণায় দেখা গেছে যে ৭০ বছরের বেশি বয়সের লোকদের জন্য কভিড-১৯ সংক্রমণে মা’রা যাওয়ার ঝুঁ’কি সবচেয়ে বেশি থাকে। চীনের উহানের গবেষকেরাও একই ত’থ্য দিয়েছিলেন। সেখানে দুটি হাসপাতালে ১৯১ জন করোনাভাইরাসে মৃ’ত ব্যক্তির পর্যবে’ক্ষণে তারা এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। বিশ্লে’ষণটি এই ই’ঙ্গিত দেয় যে পূর্ব-বিদ্যমান শর্ত নির্বিশেষে বয়স এবং মৃ’ত্যুর ঝুঁ’কির মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষণার সহ-লেখক জিবো লিউ বলেছেন, ‘বয়স্ক ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষ’মতা অল্পবয়সীদের চেয়ে অনেক কম থাকে। দু’র্বল প্রতিরো’ধ ব্যবস্থা করোনার প্র’দাহকে আরো বা’ড়িয়ে তোলে ফলে হার্ট, মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গগুলির স্থায়ী ক্ষ’তি করে। যেটা বয়স্ক রোগীদের মৃ’ত্যুর অন্যতম কারণ।’
২) জে’ন্ডার
করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগ কোভিড–১৯ এ নারীর চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর হার বেশি। দেশ ভেদে এ হার দ্বিগুণ–আড়াইগুণ বেশি। তবে নারীর চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর হার বেশি কেন— এর জবাব দিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নারীদের সুস্থ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং রোগ প্রতিরো’ধ ক্ষমতার কারণে তারা পুরুষের চেয়ে ভাইরাসের বিরু’দ্ধে শ’ক্ত ল’ড়াই করতে পারছে। যদিও এসব মতামত নিয়ে যথেষ্ট বি’র্তক রয়েছে। জি’নগত আচ’রণ ও হ’রমো’ন পার্থক্যও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া শ’ক্তিশা’লী রো’গ প্রতিরো’ধ ক্ষ’মতার ব্যাপারে পরিবেশগত বিষয়ও থাকতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে,যদিও নারীদের রোগ প্রতিরো’ধ ক্ষমতা শ’ক্তিশা’লী, এরপরও রোগ প্রতিরো’ধ ক্ষমতাকে দু’র্বল করে ফে’লে এমন অ’টোইমি’উন রোগের ৮০ শতাংশের বেশি নারীদেরই হয়ে থাকে। এটার কারণ হখন একটি রোগ প্রতিরো’ধ ক্ষমতা শ’ক্তিশা’লী হয়,তখন অন্যান্য রোগ দেহের অন্য অ’ঙ্গকে ল’ক্ষ্যবস্তু করে ক্ষ’তিগ্র’স্থ করে।
৩) অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা
অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যায় যারা ভু’গছেন তাদের করোনভাইরাসে মা’রা যাওয়ার ঝুঁ’কি বেশি থাকে। এর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, মাঝারি থেকে গুরুতর হাঁপানি, হার্টের পরিস্থি’তি, ডায়াবেটিস, যকৃতের রোগ এবং কিডনিজনিত রো’গ রয়েছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের শ্বা’স প্র’শ্বাসের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফ্যান চুং বলছিলেন, ‘এটি একটি নতুন সং’ক্রমণ, তবে ফ্লু’ মহামা’রি নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি যে যারা আগে থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভু’গছেন তাদের জন্য এটা আরো খা’রাপ হবে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যা উহানের প্রথম এক হাজার করোনা রোগীর ত’থ্য দিয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, ডায়াবেটিস, উচ্চ র’ক্তচা’প, হৃদরো’গ, সিওপিডি, ক্যান্সার এবং রেনাল ডিজিজ আক্রা’ন্তদের অবস্থা খুব খা’রাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি স’ন্দে’হ করি যে খুব দু’র্ভাগ্যক্র’মে যুক্তরাজ্যে যারা মা’রা গেছেন এমন লোকদের মধ্যে এই শর্তগুলির এক বা একাধিক বিদ্যমান ছিল।
৪) স্থূলতা
অতিরিক্ত ওজনযু’ক্ত লোকেরাও করোনভাইরাসে মা’রা যাওয়ার অধিক ঝুঁ’কিতে থাকে। গত মাসে, এনএইচএসের একটি অডিট থেকে জানা গেছে যে, করোনভাইরাস থেকে গু’রুতর অসু’স্থ হয়ে পড়েছেন এমন প্রায় দুই তৃতীয়াংশ রোগী স্থূ’ল। অডিট অ’নুসারে, ঘা’তক এই ভাইরাসের কারণে যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলিতে নিবিড় পরিচর্যা করা রোগীদের ৬৩ শতাংশই অতিরিক্ত ওজন, স্থূ’লকায় বা গু’রুতর স্থূল।
এদিকে, ফ্রান্সের প্রধান মহামারী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জাঁ-ফ্রানসোয়া ডেলফ্রেসিও সত’র্ক করেছেন যে, অতিরিক্ত ওজনযু’ক্ত লোকেরা বেশি ঝুঁ’কিতে পড়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই ভাইরাসটি যুবকদের জন্যও ভ’য়ঙ্ক’র, বিশেষত স্থূল যুবকদের উপর আ’ঘা’ত করতে পারে। যাদের ওজন বেশি তাদের সত্যই যত্নবান হওয়া দরকার।’
৫) রোগ প্রতিরো’ধ ক্ষমতা কম
যাদের রোগ প্রতিরো’ধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য এই ভাইরাসের সং’ক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁ’কি অনেক বেশি। ইমি’উন সি’স্টে’মটি যতটা শ’ক্তিশা’লী এবং সুষম রাখা যায় সেই প্রচে’ষ্টা চালানো উচিত। একজন ব্যক্তির রোগ প্রতিরো’ধ ক্ষমতা নানা কারণে কমে যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সারের চিকিৎসা, ধূ’মপা’ন, অস্থি মজ্জা বা অ’ঙ্গ প্রতিস্থা’পনের মধ্য দিয়ে যাওয়া, রোগ প্রতিরো’ধ ক্ষমতা ঘা’টতি, নি’য়ন্ত্রি’ত এইচআইভি বা এই’ডস এবং ক’র্টিকোস্টে’রয়েডগুলির দী’র্ঘায়িত ব্যবহার এবং অন্যান্য অনাক্র’ম্যতা।
মোনাশ ইউনিভারসিটির গবেষক সারা জোন্স এবং ফ্যাবিয়েন ভিনসেন্ট ব্যাখ্যা করেছেন, ‘যেহেতু ই’মিউনো’কম্পর্সি’ড লোকদের প্রতিরো’ধ ব্যবস্থা ত্রু’টিযু’ক্ত বা অকা’র্যকর, তাই তারা সার্স-কোভি -২ ভাইরাস সহ অন্যান্য অপরিচিত ভাইরাসের দ্বারা সহজেই আক্রা’ন্ত হতে পারে। তাদের প্রতিরো’ধ ক্ষ’মতা এসব ভাইরাসকে ঠে’কাতে অ’ক্ষ’ম। কভিড -১৯ এ মৃত্যুর অন্যতম প্রধান একটি কারণও এটি।সূত্র- দ্য মিরর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।