জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের দ্বিতীয় যে ব্যক্তিটি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তিনি সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক (৭৩)। তার মৃত্যুর পর রাজধানীর মিরপুরের উত্তর টোলারবাগের যে বাসভবনে তিনি বসবাস করতেন, সেটাসহ ওই এলাকার আরও কিছু ভবন লকডাউন করার নির্দেশ দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ভবন ঘিরে রেখেছে পুলিশ। আশেপাশের এলাকায় চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। মৃত ওই ব্যক্তির করোনা আক্রান্তের বিষয়ে জানা গেছে, তিনি নিজে কিংবা তার পরিবারের কেউ বিদেশফেরত ছিলেন না।
দারুস সালাম থানার ওসি জানান, ‘অবসরের সময়ে ওই ব্যক্তি শুধু বাসা ও মসজিদের মধ্যে যাতায়াত সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। তিনি বাসাতেই থাকতেন, বের হতেন শুধু নামাজ পড়ার জন্য।’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শারীরিক অসুবিধার কারণে গত মঙ্গলবার কল্যাণপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন তিনি। তার হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষার পরও কোনো রোগ ধরা পড়েনি। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ১৭ মার্চ ওই হাসপাতাল থেকে তাকে মিরপুরের আরেকটি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তার শ্বাস–প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়ায় তাকে একজন বক্ষব্যাধি চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেন। চিকিৎসকই প্রথম আশঙ্কা করেন রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। ওই চিকিৎসক এ বিষয়ে আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও মৃত ব্যক্তি বিদেশ থেকে আসা কারো সংস্পর্শে আসেননি বলে করোনার নমুনা সংগ্রহ করতে অস্বীকৃতি জানায় আইইডিসিআর। সেই রোগীকে ওই হাসপাতালে ভর্তির পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ করে তাকে একই হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। তাদের তদবিরেই পরে পরীক্ষা করা হয়। গতকালই (শুক্রবার) মিরপুরের ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়, রোগী করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কলেজের ওই অধ্যাপক শনিবার ভোরে মারা যান। তার মৃত্যুর পর ওই ভবনের ৩০টি পরিবারকে পুলিশ পাহারায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার পর বন্ধ রাখা হয়েছে ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। কোয়ারেন্টাইনে আছেন আইসিইউ’র চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়রা। শুধু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি নন, আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির শরীর থেকেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় দাফনের জন্য নেয়া হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল অনুযায়ী দাফনের বিশেষ নির্দেশনায় হাসপাতাল বা বাড়ি থেকে মৃতদেহ সংগ্রহ, পরিবহন, দাফনসহ প্রতিটি পর্যায়ের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনায় বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা সন্দেহভাজন কেউ মারা গেলে মৃতদেহ সরানো, সৎকার বা দাফন শুরুর আগে অবশ্যই আইইডিসিআরকে জানাতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির চার সদস্যের একটি দল সম্পূর্ণ সুরক্ষা পোশাক পরে মৃতদেহ সৎকার বা দাফনের জন্য প্রস্তুত করবে। মৃত্যুর স্থানেই মৃতদেহ প্লাস্টিকের কাভার দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে। দলের নেতা মৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নির্দিষ্ট কোনো অনুরোধ থাকলে তা জেনে নেবেন। কোথায় কবর দেওয়া হবে, সেটিও ঠিক করে রাখতে হবে।
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে মরদেহ গোসল করানো যাবে না উল্লেখ করে সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরিবারের অনুরোধ থাকলে মরদেহ গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম বা পানি ছাড়া অজু করানো যাবে। আর পরিবারের পক্ষ থেকে কাফনের কাপড়ের জন্য অনুরোধ থাকলে সেলাইবিহীন সাদা সুতির কাপড় কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কাফনের কাপড় প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে তার ওপর মরদেহ রাখতে হবে এবং দ্রুত ব্যাগের জিপার বন্ধ করতে হবে। ব্যাগে কাফনের কাপড় দেওয়ার সময় যারা মরদেহ উঁচু করে ধরবেন, তাদের অবশ্যই সুরক্ষা পোশাক পরে থাকতে হবে। পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যাত্রাকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মৃতদেহটি দাফন পরিচালনাকারী দলের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়িতে দুটি অংশ থাকতে হবে, যাতে চালক ও পরিবহন কামরার মধ্যে প্রতিরক্ষামূলক কাচ বা প্লাস্টিকের আবরণ থাকে। পরিবহনের পর ব্যবহৃত বাহনটি জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এ সময় জীবাণুমুক্ত করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরতে হবে। দাফনের সময় মৃতদেহ বহনকারী ব্যাগটি কখনোই খোলা যাবে না। দাফনের পর কবর বা সমাধিস্থানটি ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার গভীর মাটির স্তর দিয়ে ঢাকার পাশাপাশি দাফন করা স্থানের আশেপাশে উপযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কারও করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তি যে স্থানে মারা গেছেন, সেই স্থানটিও যত দ্রুত সম্ভব জীবাণুমুক্ত করা এবং মৃতদেহ দাফনের পর সেই স্থান ভালোভাবে ঘিরে রাখতে বলা হয়েছে। এমন বিশেষ ব্যবস্থায় করোনায় মৃত্যুবরণকারীকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।