নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর রেলস্টেশনের পাশে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটি এখন কার্যত পরিত্যক্ত। ২০১৫ সালে জনসুরক্ষার উদ্দেশ্যে তৈরি হলেও দীর্ঘদিন ব্যবহারের অনুপযোগী থাকায় এটি এখন স্থানীয়দের কাছে ‘ভূতুড়ে ব্রিজ’ নামে পরিচিত।
পথচারীদের অভিযোগ, ব্রিজটির সিঁড়ি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রধান সড়ক ডিবি রোডের বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ায় এর ব্যবহার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ রেললাইন পার হতে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা বেছে নিচ্ছেন, আর অব্যবহৃত ব্রিজটি পরিণত হয়েছে ভবঘুরে ও মাদকসেবীদের নিরাপদ আড্ডাস্থলে।
স্থানীয় দোকানদার সাইফুল ইসলাম বলেন, “রাতে কেউ এই ব্রিজে ওঠে না। আলো নেই, চারপাশ নোংরা, অনেক সময় মাদকাসক্তরা এখানে ঘুমায়। ভয় লাগে।”
ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে প্রতিদিন ২৪টি ট্রেন চলাচল করে। এতে দিনে অন্তত ২৪ বার রেলগেট বন্ধ থাকে, আর প্রতিবারই কয়েক হাজার মানুষ ও শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ চরমে।
এই এলাকায় রয়েছে শ্রীপুর সরকারি কলেজ, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহিলা ডিগ্রি কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি কমাতে যে ব্রিজটি নির্মিত হয়েছিল, সেটিই আজ অব্যবহারের কারণে ঝুঁকির উৎসে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্রিজ নির্মাণের সময় কিছু প্রভাবশালী দোকানদারের সুবিধার জন্য সিঁড়ি উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর নিচে এখন চলছে জমজমাট ব্যবসা-সেলুন, ওষুধের দোকান, মোবাইল সার্ভিস ও খাবারের দোকান পর্যন্ত রয়েছে। ফলে ব্রিজের প্রকৃত উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়েছে।
শ্রীপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল হাসান বলেন, “ব্রিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু সিঁড়ি ডিবি রোডের সঙ্গে না মেলায় কেউ এটি ব্যবহার করছে না।”
একই মত শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসেন দীপুরও। তিনি বলেন, “হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিদিন রেললাইন পেরিয়ে ঝুঁকি নিচ্ছে, অথচ ব্রিজটা দাঁড়িয়ে আছে অকেজোভাবে।”
শ্রীপুর বাজার ব্যবসায়ী নিরাপত্তা কমিটির সভাপতি আরিফ সরকার বলেন, “ব্রিজের সিঁড়ি ডিবি রোডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করলেই হবে না; ব্যবহারের উপযোগী নকশা, রক্ষণাবেক্ষণ ও সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি। না হলে কোটি টাকা ব্যয় করেও সুবিধা মিলবে না জনগণের।
শ্রীপুর পৌরসভার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ব্রিজটি সংস্কার ও আলো স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এটি আবার সচল হবে।”
অন্যদিকে, স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, “ব্রিজের পশ্চিম পাশে বৈধ দোকান থাকলেও পূর্ব পাশে অবৈধ দোকান রয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।”
স্থানীয়দের একটাই দাবি-ব্রিজের সিঁড়ি ঘুরিয়ে ডিবি রোডের সঙ্গে সংযোগ করা হোক। তাহলেই এই কোটি টাকার অব্যবহৃত ফুটওভার ব্রিজটি সত্যিকার অর্থে জনগণের কাজে লাগবে, কমবে শহরবাসীর দুর্ভোগও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।