নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের ৫টি আসনের মধ্যে ৫টিতেই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী নিজ দলের নেতারা। এর মধ্যে ৪ আসনেই সমানে সমান লড়াই হলেও কিছু ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এগিয়ে থাকার আভাস মিলছে। গাজীপুর-৩ আসন ছাড়া সবগুলো আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর ‘ছায়াসঙ্গী’ হিসেবে কাজ করছেন গাসিকের আলোচিত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
সাবেক মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতার জনপ্রিয়তাও কম নয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ থেকে গাজীপুরের সংসদীয় ৫টি আসন প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হয়েই কাজ করছেন তিনি। গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুর ১, ২ ও ৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে প্রচারণায় অংশ নেন। জেলা শহরের রাজবাড়ী মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেন।
গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও সিটি কর্পোরেশনের আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল।
গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর ও টঙ্গী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তার আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন নিজ দলের দুজন। একজন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি কাজি আলিম উদ্দিন। আরেকজন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম।
গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংরক্ষিত মহিলা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক রুমানা আলি টুসি। তার প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বতন্ত্রে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওই আসনের বর্তমান সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ।
তবে, গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ উদ্দিনের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি। তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কৃষকলীগের উপদেষ্টা আলম আহমেদের মনোনয়ন বাতিল হলেও মঙ্গলবার হাইকোর্ট থেকে বৈধতা পেয়েছেন।
গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আখতারুউজ্জামান।
সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুরের-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল, গাজীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন ও গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান; তিন জনই পেয়েছেন ট্রাক প্রতীক। তাদের পক্ষে কাজ করছেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রতীক বরাদ্দের পর গাজীপুর ১, ২ ও ৫ নং আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এক মঞ্চে নির্বাচনী প্রচারণা করেছেন। যেহেতু জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে, এজন্য নির্বাচন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ধারণা করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জমে উঠেছে নির্বাচন। তবে, জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ফলে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
কোনাবাড়ি মেট্রো থানা আওয়ামী লীগের নেতা নাজমুল হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আমাদের এলাকায় তেমন কোনও কাজ করেননি। এজন্য আমরা একজন তরুণ নেতৃত্ব চাই। যেহেতু জাহাঙ্গীর আলম আমাদের নেতা, তিনিও নেতৃত্বে পরিবর্তন চান; এজন্য আমরা রেজাউল করিমের পক্ষে কাজ করছি। নেতার পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বিজয়ী করার সবুজ সংকেত পেয়েছি, এরপর থেকেই মাঠে কাজ করছি।
৩১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ও শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের সাবেক মেট্রো থানার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জিকু বলেন, গাজীপুর হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। সুতরাং, জাহাঙ্গীর আলম কার পক্ষে কাজ করছেন, এটি দেখার বিষয় না। ভোটের মাধ্যমে জবাব দেবে আওয়ামী পরিবারের সন্তানরা।
গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দ্বীপ বলেন, সত্যিকারের যারা দল করে, তারা কখনও নৌকার বিপক্ষে কাজ বা কথা বলবে না। আমাদের গাজীপুর-২ আসন জাহিদ আহসান রাসেলের হাতেই সুরক্ষিত। নির্বাচনে তিনিই জয়লাভ করবেন, আমরা সেভাবেই কাজ করছি। স্বতন্ত্রের পক্ষে কে কাজ করছেন বা না করছেন- এগুলো আমরা ভাবছি না।
গাজীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি শান্তির এলাকা গড়তে চাই। সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলতে চাই। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর ভাই আমাকে শতভাগ সাপোর্ট দিচ্ছেন। তিনি আমার সঙ্গে আছেন। কাশিমপুর, কোনাবাড়ি এলাকার নেতাকর্মীরাও আমার পক্ষে কাজ করছেন। সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন বলেন, জাহাঙ্গীর আলম আমার থেকে বয়সে ছোট কিন্তু রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অসাধারণ। তিনি আমার সঙ্গে কাজ করছেন। ট্রাক মার্কার বিজয় নিশ্চিত হবে ইনশা আল্লাহ।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটের জন্য, উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার কাজ যে করবে, আমি তার পক্ষে কাজ করবো। ২৫ মে প্রকাশ্যে ভোট চাইতে পারিনি, কিন্তু ৭ জানুয়ারির জন্য সবার কাছে ভোট চাইবো। কোন হুমকি-ধমকি দিয়ে কাজ হবে না। এই ভোট যেন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়, তার জন্য যা করা দরকার তাই করবো। আপামর জনগণের মার্কা ট্রাক, কারণ তারাও আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।