জুমবাংলা ডেস্ক : ‘গার্মেন্টসে চাকরি কইরা সংসারের দরকারি সবকিছু কিনছি। চাকরি কইরা তিল-তিল কইরা জমানো টাকা দিয়া ঘরের সব আসবাবপত্র করেছি। সর্বনাশা আগুনে ঘরের সবকিছুই পু্ইড়া ছাই হইয়া গেছে। পরণের কাপড় ছাড়া আর কোন কিছুই নাই আমার। তাতেও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, আমার স্বামী-সন্তান তো বাঁইচা আছে। কিন্তু স্যার, টেনশনে ঘুমাইতে পারি না। মাইনষের কাছ থেইক্যা টাকা নিছি, ব্যাংক থেইকা টাকা তুলছি আমার জামাইকে একটা অটোরিকশা কিনে দিমু কইয়া। এই ঢাউ পুইড়া গেছে। ঘরের খাবার টাকা কিছুই নাই, এখন আমি কি দিয়া কিস্তির টাকা দিমু? স্যার এহন আমরা কি করমু মাথায় ধরতাছেনা।’
এই ভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সম্প্রতি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক আমবাগান এলাকার সুলতান কলোনিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঘর পুড়ে যাওয়া ওই কলোনির ভাড়াটিয়া স্থানীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোসনা বেগম। অগ্নি দুর্ঘটনার পরে কি ভাবে এখন চলছেন, এমন প্রশ্ন করার সঙ্গে-সঙ্গে হাউমাউ করে কেঁদে তিনি আরও বলেন, স্যার, গরীব হলেও কোনদিন জীবনে কারো ক্ষতি করিনাই, কোন অসৎ টাকা পয়সা উপার্জন আমি করি নাই, আমার জামাইও করে নাই। এর পরেও আল্লামালিক আমগোরে এত বড় শাস্তি দিবো, কোন দিন কল্পনাও করি নাই। চাকরি কইরা ভালোই দিন যাইতাছিল। কিন্তু হঠাৎ কইরা সব শেষ হইয়া গেছে। যারা ধনী মানুষ আর সরকার যদি একটু সাহায্য সহযোগিতা না করে তাইলে বাঁইচা থাকার কোন ভরসা পাইতাছি না।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে মৌচাকে পুড়ে যাওয়া শ্রমিক কলোনিতে সোনালীনিউজের প্রতিনিধি গেলে শুধু জোছনা না, তার মতো আরও অনেকেই সরকারি লোক মনে করে দৌড়ে আসেন।
সুলতানসহ পাশের আরও দুই কলোনিতে বসবাস করা বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরা জানান, প্রতিদিনের মতো গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮ টায় নিজ-নিজ কারখানায় কাজে চলে যান তারা। দিন শেষে ওই দিন সন্ধ্যার দিকে বাসাবাড়িতে আগুন লাগার খবর পেয়ে কারখানা থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় আসার পথে রাস্তা থেকেই দেখেন তাদের বাসাতে দাউদাউ করে ভয়াবহ আগুন জ্বলছে।
কলোনির পাশেই একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন হারেজ মিয়া। সোনালীনিউজকে তিনি জানান, দীর্ঘ ১০ বছর যাবত তিনি গার্মেন্টসে চাকরি করছেন। চাকরি থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়েই তিনি সংসার চালাচ্ছেন। কলোনিতে কম মূল্য বাসা ভাড়া পেয়ে এখানেই থাকতেন তিনি। চাকরি করে জমানো টাকা দিয়ে তার ঘরের আসবাপত্র ও মালামাল কিনেছেন। আগুন লেগে তার সব আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়াও ঘরে থাকা নগদ অর্থও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরিধেয় জামা কাপড় ছাড়া আর কোন সম্বল নেই তার।
জোসনার মতোই আরেক ভুক্তভোগী গার্মেন্টস শ্রমিক রাহিমা আক্তার বলেন, স্যার, আমি অফিসে ছিলাম। হঠাৎ সন্ধ্যার পরে অফিসের ছাঁদ থেকে অনেকেই আমাদের বাসার এলাকায় আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে দৃশ্য দেখে আমাকে জানায়। পরে আমি খোঁজ নিলে জানি এটা আমার কলোনিতেই আগুন লেগেছে। পরে আমি সঙ্গে সঙ্গে ছুটি নিয়ে দৌঁড়ে বাসার দিকে আসতে থাকি। বাসা থেকে একটু দূরেই দেখতে পাই, অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের মতো আমার ঘরেও ভয়াবহ আগুন জ্বলছে। পরে আমি চিকিৎসা দিয়ে এসে দেখতে পাই ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রাহিমা আরও বলেন, স্যার আমার পরণের কাপড় ছাড়া আমার আর কিছুই নাই। এর বেশি কিছু বলতে পারছিনা। আমি সকলের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চাই।
এ দিকে সুলতান কলোনির মালিক সুলতান মিয়া বলেন, তার ছোট একটি চায়ের দোকান রয়েছে। ব্যাংক লোন নিয়ে তিনি টিন সেটের কলোনি গড়ে তুলেছেন। অগ্নিকাণ্ডে তার কলোনির ২১ টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাসার ভাড়াটিয়ার মতো তিনিও নিঃস্ব হয়ে গেছেন। সরকারিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা না পেলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাউসার আহম্মেদ বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনা কবলিত কলোনিতে পরিদর্শন করে এসেছি। টিন সেটের কলোনির ঘর পুড়ে গেছে। কলোনিতে থাকা অধিকাংশ পরিবারের লোকজন বিভিন্ন শিল্প কারখানায় চাকরি করেন। তাদের এই মহূর্তে খাদ্য সহয়তা ও কম্বলের প্রয়োজন। এ জন্য উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, পুড়ে যাওয়া ঘরের বাসিন্দাদের নগর অর্থ সহায়তার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছে তথ্য পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকের আমবাগান এলাকায় তিনটি শ্রমিক কলোনীতে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দেড় ঘণ্টার চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে তিনটি কলোনির ৫৬টি কক্ষ পুড়ে গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।