জুমবাংলা ডেস্ক : ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড থেকে ১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৮ জনের জড়িত থাকার সত্যতা খুঁজে পায়নি পুলিশ। তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ঢাকা কোতোয়ালি জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আগামী ২৭ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানি হবে।
শাহবাগ থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া অন্যরা হলেন- তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ওবায়দুল্লা খন্দকার, কামরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম শোয়েব বাশুরী ওরফে হাবলু, আজিজুল করিম তারেক ও মনিজুর রহমান ওরফে মানিক।
পুলিশের অব্যাহতির সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে, বাদী ২০০৭ সালের ৩০ জুন দরখাস্ত মারফত মামলার এজাহারে বর্ণিত চাঁদার টাকার পরিমাণ ভুল উল্লেখ করে তা সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ৭ মে তারিখে বাদী নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য একটি হলফনামা সম্পাদন করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি বিশেষ মহলের চাপে বাধ্য হয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মামলাটি দয়ের করেন। এজাহারভুক্তদের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই এবং তিনি মামলা পরিচালনা করতে ইচ্ছুক নন।
এছাড়াও তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাদী তার হলফনামায় বর্ণিত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, তখনকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে পড়ে তিনি ওই মামলা দায়ের করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং এজাহারনামীয় অপরাপর আসামিদেরকে তিনি চিনতেন না। এজাহারে বর্ণিত চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশের অব্যাহতির আবেদনে আরও বলা হয়, মামলার এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারেক রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বাদী খায়রুল বাশারকে চাপ প্রয়োগ করে এই মামলা দায়ের করতে বাধ্য করা হয় মর্মে তদন্তে জানা যায়। তদন্তে এবং সাক্ষ্য প্রমাণে মামলার ঘটনাটি দণ্ডবিধি আইনের ৩৮৫/৩৮৬/৩৮৭ ধারামতে তথ্যগত ভুল প্রমাণিত হয়। সব আসামিকে এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতির জন্য প্রার্থনা করা হলো।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে মামলার বাদীর কোম্পানি আব্দুল মোনেম লিমিটেড যমুনা সেতু সংযোগ সড়ক প্রকল্পের আওতায় ২৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার কাজ পায়। কাজটি দুই ভাগে সম্পন্ন করা হয়। ২০০১ সালে ওই কাজের কার্যাদেশ পাওয়ার জন্য চেষ্টাকালে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়া উদ্দিন আল মামুনসহ অন্যরা তাদের পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় কার্যাদেশ পাওয়া যাবে না এবং বাদীর কোম্পানিকে বাংলাদেশের কোথাও কোনো কাজ করতে দেবে না বলে হত্যার হুমকি দেয়। পরে বাদী জীবন রক্ষার্থে চাঁদার টাকা কয়েক কিস্তিতে পরিশোধ করতে রাজি হন। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত কয়েক দফায় মোট ৫ কোটি টাকা চাঁদা বাবদ গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বাদীর কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে নিয়ে যান। সেতুর দ্বিতীয় দফার কাজের সময় ফের কয়েক দফায় মোট ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও তার সঙ্গীরা জোরপূর্বক আদায় করেন।
পরবর্তীতে বাদীর কোম্পানি মৌলভীবাজার জেলায় ফেঞ্চুগঞ্জে সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ পায়। ওই কাজের কার্যাদেশ পাওয়ার পর ২০০৪ সালের ৫ নভেম্বর আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও তার সহযোগীরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে আসেন এবং ভয় দেখিয়ে কোম্পানির এমডির কাছ থেকে কয়েক দফায় দুই কোটি টাকা নিয়া যান। সবমিলিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও তার সহযোগীরা নগদ টাকা ও ক্যাশ চেকের মাধ্যমে সর্বমোট ১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা আব্দুল মোনেম লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় থেকে বলপূর্বক আদায় করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
চাঁদাবাজির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোম্পানি আব্দুল মোনেম লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক খায়রুল বাশার ২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। মামলায় তারেক রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।