জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়ায় এবারো কোরবানি ঈদে চামড়া নিয়ে সেই পুরানো খেলা চলেছে। পাড়া-মহল্লা থেকে চামড়া কিনে পথে বসেছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দাম না পেয়ে শহরের বাদুরতলা এলাকাসহ আশেপাশের এলাকা ও করতোয়া নদীর ধারে কয়েক শ টন চামড়া ফেলে দেওয়া হয়েছে। শহরে বড় ধরনের বায়ু দূষণের আশঙ্কায় আজ বৃহস্পতিবার পৌরসভার পক্ষ থেকে সড়কের পাশে পঁচে গন্ধ ছড়ানো এসব চামড়া তুলে নিয়ে শহরের ঠেংগামারা এলাকার ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক কম দামে কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। লাখ টাকা দামের গরুর চামড়াও বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়। লাখ লাখ টাকার চামড়া পঁচে নষ্ট হওয়ার ঘটনাও আছে। তবে বহনের খরচও না ওঠায় রাস্তার ধারে চামড়া ফেলে দিয়ে যাওয়ার ঘটনা বগুড়ায় এবারই প্রথম।
সরকার প্রতিবছর চামড়ার দাম বেঁধে দিলেও তা কোনো কাজে আসে না। অদৃশ্য এক সিন্ডিকেটের ফাঁদে হাবুডুবু খায় কাঁচা চামড়ার ঈদের বাজার।
বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, চামড়ার দাম নিয়ে যে আজব খেলা চলে, তার মাঠ তৈরি করেন ট্যানারি মালিক আর আড়তদাররা। স্থানীয় আড়তদাররা বলেন, ট্যানারি মালিকরা চামড়া নিয়ে টাকা পরিশোধ করেন না। দুই-তিন বছরের বকেয়া পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা।
তবে ট্যানারি মালিকরা বলেছেন, আড়তদারদের দাবি ঠিক নয়। দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবাই বকেয়া পরিশোধ করেছেন। তাছাড়া ব্যবসা করতে গেলে দেনা-পাওনা থাকবেই।
এই দ্বৈত অবস্থানের কারণেই ঈদের দিন আড়তদাররা চামড়া কিনতে চান না। ফলে চামড়ার দাম অস্বাভাবিক ভাবে কমে যায়।
আড়তদাররা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে এবারও তারা আশঙ্কায় আছেন। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করায় তারা চামড়া সংগ্রহ করতে পারেনি। স্বাভাবিক কারণেই চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে।
কোরবানি ঈদের এক সপ্তাহ আগে চামড়ার দাম ঠিক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় ঢাকার জন্য লবণযুক্ত গরুর কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে খাসির চামড়া সারা দেশে প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা ও বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এবার এই দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। সে কারণে দাম গতবারের চাইতে একটু ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো।
বৃহস্পতিবার ঈদের পর দিন প্রচণ্ড গন্ধ ছড়াতে শুরু করে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে যাওয়া পঁচা চামড়াগুলো। শহরের বাদুরতলাসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে জনচলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। পরে বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশার উদ্যোগে পৌরসভার ট্রাক বোঝাই করে পঁচা চামড়াগুলো ফেলে দেওয়া হয় ভাগাড়ে। এই চামড়াগুলো তুলতে ব্যবহার করা হয় এসকেবেটর। তবে ফেলে দেওয়া চামড়াগুলোর সবগুলোই ছিলো ছাগল ও ভেড়ার। মৌসুমি ব্যবসায়িরা বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ঘুরে ঘুরে যেসব চামড়া কিনেছিলেন যেগুলো কোন মূল্য দিয়েই কিনতে চাননি আড়তদাররা। যার কারণে যেগুলো ফেলে দেওয়া হয়।
অন্যান্য সময়ের চাইতে এবার বগুড়ায় চামড়ার আমদানি ছিলো কম, দামও কম। গরুর চামড়া ব্যবসায়ীরা কিনছেন সর্বনিম্ন ৩০০ টাকায়, সর্বোচ্চ ৮৫০। খাসির চামড়া সকালের দিকে ছিলো ১০ থেকে ১৫ টাকা।
চামড়া ব্যবসায়ী ফিরোজ আহম্মেদ জানান, গতবারের তুলনায় এবার দাম বেশি রয়েছে। তবু চামড়া চাহিদা মতো কেনা যাবে না। তিনি স্বীকার করেন, এবার মৌসুমী ব্যবসায়িরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী নুর আলম, রমজান মিয়া জানান, গত বছর গরুর চামড়া কিনে ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছিল। এবার ক্ষতি লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ তাদের কেনা চামড়ার মধ্যে ৩০ হাজার টাকার চামড়া ছাগলের ছিলো। এগুলো কোন দামই পাননি তারা।
বগুড়া জেলা সাধারণ চামড়া ব্যবসায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার জানান, বগুড়ায় চামড়া ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ২৫ কোটির বেশি টাকা পাওনা রয়েছে। অথচ ট্যানারি মালিকরা তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করছে না। ট্যানারি মালিকরা টাকা না দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছে। একটি চামড়া কেনার পর তা প্রসেসিং করতে অনেক খরচ হয়। এ কারণে আড়তদারদের চামড়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম ছিলো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।