আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কে এমন এক পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেল, যাদের প্রত্যেকেই হাঁটতেন চার হাতে-পায়ে ভর দিয়ে। আর পরিবারটি এমন চলাফেলার ধরনটিকে বিবর্তনের ‘মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ’ প্রশ্ন বলে অভিহীত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তুরস্কের বিজ্ঞানীদের লেখা এক নিবন্ধ থেকেই চার হাত-পায়ে ভর করা পরিবারটির কথা প্রথম জানতে পারে বিশ্ববাসী এবং সেই সঙ্গে অন্য বিজ্ঞানীরাও।
এই পরিবার নিয়ে গবেষণা করেছেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ইভোল্যুশনারি সাইকোলজিস্ট প্রফেসর নিকোলাস হামফ্রে।
জানার চেষ্টা করেছেন পরিবারটিতে জন্ম নেওয়া নতুন অনেক শিশুও কেন চার হাত-পায়ে হাঁটে।
হামফ্রে দেখতে পেলেন, উলাস নামের এই টার্কিশ পরিবারে জন্ম নেওয়া ১৮টি শিশুর মধ্যে ১২ জনের জন্মগত এক ‘অনন্য ত্রুটি’ আছে।
তিনি বলেন, ‘সায়েন্টিফিক ফ্যান্টাসি যত বড়ই হোক, আমি এটা ভাবতেই পারি না যে মানুষ কোনো না কোনোভাবে আবার পশুর দশায় ফিরে যেতে পারে। ’
সিক্সটি মিনিট অস্ট্রেলিয়াকে ড. হামফ্রে আরো জানালেন, ‘ভাষা ও অন্য সব জিনিস তো আছেই, তবে অন্য সব প্রাণীর কাছ থেকে আমাদের যেটা আলাদা করেছে সেটা হলো— আমরা মাথা উঁচু করে দুই পায়ে হাঁটতে পারি। তবে এই লোকগুলো (উলাস পরিবার) সেই সীমা অতিক্রম করেছে। ’
পরিবারটিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন অধ্যাপক হামফ্রে। তাকে বলা হয়েছিল, এই পরিবারের বিশেষ অবস্থার শিকার মানুষগুলোর ভেতর বিবর্তনের ঘড়িটা উল্টো দিকে ঘুরেছে।
হামফ্রে জানালেন, ‘কথা সত্য যে আরো অনেক বিজ্ঞানীই এই বাক্য মেনে নিয়ে বলেছেন যে এখানে জিনগত কিছু সমস্যা কাজ করেছে এবং যার কারণে শেষের ৩০ লাখ বছরের বিবর্তন বাদ পড়ে গেছে এবং লোকগুলোকে আদিরূপে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। ’
অবশ্য এর আগে যে টার্কিশ বিজ্ঞানী নিবন্ধটি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন, তার মতে, এখানে ‘ডিভোল্যুশন’ ঘটেছে। তবে এর ঘোর বিরোধিতা করে হামফ্রে বিবিসি টু ডকুমেন্টারিকে বলেছিলেন, ‘এ পরিবারটিকে ডিভোল্যুশনের শিকার বলাটা বেশ অপমানজনক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অবিবেচকের মতো কথা। ’
তিনি জানান, ‘আক্রান্ত শিশুগুলোর মস্তিষ্কে নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষায় দারুণ কিছু ধরা পড়েছে। দেখা গেছে তাদের মগজের সেরিবেলাম অংশের মাঝের অংশটা বেশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আর কারো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেরিবেলামের ওই অংশটাই নেই। ’
নিউ ইয়র্কের ফসিল বিজ্ঞানীরাও আবার প্রশ্ন তুলেছেন ওই শিশুদের হাঁটার ধরন নিয়ে। কারণ ওই শিশুরা অন্য সব প্রাইমেটদের (বানর, শিম্পাঞ্জি গোত্রীয় প্রাণী) মতো হাত-পায়ের ব্যবহার করে না। তাদের মাটিতে আঙুল না রেখে তালুর ওপর ভর করে এগোতে দেখা গেছে।
যুক্তরাজ্যের লিভারপুল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা গবেষণায় বুঝতে পেরেছেন যে, ওই পরিবারের আক্রান্ত শিশুদের মাথার খুলির গঠনও সাধারণদের চেয়ে আলাদা। তাদের খুলির সঙ্গে বানরের মিল আছে।
এ প্রসঙ্গে হামফ্রে বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা এ পরিবারটির মাঝে যা দেখতে পাচ্ছি তা সম্ভবত এমন একটা সময়কে ইঙ্গিত করে যখন কিনা শিম্পাঞ্জিরা হাঁটতে না শিখলেও সবেমাত্র গাছ থেকে নেমে দো-পেয়ে হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। ’
আবার তিনি এ-ও বলেছেন, ৯ মাস বয়সের পর (যখন শিশুরা হাঁটতে শেখে) পরিবারটির শিশুদের হাঁটার প্রতি উৎসাহ না যোগানোর ফলেও তাদের দৈহিক গঠনে প্রভাব পড়তে পারে এবং এতেও তারা দুই পায়ে হাঁটতে বাধার মুখে পড়ে।
এরপর উলাস পরিবারের শিশুদের জন্য একজন সাইকোথেরাপিস্ট নিযুক্ত করা হয়। তার তত্ত্বাবধানে ওই পরিবারেরর বড়রাও সহায়ক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দুই পায়ে হাঁটার প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন।
এর মাসখানেক পর হামফ্রে সেই পরিবারে গিয়ে দেখতে পান, উলাস পরিবারের চারজনই দিব্যি দুই পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে ২৮ বছর বয়সী গুলানও ছিল। সন্তানদের হাঁটতে দেখে পরিবারের কর্তাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এটা সুন্দর, বড় ব্যাপার, একটা বিশাল ঘটনা। ’
সূত্র : ইউনিল্যাড।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।