জুমবাংলা ডেস্ক : অবৈধভাবে চলা ক্যাসিনোতে র্যাবের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর এবার সুর নরম করেছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার এমন দ্বিমুখী অবস্থান সামনে আসে। খবর : বিবিসি বাংলার।
গতকাল বুধবার রাজধানীতে একের পর এক অভিযান চালিয়ে চারটি ক্যাসিনো বন্ধ করে দিয়েছে র্যাব। এ সময় অবৈধভাবে একটি ক্যাসিনো পরিচালনা করার অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অ’স্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
এর পরপরই এমন অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি কড়া সমালোচনা করে জানতে চান, ‘এতদিন অবৈধভাবে ক্যাসিনো চললো কিভাবে? পুলিশ বা র্যাব এতদিন কি করেছে?’
এসব প্রশ্নের পাশাপাশি তিনি র্যাবের অভিযানকে রাজনীতিবিরোধী ষড়যন্ত্র বলেও অভিযোগ করেন। তার এই বক্তব্যসহ ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
তবে র্যাবের অভিযানের পরদিন বৃহস্পতিবার বিবিসি’র সাথে সাক্ষাৎকারে যুবলীগ নেতা চৌধুরীর সুর কিছুটা নরম হয়েছে। তিনি র্যাবের অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশাসনিক পদক্ষেপ। ফলে এটিকে তিনি শুভ উদ্যোগ হিসেবে দেখেন।
কিন্তু র্যাবের অভিযানের বিরুদ্ধে তার বক্তব্যের যে ভিডিও যা ভাইরাল হয়েছে, সেই বক্তব্য থেকে তিনি এখন সরে আসছেন কিনা? এমন প্রশ্ন করা হলে তখন তিনি বলেন, এখনও তার সেই প্রশ্ন রয়েছে যে, এতদিন কেন অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়নি।
ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, একই কথাই তো। আমি অন্যায় করেছি, তাতে এতদিন পর ব্যবস্থা কেন? সেটা যদি অঙ্কুরেই এই ব্যবস্থাগুলো নেয়া হতো, নিশ্চয়ই আজকে আপনি এসব প্রশ্ন করতেন না।
যুবলীগ নেতা এখন নিজের ব্যর্থতার কথাও বলছেন। তার বক্তব্য হচ্ছে, অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা বা জুয়ার সাথে যুবলীগের অনেক নেতা জড়িত বলে যে সব অভিযোগ এসেছে, এসব বিষয় তার জানা ছিল না।
এখন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসার পর তিনি বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছেন বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, ব্যর্থতা প্রথমে আমার আসবে। আমি অন্যের সমালোচনা কেন করবো? এটি আমার ব্যর্থতা। যেহেতু আমি যুবলীগের চেয়ারম্যান। ফলে বিষয়গুলো কেন আমার অজানা ছিল? আমার নিশ্চয়ই সম্পৃক্ততা ছিল, তা নাহলে এই কাজগুলো হলো ক্যামনে? এখন নিজেকে নিয়ে তিনি এমন প্রশ্ন করেন।
ব্যর্থতা বা দায় যদি নিজের ঘাড়ে নেন, তাহলে যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিবেন কিনা-এমন প্রশ্নে তিনি তার পদে বহাল থাকার কথাই তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ব্যর্থতা মানেই কি পদত্যাগ করা? সমস্যা থাকবেই। এখন ব্যর্থতাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করার সুযোগ এসেছে। আমি এসবের পিছনে আরও কারা জড়িত, তার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। এগুলো চিহ্নিত করে আমি কিভাবে সমস্যা সমাধান করবো, সেই উপায় এখন আমি দেখবো।
অবৈধ ক্যাসিনো চালানো এবং চাঁদাবাজিসহ অনেক অভিযোগের ভারে যুবলীগ যে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে বিব্রত করে কিনা- এই প্রশ্ন অবশ্য তিনি মেনে নিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। তবে আমার বা যুবলীগের সৃজনশীল যে কাজগুলো আছে, সেগুলোকেতো আপনারা স্বীকৃতি দেন না।
এদিকে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন-কাশেম বিবিসিকে বলেন, কোন অনিয়ম বা অপরাধের ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পরই র্যাব অভিযান চালায়।
তিনি উল্লেখ করেছেন, অবৈধ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ক্ষেত্রেও র্যাব অনেকদিন ধরে তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং অভিযোগের পক্ষে নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে ৪টি ক্যাসিনোতে এই অভিযান চালানো হয়েছে।
র্যাবের কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ ক্যাসিনো নিয়ে আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং নিশ্চিত তথ্যপ্রমাণ নিয়ে অভিযান চালানো হবে।
সম্প্রতি এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কয়েকজন নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সে দিনই চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের দু’জন শীর্ষ নেতাকে সরিয়ে দেয়া হয়। এমন প্রেক্ষাপটে র্যাব ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। যা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে র্যাব
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।