আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুদ্ধ একজন মানুষ, একটি পরিবারের জন্য কতটা দুর্দশার কারণ হয়ে উঠতে পারে ছবিটি ছিল তারই প্রমাণ। একই সাথে বাবা-ছেলের চিরন্তন সম্পর্কে কোনো কিছুই যে বাধা হয়ে উঠতে পারে না, তারই একটি দলিল হয়ে উঠেছিল ছবিটি।
হার্ডশিপ অফ লাইফ শিরোনামে তুর্কি ফটোগ্রাফার মুহাম্মদ আসলানের তোলা মর্মান্তিক অথচ কোমল ছবিটি পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। তার চেয়ে বড় কথা ছিল, ওই ছবির প্রেক্ষিতে এই বাবা-ছেলের জন্য তহবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যা দিয়ে আশা করা যাচ্ছে, তাদের উভয়ের জীবনে পরিবর্তন আসবে। হয়তো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। হয়তো ছোট্ট মুস্তাফা এবার হাত দিয়েই স্পর্শ করতে পারবে বাবাকে।
মুহাম্মদ আসলানের তোলা ওই ছবিতে দেখা যায়, যুদ্ধে বোমা হামলায় পা কেটে বাদ দিতে বাধ্য হওয়া মুনজির আল নেজেল তার ছেলে মুস্তাফাকে শুন্যে ছুড়ে দিয়ে খেলছিলেন। বয়স ছয় বছর হলেও মুস্তাফা ছিল ওজনের দিক দিয়ে খুবই হালকা। তার যে হাত-পা কিছুই নেই। নার্ভ গ্যাসে আক্রান্ত হওয়ায় গর্ভবতী থাকাকালীন কিছু ওষুধ নিতে হয়েছিল মুস্তাফার মা’কে। তারই ফলস্বরূপ কোনো হাত-পা ছাড়াই পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল মুস্তাফার।
গত বছর ইতালির সিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ডসে (সিআইপিএ) ছবিটি সেরার খেতাব জেতে। পরবর্তীতে তহবিল সংগ্রহ করা শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ইউরো বা এক লাখ ১৪ হাজার ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে। আয়োজকরা আশা করছেন, এ তহবিলের মাধ্যমে বাবা-ছেলের জন্য কৃত্রিম অঙ্গের ব্যবস্থা হতে পারে।
এদিকে গত শুক্রবার পরিবার নিয়ে মুস্তাফা রোমের ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় মুস্তাফার সাথে তার বাবা-মা এবং এক ও চার বছর বয়সী দুই বোন ছিলেন। আয়োজকরা মুস্তাফার বাবা মুনজিরকে নিশ্চিত করেন, তার পরিবরাকে মধ্য ইতালির টাস্কানি অঞ্চলের একটি শহর সিয়েনায় পুনর্বাসিত করা হবে।
এর আগে সিরিয়া ছাড়ার আগে এক ভিডিও বার্তায় মুনজির বলেন, ‘আমরা আসছি।’ এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এবার তিনি তার সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারবেন। তবে তার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা একদিন তার সন্তানকে কৃত্রিম পায়ে দাঁড়ানো দেখতে পারবেন।
মুনজিরের ভাষায়, আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একদিন মুস্তাফা আমাকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করবে, সেটা কৃত্রিম অঙ্গ দিয়ে হলেও।
জানা গেছে, উত্তর ইতালির ভিগোরসো ডি বুদ্রিওতে সেন্ট্রো প্রোটেসি ইনাইলে বিশেষজ্ঞরা কৃত্রিম অঙ্গ ডিজাইন ও তৈরি করবেন, যাতে মুস্তাফাকে গতিশীলতা অর্জনে সহায়তা করা যায়।
মুস্তাফাকে স্বাবলম্বী হতে হলে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। তবে তার বাবা মুনজির কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার স্বাভাবিক হতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকেরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।