একটা সময় ছিল, যখন মা-ছেলে সম্পর্ক ছিল শুধু স্নেহ আর নির্ভরতার প্রতীক। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ছেলের বিয়ের পর মায়ের মনে একটা অদ্ভুত খালি জায়গা তৈরি হয়। যেন সন্তানটা এখন আর আগের মতো নেই। অনেকেই ভাবেন, এটা কি শুধুই আবেগ, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা?
ছেলের বিয়ে ও মায়ের মন: সম্পর্কের রূপান্তরের মনোবিজ্ঞান
ছেলের বিয়ে হওয়া মানে শুধুই নতুন একজন সদস্য আসা নয়, বরং মায়ের জন্য এক নতুন বাস্তবতার সূচনা। এই পরিবর্তন একজন মায়ের জীবনে বেশ গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। এই মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনকে বোঝার জন্য আমাদের প্রথমেই বুঝতে হবে—মা তার সন্তানের সঙ্গে গড়ে তোলেন একধরনের ’emotionally exclusive bond’। ছেলের প্রতিদিনের জীবন, অভ্যাস, খাওয়া-দাওয়া, অসুস্থতা—সবকিছুর প্রতিই মায়ের থাকে গভীর মনোযোগ।
Table of Contents
কিন্তু বিয়ের পর ছেলে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং তার মানসিক ও দৈনন্দিন অগ্রাধিকার বদলে যায়। এখানে মা একটি ‘loss of attention’ অনুভব করেন। এটা যেন একরকম বিচ্ছিন্নতার শুরু, যেটা কেবল সামাজিক নয়, মানসিকভাবেও গভীরভাবে অনুভূত হয়।
বিশেষ করে যেসব মা পূর্ণ সময় সন্তান প্রতিপালনে ব্যয় করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রভাবটা আরও গভীর। কারণ সন্তানই ছিল তাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। আর সেই কেন্দ্রবিন্দু সরে গেলে—খালি জায়গাটা চেপে ধরে বিষণ্ণতা, অনিরাপত্তা ও নিঃসঙ্গতা।
মনোবিজ্ঞান কী বলছে: ছেলের বিয়ের পর মায়ের অভিজ্ঞতা ও মানসিক অবস্থা
মনোবিজ্ঞানীরা এই অবস্থাকে ’empty nest syndrome’-এর একটি উপধারা বলে মনে করেন। যদিও সাধারণত এই সিনড্রোম সন্তানের বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ঘটে, তবে বিয়ের পরও মা একই ধরনের আবেগীয় শূন্যতা অনুভব করতে পারেন।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মা সন্তানের বিয়ের পর হঠাৎ নিঃসঙ্গতা বা বিষণ্ণতা অনুভব করেন, তাদের মধ্যে আত্মমর্যাদা হ্রাস, উদ্বেগ বৃদ্ধি ও ‘self-worth’ কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষ করে যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবারে রূপান্তরের ফলে মা নিজেকে আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করতে পারেন না।
মনোবিজ্ঞান মতে, এই অবস্থার একটি বড় কারণ হলো, অধিকাংশ মা সন্তানের পরিচর্যাকেই নিজেদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। আর সেই লক্ষ্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলে তারা যেন নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেন।
সমাধান: মায়েদের কীভাবে মানিয়ে নিতে হবে এই পরিবর্তনের সঙ্গে?
নিজের পরিচয়ের পুনরুদ্ধার
সন্তান বড় হয়ে গেলে মায়েদের উচিত নিজেদের পরিচয় ও আগ্রহ খুঁজে পাওয়া। হয়তো তিনি ভালো গান করেন, আঁকেন, রান্না করেন—এসব কাজকে আবার জীবনের অংশ করে তোলাই হতে পারে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার পথ।
সামাজিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি
মায়েদের উচিত বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো। এতে করে মানসিক শূন্যতা কমে আসে ও সামাজিক বন্ধন মজবুত হয়।
পেশাগত বা সৃজনশীল কাজে যুক্ত হওয়া
যেসব মা পেশাগত কারণে বাইরে কাজ করেন না, তারা ছোটখাটো ব্যবসা বা সৃজনশীল কাজে যুক্ত হতে পারেন। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও নতুন অর্থবহতা আসে জীবনে।
পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা
বউ ও ছেলের সঙ্গে মায়ের খোলামেলা আলোচনা পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে করে ভুল বোঝাবুঝি কমে এবং একে অন্যের মানসিক অবস্থাকে সম্মান জানানো সম্ভব হয়।
সময়ের সঙ্গে সম্পর্কের রূপ পরিবর্তনই স্বাভাবিক
একজন মা তার সন্তানকে লালন-পালনের যে বিশাল দায়িত্ব পালন করেন, সেটি কখনোই অমূল্য নয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের রূপ বদলায়—এটাই জীবন। বিয়ের পর ছেলের জীবনে নতুন মানুষ আসবে, নতুন সম্পর্ক তৈরি হবে—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই পরিবর্তন মানে এই নয় যে, মায়ের প্রতি ভালোবাসা কমে যাবে।
তাই প্রয়োজন শুধু মানসিক প্রস্তুতি ও ইতিবাচক মানসিকতা। ছেলে নতুন জীবনে পা রাখছে—এটা গর্বের বিষয়। মা হিসেবে সেই যাত্রার অংশ হতে পারাটাই এক নতুন রকম আনন্দ।
ছেলের বিয়ে ও মায়ের মন—এই দুইয়ের সম্পর্ক যতটা আবেগপূর্ণ, ততটাই জটিলও। তবে যদি আমরা বিষয়টিকে হৃদয় দিয়ে দেখি, তাহলে দেখা যাবে—এই পরিবর্তনের মধ্যেও আছে ভালোবাসা, সহমর্মিতা আর এক নতুন সম্পর্কের শুরু।
জেনে রাখুন-
ছেলের বিয়ের পর মা কেন মন খারাপ করেন?
বিয়ের পর ছেলে নতুন সম্পর্কে যুক্ত হয় এবং সময় ও গুরুত্ব ভাগ করে নিতে হয়, যা অনেক মায়ের জন্য এক ধরনের মানসিক শূন্যতা তৈরি করে।
এটা কি শুধুই আবেগ, নাকি মনোবিজ্ঞানেও ব্যাখ্যা রয়েছে?
মনোবিজ্ঞান অনুসারে, এটা ’empty nest syndrome’-এর একটি রূপ, যেখানে মা নিজেকে হঠাৎ অবহেলিত বা গুরুত্বহীন মনে করতে পারেন।
এই মানসিক অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কী?
নিজের পছন্দের কাজে যুক্ত হওয়া, সামাজিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা এ ধরনের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
সন্তান কি তার মায়ের মানসিক পরিবর্তন বুঝতে পারে?
যদি ছেলে ও মা খোলামেলা কথা বলেন, তাহলে ছেলে তার মায়ের মানসিক অবস্থা বুঝে সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
বিয়ের পর ছেলের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক কীভাবে ভালো রাখা যায়?
পারস্পরিক বোঝাপড়া, সম্মান এবং সময় ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।