জুমবাংলা ডেস্ক : আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণকে তাঁবেদার করতে শিক্ষা ব্যবস্থা সাজাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার নতুন শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে জাতিগত অস্তিত্ব ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
রিজভী বলেন, পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। নতুন শিক্ষনীতিতে দেশ বিরোধী কারিকুলাম এনে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিচ্ছে সরকার। সুতরাং একদলীয় সরকার বিজ্ঞানবিরোধী, নীতি—আদর্শহীন, অনৈতিক ও মেধাহীন যে শিক্ষা কারিকুলাম চালু করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, কথায় আছে যে, কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই। বরং সেই জাতির শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করলেই হবে। তাই তো আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়, শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে নতুন প্রজন্মকে তাবেদার বানানো যায়।
তিনি বলেন, সর্বজনীন নয়, বরং কোনো একটি দেশের শিক্ষাক্রম অনুকরণ করে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পরনির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং গোটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়ার অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই শিক্ষা কারিকুলাম চালু করা হচ্ছে। এই শিক্ষা সিলেবাস জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। চলমান কারিকুলামে বাংলাদেশে উৎকর্ষতর শিক্ষা ব্যবস্থার অনুকুল সমাজভূমি কখনোই নির্মাণ হবে না।
তিনি আরও বলেন, সৃজনশীলতার ব্যর্থতার পর এখন বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকুচিত করেছে সরকার। বৈশ্বিক মানদন্ডে নতুন কারিকুলাম জাতির জন্য ক্ষতিকর হবে। শিশু কিশোরদের অতিরিক্ত ডিভাইস নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা করায় অপরাধমুলক কার্যক্রম বেড়ে যাবে। শিশুকিশোরদের অতিরিক্ত অনলাইন নির্ভর কারিকুলাম অভিভাবকরা গ্রহণ করতে পারছে না।
সরকার এখন অভিনন্দন ভিক্ষা করছে এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, দেশে যে ডামি সরকার গঠন করা হয়েছে তা দেশের জন্য লজ্জার। ডামি সরকারকে যারা সমর্থন করছে তারা নিজেদেরই আত্নপ্রবঞ্চনা করছে।
রিজভী বলেন, বর্তমানে নতুন শিক্ষানীতি ও কারিকুলামের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকোচন করা হয়েছে, ধর্ম শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রয়াসকে চূড়ান্তভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা শিক্ষার নামে যৌন শিক্ষা চালু করে কিশোর মনকে বিকৃত করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ, যোগ্য, নৈতিকতাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে তারা বার বার শিক্ষাখাতকে বিতর্কের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যার ফলে দেশের মানুষ শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে শঙ্কিত।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের মতো বর্তমানেও দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশে আবারও অভিশপ্ত একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছে। একদলীয় সরকার, একদলীয় সংসদ, একদলীয় আইন—কানুন, বিচার আচার, প্রশাসন—সমস্তকিছু একদলীয় বাকশালময়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ জনপ্রশাসনের একটি চিহ্নিত অংশকে ব্যবহার করে দেশে যে দখলদার সরকার এবং ডামি সংসদের জন্ম দেওয়া হয়েছে, এটি দেশের জন্য বড় লজ্জার।’
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ৬৩টি রাজনৈতিক দল ‘ডামি নির্বাচন’ বর্জন করে নাগরিক হিসেবে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে। ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে জনগণ যে ঐক্যবদ্ধ, এর প্রমাণ তারা দিয়েছে। তবে রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা বিচারক, যিনি বা যারা যে কোনো পরিচয়েই শেখ হাসিনার এই ডামি সরকারকে সমর্থন করছেন, সেইসব মানুষগুলো মূলত: নিজেরা নিজেদের সঙ্গেই আত্মপ্রবঞ্চনা করছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূলমন্ত্র ছিল, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। কিন্তু শেখ হাসিনার এই আজব সরকারের গজব থেকে একজন মানুষও কি মুক্ত? গার্মেন্টস কর্মী থেকে নোবেল লরিয়েট, কারোরই কি এখন দেশে মানবিক মর্যাদা রয়েছে? ফলে, রাষ্ট্র ও সমাজে মানুষের অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে ভয়ঙ্কর বাণিজ্য করছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। জামিন হলেও টাকা না দিলে বের হতে পারছে না নেতাকর্মীরা। বিরোধী দলকে স্তব্ধ করতে চাচ্ছে প্রভুদের বলে বলিয়ান হয়ে।
তিনি বলেন, গত চার দিনে সারা দেশে গ্রেপ্তার ৭ জন, মামলা দুটি, আসামি দেড়শোর বেশি। জন্মান্ধদেরও ককটেল বিস্ফোরণের গায়েবি মামলায় আসামি করা হচ্ছে। করিৎকর্মা পুলিশ সাগর রুনির প্রতিবেদন দিতে পারে না অথচ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাজা দিতে আদালত পরিচালনা করে।
ড. হাছান মাহমুদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, উদ্ভট অবান্তর কথায় পারঙ্গম হাছান মাহমুদ এজন্যই তাকে তাকে প্রমোশন হিসেবে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুইয়া, কেন্দ্রীয় যুব বিষয়ক সহসম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আরিফা সুলতানা রুমা, নাদিয়া পাঠান পাপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।