বছরের পর বছর আসে। শিশু যৌবনের দিকে এবং যুবক বার্ধক্যের দিকে আরো এক বছর এগিয়ে যায়। শিশু, যুবক ও বৃদ্ধ সবাই মৃত্যু ও কবরের দিকে আরো এগিয়ে যায়। জীবিত ও মৃত সবাই কিয়ামত ও বিচার দিবসের আরো নিকটবর্তী হয়। জীবনে যে অবকাশ আল্লাহ দিয়েছিলেন, তা থেকে সময় দ্রুত বিয়োগ হয়। পুণ্যার্জনের সুযোগ হাতছাড়া হয়। পাপে আচ্ছন্ন আমলনামা ভারী হয়। কত দিন এভাবে চলবে যে মানুষ বছর কাটিয়ে দেওয়ার আনন্দে উৎসব করবে। নতুন বছরে পদার্পণের জন্য অভিনন্দন জানাবে। মানুষের কবে হুঁশ ফিরবে যে মানুষ অমূল্য সম্পদ সময় অপচয় ও নষ্ট করার কারণে আফসোস করবে। সে বুঝতে পারবে এই সম্পদ জীবনে দ্বিতীয়বার ফিরে পাওয়া যাবে না, নিজের অপূর্ণতা ও অবহেলার জন্য অশ্রু বিসর্জন দেবে।
সময় চলে গেল, সুযোগ হারালাম—এমন যেসব কথা আমরা রাত-দিন বলি, কখনো কি তার অর্থ চিন্তা করেছি? ভেবে দেখেছি সময় চলে যাওয়ার অর্থ কী? ‘সময়’ চলে কোথায় যায়? গোপনে তো যায় না সময়! সব গমনকারী কোথাও না কোথাও যায়। তাহলে জীবনের সময়গুলো কোথায় যায়? একজন মুসলিমের জন্য এই প্রশ্নের উত্তর কঠিন নয়। কেননা তাকে প্রথমেই বলা হয়েছে সব কিছুই আল্লাহর কাছে ফিরে যায়। সময়ও আল্লাহর কাছে ফিরে যায়। বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন, ঘণ্টা ও সেকেন্ড সব আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। সময়ের প্রতিটি অংশ তাঁর দিকেই ফিরে যায় এবং তাঁর অদৃশ্যের ভাণ্ডারে যুক্ত হয়। যেন প্রকৃতির সেই খাজানা ও রাজকীয় ভাণ্ডার—যাতে সব কিছুই এসে জমা হয়, সেখানেই সময় আমানত হিসেবে রক্ষিত থাকে। ইসলামী পরিভাষায় যাকে কিয়ামত ও পুনরুত্থান দিবস বলা হয়, তা মূলত সময়ের ফিরে আসা বা অতীতের পুনর্গমন। জীবন থেকে ক্রমহ্রাসমান প্রতিটি মুহূর্ত আমানত হিসেবে অদৃশ্যের ভাণ্ডারে যুক্ত হচ্ছে এবং পুনরায় উপস্থিত করা হবে। পৃথিবীর সব অতীত সেদিন আরেকবার বর্তমান হিসেবে উপস্থিত হবে। আয়নায় মানুষ যেমন নিজের চেহারা দেখে, তেমনি অতীতের সময়গুলোকে দেখতে পাবে সে।
আমরা যা করি তা কোন কোন সময়কে পরিব্যাপ্ত করে থাকে। সুতরাং সময় ফিরে আসার অর্থ আমাদের সব কর্মকাণ্ড, আমাদের সব ভালো ও মন্দ, আমাদের সব কথা ও কাজ, আমাদের সব তৎপরতা ও নীরবতা—আমাদের সামনে নতুন রূপে উপস্থিত করা হবে। পুনরুত্থান দিবসের এটাই মর্মকথা। আমরা কি সেই সময়ের জন্য প্রস্তুত? আজ যে চালাকির মাধ্যমে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা হচ্ছে, যে চাতুর্য ও বুদ্ধিমত্তার জন্য আত্মতৃপ্ত, উত্ফুল্ল ও আমোদপ্রেমী বন্ধুদের আড্ডায় বসে যা বলি, রাতের আঁধারে যে অন্ধকারতম কাজের সুযোগ পাচ্ছি, দিনের আলোয় সম্পদ ও ক্ষমতার যে তামাশা দেখি, একলা ঘরে স্বেচ্ছাচারিতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করি, মানুষের সামনে যে প্রদর্শনের যে মহড়া দিই—এর সব কিছুই প্রতি মুহূর্তে নথিভুক্ত হচ্ছে। সময়ের ক্যামেরায় তার ছবি তুলে রাখা হচ্ছে। চিন্তুা করে দেখেছি কখনো তখন অবস্থা কী হবে?
এখনই নিজেকে সামলে নিন। অনেক ঘুমিয়েছেন, এখন নির্ঘুম রাত কাটান। বহু হেসেছেন, এবার একটু কাঁদুন। সুযোগের অনেক অপচয় হয়েছে, এবার সংরক্ষণ করুন। বিগত দিনগুলো যদি অবহেলা ও অজ্ঞতায় কেটে যায়, তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিন এবং মনে মনে অঙ্গীকার করুন জীবন থাকতে ‘অর্থহীন’ জীবন কাটাব না। আর প্রার্থনা করুন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছি। আপনি যদি ক্ষমা না করেন এবং অনুগ্রহ না করেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৩)
তামিরে হায়াত থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।