কাজী সুলতানুল আরেফিন : হাদিসে রাসুল (সা.) জুয়া পরিহার করার প্রতি এত গুরুত্বারোপ করেছেন যে, শুধু জুয়াকেই হারাম করেননি; বরং জুয়ার ইচ্ছা প্রকাশকেও গোনাহ সাব্যস্ত করেছেন। যে ব্যক্তি অপরকে জুয়ার প্রতি আহ্বান করবে, তাকে তার এ গোনাহর প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে কিছু সদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন রাসুল (সা.) এরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি অপরকে জুয়া খেলার প্রতি আহ্বান করবে, তার জন্য উচিত কিছু সদকা করে দেওয়া।’ (বোখারি)। এ হাদিস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়, বাজি বা জুয়া ধরার কথা চিন্তা করাও গোনাহের মধ্যে পড়ে
দেশে অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানো হয়েছে। এ ক্যাসিনো হচ্ছে জুয়ার আড্ডাখানা। মানুষ আজ অবাক। এভাবে এতকাল কীভাবে এসব ক্যাসিনো সবার নাকের ডগায় চলে আসছিল? আলোচনা- সমালোচনায় ভাসছে দেশ। অথচ আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা দিয়েছেনÑ ‘হে মোমিনরা! নিশ্চিত মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্যনির্ধারক তীর নিক্ষেপ এসবগুলোই নিকৃষ্ট শয়তানি কাজ। অতএব তোমরা তা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণ পেতে পার।’ (সূরা মায়িদা : ৯০)।
এসব জুয়া বা বাজিতে এক পক্ষ কোনো দলের জয় কিংবা পরাজয় নিয়ে অন্য কারও সঙ্গে বাজি ধরে। এ বাজির ফলাফল শেষে কেউ আর্থিক লাভবান হয়, আবার কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। উভয়পক্ষের জন্যই এ বাজি বা জুয়া নিষেধ করা হয়েছে। নবীজির আমলে দুই ব্যক্তি ঘোড়াদৌড়ের প্রতিযোগিতা লাগাত এবং পরস্পরে এ চুক্তিতে আবদ্ধ হতো, যে পরাজিত হবে সে বিজয়ী ব্যক্তিকে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে। রাসুল (সা.) একেও জুয়ার অন্তর্ভুক্ত করে হারাম ঘোষণা করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ)।
হাদিসে রাসুল (সা.) জুয়া পরিহার করার প্রতি এত গুরুত্বারোপ করেছেন যে, শুধু জুয়াকেই হারাম করেননি; বরং জুয়ার ইচ্ছা প্রকাশকেও গোনাহ সাব্যস্ত করেছেন। যে ব্যক্তি অপরকে জুয়ার প্রতি আহ্বান করবে, তাকে তার এ গোনাহর প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে কিছু সদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন রাসুল (সা.) এরশাদ করেনÑ ‘যে ব্যক্তি অপরকে জুয়া খেলার প্রতি আহ্বান করবে, তার জন্য উচিত কিছু সদকা করে দেওয়া।’ (বোখারি)। এ হাদিস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়, বাজি বা জুয়া ধরার কথা চিন্তা করাও গোনাহের মধ্যে পড়ে।
খেলা নিয়ে অনেকেই বাজি কিংবা জুয়ায় মেতে ওঠে! বিভিন্ন খেলাধুলার জয়-পরাজয়কে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে অনেকেই বাজি ধরে। এ বাজির মাধ্যমে কারও কারও মনে আর্থিকভাবে কিছুটা লাভ করার লোভ জাগ্রত হয়। কিন্তু এ বাজি একধরনের জুয়া। আর ইসলামে বাজি কিংবা জুয়া সবই হারাম এবং নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ স্পষ্ট এরশাদ করেছেন।
আমাদের দেশের সাধারণ দর্শকরাও তাদের পছন্দের দলের পক্ষে বাজি লাগায়। এসব বাজি পারিবারিক ও সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করে। বাজিতে হেরে যাওয়া পক্ষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে আপনজনদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ শুরু করে। বাজিতে হেরে যাওয়া পক্ষ অভাবগ্রস্ত হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক সময় ঝগড়া ও ফ্যাসাদ ও সংঘটিত হয় এ বাজি ধরা নিয়ে। আর এসব ক্ষতির কারণে অনেকের সম্পর্কেও ভেঙে যায়। আর বাজিতে জিতে যাওয়া মানুষও লাভবান হয় না। কারণ এটি সম্পূর্ণরূপে হারাম ও মহাপাপ।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেনÑ ‘তারা আপনাকে (নবী) মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, ‘উভয়ের মধ্যেই রয়েছে মহাপাপ।’ (সূরা বাকারা : ২১৯)।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূরা বাকারার ২১৯নং আয়াতে বর্ণিত মাইসিরের ব্যাখ্যায় বলেনÑ মাইসির কিমারকে বলা হয়। জাহেলি যুগে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সঙ্গে পরস্পরে স্বীয় অর্থসম্পদ এবং পরিবার-পরিজনকে বাজির উপকরণ হিসেবে পেশ করত। দুই ব্যক্তির যে অপরকে জুয়ার দ্বারা পরাজিত করত, সে অপরের ধনসম্পদ ও পরিবার-পরিজনকে নিয়ে যেত।’ (তফসির ইবনে জারীর তারাবী : ২/৩৫৮)।
আমরা মুসলমান জাতি আজ নানা দিক থেকেই পথভ্রষ্ট হতে চলেছি। দেশে জুয়া খেলার কেন্দ্র আছে ভাবতেই অবাক লাগে। বাজির নামে এসব হারাম কাজ আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে আসুন এসব হারাম কাজ থেকে সবাই বিরত থাকি। নিজের পছন্দনীয় দলের পক্ষে-বিপক্ষে বাজি ধরা পরিহার করি। জুয়া থেকে বেঁচে থাকি। আল্লাহ ও নবীর বিধিনিষেধ মেনে চলি। সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।