জুমবাংলা ডেস্ক : টেলিকম খাতে বিদ্যমান কর ব্যবস্থার সংস্কার চায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটররা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ধারিত কর হারের সাথে তুলনা করে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে বাংলাদেশের কর হার প্রবৃদ্ধির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
টেলিকম খাত ও সেবায় কর্পোরেট কর, দ্বৈত কর, স্পেকট্রামের ওপর মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) মতো বিভিন্ন করের বোঝা লাঘব করা হলে, সঞ্চিত অর্থ অবদান রাখবে জাতীয় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি তথা জিডিপিতে।
এমন দাবিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে দেনদরবারে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর সহায়না চান মোবাইল অপারেটর এবং অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটব।
টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশের (টিআরএনবি) উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে কর সংস্কারের দাবি উত্থাপিত হয়।
রবিবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘টেলিকম ট্যাক্সেশন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক ঐ বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বিশেষ এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। অ্যামটব মহাসচিব লে.ক. (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বৈঠকে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
উপস্থাপনায় অ্যামটবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে জিডিপিতে টেলিকম খাতের অবদান ১ শতাংশ। কিন্তু সরকারের রাজস্ব আয়ের ৫ শতাংশ আসে এখান থেকে। ১ শতাংশ জিডিপি অবদানের বিপরীতে উজবেকিস্তান, পাকিস্তান, কাজাখাস্তান, মালয়েশিয়া, কিরজিখিস্তান এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশে রাজস্ব খাতে অবদান বাংলাদেশের (৫%) তুলনায় কম। মার্চেন্ট, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় মোবাইল খাতের ওপর কর্পোরেট বেশি। তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানিকে ৪০ শতাংশ এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কর্পোরেট কর দিতে হয়, যা তামাকজাত প্রতিষ্ঠানের সমান। অ্যামটব এবং টেলিকম বিশেষজ্ঞরা সেমিনারে বলেন, প্রতি মুহূর্তের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা হয়েও এই খাতের কর্পোরেট কর তামাকজাত প্রতিষ্ঠানের সমান বা কাছাকাছি। এমন প্রেক্ষাপটে এই খাতের কর ব্যবস্থার দাবি অপারেটর প্রতিষ্ঠান এবং অ্যামটবের, যার প্রতিফলন আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেখার প্রত্যাশা তাদের।
অপারেটরগুলোর অনেক দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে সেগুলোর বাস্তবায়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। কর ব্যবস্থার সংস্কার এবং এনবিআরকে স্মার্ট প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে উল্লেখ করে সভায় পলক বলেন, টেলিকম খাতে দেড় লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ এসেছে। একই পরিমাণ অর্থ কর হিসেবে পেয়েছি। মৌলিক চাহিদাগুলো প্রধানমন্ত্রী যেখানে জনগণের দ্বরগোরায় পৌঁছে দিচ্ছেন, সেখানে অবদান রাখছে টেলিকম খাত। নেটওয়ার্ক অপারেটরগুলো এখন আর শুধু মোবাইল টেলিকম প্রতিষ্ঠান হিসেবে নেই, বরং ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডার হয়েছে। মানুষ এখন বিশেষায়িত সেবা চায়। তবে আরও প্রবৃদ্ধির জন্য একটা সুন্দর ভারসাম্য প্রয়োজন। সেই ভারসাম্য হবে নিয়ন্ত্রণ এবং সৃজনশীলতার মাঝে। এজন্য বিটিআরসি কে বলি, শুধু নিয়ন্ত্রক না বরং সৃজনশীল সংস্থা হিসেবে কাজ করতে হবে। তেমনি রাজস্ব বোর্ডকেও সৃজনশীল এবং স্মার্ট হতে হবে। দ্বৈত কর বাতিল করা, করের উচ্চ হারের বিষয়টি এনবিআর কে জানাবো, অর্থমন্ত্রীর সাথেও বৈঠকে জানাবো। কর যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে টেলিকম খাতের প্রতিনিধি হয়ে রাজস্ব বোর্ড এবং অর্থমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করবো।
এসময় বিটিআরসি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর যে লক্ষ্যমাত্রা, আমরাও তার সাথে এগিয়ে যেতে চাই। টেলিকম খাতের কর ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হলে, খাত সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বসতে হবে। বর্তমান কর ব্যবস্থায় ‘রিফর্ম’ দরকার। এখানে অনেক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা আছে। সেগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে টিআরএনবি প্রেসিডেন্ট রাশেদ মেহেদির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ও অ্যামটবের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আজমান, বাংলালিংকের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ টেকনোলজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির সহ অন্যান্যরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।