জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ব্রি ধান১০৫ উদ্ভাবন করেছেন। এ ধানে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) মান ৫৫। তাই লো জিআই মান সম্পন্ন এ রাইচকে ডায়াবেটিক রাইচ বলা যায়।
ডায়াবেটিস রোগীরা এ ধানের চালের ভাত নিরাপদ মনে করে পেটভরে খেতে পারবেন। লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন এ ধানের চালের ভাত খেলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করা খুব কম যাবে। ব্রি’র প্রধান কার্যালয়ে পুষ্টি গবেষণা বিভাগের পরীক্ষায় ব্রি ধান-১০৫ এর পুষ্টিমান নির্ণয় করে এ তথ্য জানিয়েছে । এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বলে জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে।
এছাড়া এ ধান ভবিষ্যতে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে দাবি কৃষি বিজ্ঞানীদের।
আর চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় ৮.৭ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান১০৫ প্রথম আবাদেই সাফল্য মিলেছে।
হেক্টর প্রতি কৃষক ৬.৫ টন থেকে ৭.৫ টন ফলন পেয়েছেন বলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ড.মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের মার্চে চাষের অনুমোদন পায় নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান১০৫। তারপর ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা মাঠে ধানটি চাষ করা হয়। এটি বোরো মৌসুমের ধান হলেও আমন মৌসুমে বীজ হিসেবে চাষাবাদ করা হয়। এতে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। আমাদের গবেষণা মাঠে উৎপাদিত ব্রি ধান-১০৫ এর বীজ দিয়ে বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলায় এ ধানের চাষাবাদ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেই। এ ধান ভবিষ্যতে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে জানান ওই কৃষি বিজ্ঞানী।
ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সাইন্টিফিক অফিসার সৃজন চন্দ্র দাস জানান, নতুন উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে ব্রি-১০৫ বোরো মৌসুমের একটি কম জিআই সম্পন্ন ডায়াবেটিক ধান। প্রচলিত ধানগুলোতে জিআই এর মান ৬৫ থেকে ৭৫। কিন্তু ব্রি-১০৫ ধানে জিআই এর মান ৫৫। এ চালের ভাত খেলে রক্তে শর্করা কম নামবে। এ ধানের বৈশিষ্ট্য হল মাঝারি লম্বা ও চিকন দানা। কম জিআই হওয়ার কারণে এটি ডায়াবেটিক চাল হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে। ধান পাকার পরও গাছ সবুজ থাকে। এ জাতের পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০১ সেন্টিমিটার। গড় ফলন হেক্টরে ৭ দশমিক ৬ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৮ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
তিনি জানান, এ জাতের দানার আকার ও আকৃতি মাঝারি সরু ও রঙ সোনালী। এর জীবনকাল ১৪৮ দিন। এ জাতের ১০০০টি দানার ওজন ১৯ দশমিক ৪ গ্রাম। এতে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭ শতাংশ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। রান্না করা ভাত ঝরঝরে এবং সুস্বাদু। তাই এ ধানের আবাদ করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবড়ির উপ-পরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, ব্রি ধান১০৫ ডায়াবেটিস রাইসের পর্যাপ্ত বীজ পেলে গোপালগঞ্জ জেলায় এ ধানের চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা হবে। এতে ডায়বেটিস রোগীরা উপকৃত হবেন। তারা একটু বেশি ভাত খেতে পারবেন। এ জাতের ধানের গাছ আকারে বড়। তাই খড় গো-খাদ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
কাশিয়ানী উপজেলার জঙ্গল মুকুন্দপুর গ্রামের কৃষাণী রিক্তা পারভীন বলেন, ব্রি ধান১০৫ আমরা প্রথম চাষাবাদ করেছি। এ ধান হেক্টর প্রতি সাড়ে ৭ টন ফলন দিয়েছে। ধানটি লম্বা ও চিকন। ডায়বেটিস রোগী এধানের চালের ভাত খেতে পরেন। তাই আনেকই এধান চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমার জমিতে উৎপাদিত সব ধান বীজ হিসেবে রেখে দিয়েছে। এ ধান অন্তত ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারব।
কোটালীপাড়া উপজেলার দেবগ্রামের কৃষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, নতুন এ জাতের ধান চাষে সেচ ও সার কম লেগেছে। উৎপাদন খরচ সাশ্রয়ী ব্রি ধান১০৫ জাতের ফলন পেয়েছি বাম্পার।এ কারণে এ জাতের ধানচাষ লাভজনক। বাজারে এ ধানের চাহিদা রয়েছে। তাই আগামীতে আমরা ডায়াবেটিক রাইস চাষ সম্প্রসারণ করব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।