জুমবাংলা ডেস্ক : পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার অভিযোগ এনেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (২০ মার্চ) দুপুরে ভূতের গলি সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, যে বিষয়টা সবচেয়ে পীড়াদায়ক তা হলো, গত বছর মৃত্যুর হার খুবই বেড়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, স্বাস্থ্যসেবাকে আরও নিশ্চিত করতে হবে। গত বছর কিছু বিষয় আমরা লক্ষ্য করেছি, রোগীদের প্রাথমিক পর্যায়ে বলা হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করলেও চলবে। পরে দেখা গেছে সেই রোগীর পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হয়েছে। পরে তিনি যখন ভর্তি হয়েছেন, তখন দেখা গেছে তাকে সেভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যায়নি। এতে করে মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে সভায় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশে ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে ১৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে দশমিক ৫৩ জন মারা গেছেন। একই সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৫৯০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১০৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা শতকরা শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ। অর্থাৎ ব্রাজিলের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার বেশি ১০ গুণ, ভারতের তুলনায় বেশি ৬ গুণ। একই বছর ভারতের ৯৪ হাজার ১৯৮ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯১ জনের। মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
পৃথিবীর অনেক দেশের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে মেয়র তাপস বলেন, ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে বিশেষ করে, যেসব দেশে মৌসুমি বৃষ্টি হয় তথা বর্ষাপ্রবণ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এডিস মশা বেশি হয়। সেসব দেশের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি, তাদের তুলনায় আমাদের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের দেশে রোগীরা স্বাস্থ্যসেবাটা সঠিকভাবে পাচ্ছে না।
২০১৯ সালে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজারের মতো হলেও মৃত্যু হয়েছিল ২০০ এর নিচে। গত বছর ঢাকা শহরে রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার। কিন্তু মৃত্যু ১ হাজার ৭০০ এর বেশি।
মেয়র বলেন, পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট, স্বাস্থ্যসেবাকে আমাদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করব। সে বিষয়ে সিটি করপোরেশন পর্যাপ্ত কাজ করছে। আমাদের পরিধি অনেক বৃদ্ধি করেছি। আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সময় বৃদ্ধি করেছি। আমাদের কর্মীরা আসলে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে কি না, কর্মপরিকল্পনা পরিপালন করছে কি না ইত্যাদি বিষয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তদারকি করছি। সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, আমাদের প্রয়াস বা কর্মপরিকল্পনা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে একটি মৃত্যুও না ঘটে।
গত বছর শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়েছে এবং অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, এটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। আক্রান্ত ও মৃত্যু হার কমাতে আমাদের যৌথভাবে আরও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও বেশি কঠোরতা দেখানো হবে বলেও জানান মেয়র তাপস।
এ সময় ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আওলাদ হোসেন, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামানসহ কর্মকর্তা ও কাউন্সিলররাও উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।