জুমবাংলা ডেস্ক : বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন বেপারীর বক্তব্যকে ‘অসংলগ্ন’ বলে মন্তব্য করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। গতকাল বুধবার তদন্ত দলের সদস্যরা মোবাইল ফোনে তার বক্তব্য নেন। তারা বলেছেন, সুমন যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ১৩ ঘণ্টা পর তার বেঁচে আসার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে না। তিনি অসংলগ্ন তথ্য দিয়েছেন। জাতীয় দৈনিক সমকালে প্রতিবেদক আতাউর রহমান-এর একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তদন্ত কমিটি গতকাল আরও সাতজনের বক্তব্য নিয়েছে। তাদের মধ্যে ডুবে যাওয়া লঞ্চটির যাত্রী হিমেল ও সেটির মালিক জয়নাল আবেদীনও রয়েছেন। অন্যরা হলেন উদ্ধার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার কর্মী এবং নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা। সদরঘাটে বিআইডব্লিউটিএ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে তদন্ত কমিটি এই সাক্ষ্য নিচ্ছে।
লঞ্চডুবিতে হতাহত সবার বাড়িই মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। বেঁচে যাওয়া লোকজন এবং নিহতদের স্বজনকে সাক্ষ্য দিতে ঢাকায় পাঠানোর জন্য মুন্সীগঞ্জের ডিসির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে তদন্ত কমিটি। এদিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চটির দুই চালক বেঁচে আছেন বলে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা। কারণ উদ্ধার হওয়া লাশের তালিকায় তাদের নাম নেই।
গত সোমবার সকালে মর্নিং বার্ড নামের ছোট আকারের একটি লঞ্চ অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে সদরঘাটের অদূরে ময়ূর-২ নামের বিশাল একটি লঞ্চের ধাক্কায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ডুবে যায়। এরপর মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সোমবার রাতে লঞ্চটি টেনে তোলার সময় সুমন বেপারীকে জীবিত উদ্ধারের কথা বলা হয়। লঞ্চটি তোলা সম্ভব না হলেও উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
ওই লঞ্চডুবির ঘটনায় দায়ের মামলার কোনো আসামিকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল দুপুরে লঞ্চডুবির স্থলে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চটি বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ তীরে উপুড় হয়ে রয়েছে। সেখানে অনেক দর্শনার্থী ভিড় করে ছবি তুলছেন।
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, অন্তত ৩০ মিনিট ধরে সুমন বেপারীর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। তিনি বলেছেন, লঞ্চে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। ডুবে যাওয়ার বিষয়টি তার মনে পড়ছে না। উদ্ধারের পর সবকিছু জানতে পারেন। উদ্ধারের পর সুমন বেপারীকে চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে গতকাল তিনি বাড়ি ফিরেছেন। সেখান থেকেই তদন্ত দলের কাছে বক্তব্য দেন তিনি। সুমন তদন্ত কমিটিকে বলেন, ভেতরে হাঁটুপানি ছিল। পুরো রুমটা অন্ধকার ছিল। তার জ্ঞান ছিল না। ডুবে যাওয়ার সময় তার পেটেও পানি চলে যায়।
তদন্ত কমিটির প্রধান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা সুমন বেপারীর বক্তব্য নিয়েছেন। তবে ১৩ ঘণ্টা ধরে ডুবে যাওয়া লঞ্চের ভেতরে তিনি কীভাবে থাকলেন, তার বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়নি। সংশ্নিষ্ট অনেকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য বলেন, সুমন ইঞ্জিন রুমে আটকা পড়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। একবার বলেছেন, ভেতরে অন্য কাউকে দেখেননি। পরক্ষণেই আবার বলেছেন, ভেতরে লাশ দেখা গেছে। তার বক্তব্য অসংলগ্ন মনে হয়েছে। তার আরও বক্তব্য নেওয়া হবে। তিনি কিছুটা অসুস্থ। সুস্থ হলে প্রয়োজনে সরাসরি কথা বলা হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে সুমন উদ্ধারের পর হাসপাতালে জানিয়েছিলেন, তিনি ইঞ্জিন রুমের ভেতর ছিলেন। কিন্তু গতকাল উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া ডুবুরি দলের দায়িত্বশীল এক কর্মী বলেছেন, তারা লঞ্চটির ভেতর উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে ইঞ্জিন রুমটি তালাবদ্ধ পেয়েছেন। সেই তালা ভেঙে ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় আশপাশে জীবিত কাউকে ডুবুরিদল দেখতে পায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।