একটা সময় ছিল যখন ঢাকায় নির্মিত লোক কাহিনীগুলো কলকাতায় রিমেক হতো এবং তাতে ঢাকার সংশ্লিষ্ট ছবির প্রধান তারকাদের দু’একজন কাজও করতো। এরকমই একটি ছবি ছিল কুচবরণ কন্যা। এই ছবিটি ১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের প্রযোজনায় নির্মাণ করেছিলেন পরিচালক নুরুল হক বাচ্চু। অভিনয় করেন সূচন্দা ও রাজ্জাক। তারও প্রায় দুই যুগ পর এই ছবিটি নির্মিত হয় কলকাতায়। পরিচালনা করেন আজিজুর রহমান। রিমেক কুচবরণ কন্যায় অভিনয় করেন রোজিনা ও তাপস পাল।
চিত্রগ্রাহক ছিলেন ঢাকার সিরাজুল ইসলাম। রোজিনার নিমন্ত্রণে সেই সময় কলকাতায় ছবিটির লোকেশন রিগেন্সি গার্ডেনে গিয়েছিলাম আমি। সেখানেই রোজিনা আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন তাপস পালের সঙ্গে। তাপস পাল আমাকে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন ঢাকা থেকে আগত লোকটি এমন কি আর। তাই আমার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মতো তেমন কোনো আগ্রহ দেখা গেল না তার মধ্যে। তিনি কলকাতার ছবির একজন জনপ্রিয় তারকা। কিন্তু লক্ষ্য করছিলেন, বহিরাগত লোকটিকে রোজিনা, আজিজুর রহমান এবং সিরাজুল ইসলাম খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন।
রোজিনা বিষয়টা বুঝতে পেরে আমাকে নিয়ে তাপসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। অনিচ্ছা সত্তে¡ও তিনি আমাকে স্বাগত জানালেন। তারপর আমাদের মধ্যে অনেক কথা হয়। কথা শুরুর পরই তাপস একটু নড়েচড়ে বসেন। আলোচনা এগুতে থাকলে আমার প্রতি তাপসের মনোযোগও বাড়তে থাকে। কিন্তু আমাদের মধ্যে কী কী কথা হয়েছে আজ এতো বছর পর আর মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে, তিনি ঢাকার চলচ্চিত্র বিষয়ে বেশ স্পর্শকাতর ছিলেন। বলেছেন, ‘আমাদের চাইতে তোমাদের চলচ্চিত্র অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
বাংলা সাহিত্যের নানা উপকরণ নিয়েই তোমরা চলচ্চিত্র চর্চা করছ। সুযোগ হলে তোমাদের ইন্ডাষ্ট্রিতে আমিও কাজ করতে চাই।’ সেদিন বিকালের শিফট শেষ হওয়ার পরই রোজিনার গাড়িতে আমি হোটেলে ফিরে যাই। আজ রোজিনার সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম, তাপস পালের সঙ্গে রোজিনা কুচবরণ কন্যা ছাড়াও রুপবান ছবির রিমেক ও বাংলার বধূ ছবিতে কাজ করেছেন। তিনি তাপস পালের মৃত্যুর খবরে বেশ আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। বলেন, ‘তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ অভিনেতা। তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। আমাদের ছবির গানগুলোর ভিডিও দেখছি বসে বসে, আর স্মৃতিচারণ করছি।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনজু ঘোষ লিখেছেন, ‘মেনে নিতে পারছি না, তুমি আর আমাদের মধ্যে নেই।’
কলকাতা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে মুম্বাইয়ের বেসরকারি একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুরোগে ভুগছিলেন তিনি। ১ ফেব্রুয়ারি বান্দ্রার হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি তার ভেন্টিলেশন খুলে নেওয়া হয়। সোমবার রাতে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। ১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্ম নেন তাপস পাল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।