জুমবাংলা ডেস্ক : উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন কেউ দীর্ঘদিন প্যারাসিটামল সেবন করলে তা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িযে দিতে পারে বলে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।
ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার গবেষকরা বলছেন, রোগীদের টানা প্যারাসিটামল সেবনের পরামর্শ দেওয়ার আগে চিকিৎসকদের উচিত রোগীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সুবিধার বিষয়গুলো বিবেচনা করা।
ওই গবেষণায় পাওয়া ফলাফল নিয়ে মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রতিবেদন করেছে বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, মাথাব্যথা প্রশমন কিংবা জ্বরের সময় প্যারাসিটামল সেবন নিরাপদ। সতর্ক করা হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি প্যারাসিটামল সেবনের বিষয়ে।
অবশ্য অন্য বিশেষজ্ঞরা বিষয়গুলো নিয়ে নিশ্চিত হতে আরও বেশি মানুষের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
ব্যথা, কাটা-ছেঁড়া ও জ্বরের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি উপশমের জন্য বিশ্বজুড়ে প্যারাসিটামল বহুল ব্যবহৃত ওষুধ।
বিবিসি বলছে, ২০১৮ সালে স্কটল্যান্ডের প্রায় ৫ লাখ মানুষকে ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল সেবনের পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। অর্থাৎ, সেখানে প্রতি ১০ জনে একজন ওই বছর প্যারাসিটামল খেয়েছেন। আর যুক্তরাজ্যে প্রতি তিনজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন।
এ গবেষণায় ১১০ স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেন, যাদের দুই-তৃতীয়াংশই উচ্চ রক্তচাপ অথবা হাইপারটেনশনের জন্য ওষুধ সেবন করেন। পরীক্ষা করার জন্য তাদের দুই সপ্তাহ ধরে দৈনিক চারবার এক গ্রাম প্যারাসিটামল সেবন করতে বলা হয়। যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যথায় ভুগছেন, তাদের ওই মাত্রাতেই প্যারাসিটামল দেওয়া হয়।
পরের দুই সপ্তাহ এই স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া হয় ডামি পিল বা প্লাসিবো সেবন করতে বলা হয় (ডামি পিলে কোনো ওষুধ থাকে না, কিন্তু স্বেচ্ছাসেবীরা প্যারাসিটামল মনে করেই সেটা খেয়েছেন)।
ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার ক্লিনিক্যাল ফারমাকোলজিস্ট অধ্যাপক জেমস ডিয়ার বলেন, ‘পরীক্ষার ফল থেকে দেখা যায়, প্যারাসিটামল তাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকির অন্যতম কারণ।’
গবেষকরা চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার রোগীদের ক্ষেত্রে যতটা পারা যায় প্যারাসিটামলের ডোজ কমিয়ে দিতে এবং যে রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের ঝুঁকি আছে, তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে।
গবেষক দলের প্রধান ও এনএইচএস লোদিয়ানের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি কনসালট্যান্ট ড. ইয়াইন ম্যাকইনটাইর বলেন, ‘এটা মাথাব্যথা ও জ্বরের জন্য দেওয়া প্যারাসিটামলের বিষয়ে বলা হচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে ওষুধটির ব্যবহার পুরোপুরি ঠিক আছে।’
সেন্ট জর্জেস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিকস বিভাগের লেকচারার ড. দিপেন্দর গিল বলেন, সার্কুলেশন সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে স্কটিশদের মধ্যে প্যারাসিটামল ব্যবহারে রক্তচাপের ‘একটি ছোট কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি’ ধরা পড়েছে। কিন্তু ‘অনেক কিছুই’ অজানা থেকে গেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রথমত, এটা স্পষ্ট নয় যে রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে প্যারাসিটামল সেবনের সঙ্গে রয়ে যাবে কিনা। দ্বিতীয়ত, এটাও সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি যে প্যারাসিটামল সেবনে যে রক্তচাপ সৃষ্টি হচ্ছে সেটাই হৃদ রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে কি না।’
এ গবেষণার অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান দ্য ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন বলেছে, চিকিৎসক ও রোগীদের নিয়মিত পর্যালোচনা করা উচিত যে, কোনো ওষুধ, এমনকি প্যারাসিটামলের মতো তুলনামূলক কম ক্ষতিকর ওষুধও সেবন করা আদৌ দরকার কি না।
স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের ড. রিচার্ড ফ্রান্সিস বলেন, বিস্তৃত পরিসরে প্যারাসিটামল ব্যবহার করার ঝুঁকি ও সুবিধা নিশ্চিত করতে স্বাভাবিক ও সুস্থ রক্তচাপের মানুষের ওপর আরও বেশি সময় ধরে গবেষণা চালানো দরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।