রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। পলেস্তারাখসা, শ্যাওলাপড়া মসজিদটি এখন দূর থেকেই নয়ন কাড়ছে লোকজনের।
মসজিদটির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম জুমবাংলাকে বলেন, ‘এটি দেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ। বয়স ৫০০ বছরের বেশি। দীর্ঘদিন সংস্কার না করার কারণে এটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। দেয়ালে শ্যাওলা ধরে, পলেস্তারা খসে পড়ে। এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ও এটি কারও নজরে পড়ত না। অথচ এটি পলাশবাড়ী তো বটে, দেশেরই ঐতিহ্য। এখন সংস্কারের ফলে এটি সহজেই লোকজনের চোখে পড়ছে।’
মসজিদটি পলাশবাড়ী সদরের নুনিয়াগাড়ী গ্রামে অবস্থিত।কয়েক মাস আগে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এক কামরার একটি ছোট্ট ইমারত। দৈর্ঘ্য, প্রস্থে ৬ ফুট। ওপরে উঁচু গম্বুজ। চারপাশে চারটি ছোট মিনার। পূর্ব পাশে একটি দরজা। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে দুটি খিলান। দেয়ালে আরবি হরফ উৎকীর্ণ। মসজিদটির গম্বুজ ও মিনারের অনেক স্থানে পলেস্তারা খসে ও ভেঙে পড়েছে। দেয়াল জরাজীর্ণ ও শ্যাওলাপড়া। মসজিদটির ভেতরে ইমামসহ চার-পাঁচজনের নামাজ আদায়ের জায়গা রয়েছে।
সে সময় মসজিদটি নিয়ে জুমবাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর এটি সংস্কার করা হলো।
মসজিদটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সায়াদ মিয়া বলেন, গত মে মাসে সংস্কার শেষ হয়েছে। মুস্ললিদের আর্থিক সহায়তায় কাজ করা হয়েছে। কেউ মসজিদটির রঙ করে দিয়েছেন। কেউ করে দিয়েছেন প্লাস্টারের কাজ। এক ব্যক্তি সুন্দর একটি দরজা কিনে দিয়েছেন।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, মসজিদটির গম্বুজে সবুজ রঙ করা হয়েছে। চারপাশের মিনারও একই রঙের। শ্যাওলাপড়া মসজিদটি যেন উধাও। তার স্থলে ঝলমল করছে নতুন একটি স্থাপনা। দূর থেকেই নজর কাড়ছে তা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সর্বাঙ্গভাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ সবুজ বলেন, সংস্কার করায় মসজিদটি দেখতে সুন্দর হয়েছে। তবে তাঁর মতে, মসজিদটির পুরাতন ফটক বদলে নতুন লোহার গেট লাগানোয় এটির ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরাতন সবকিছু ঠিক রেখেই এটি সংরক্ষণ করলে ভালো হতো। এখন এটি দেখে অনেকেই এর প্রাচীনতা সম্পর্কে ধারণা পাবেন না।
মসজিদ কমিটির লোকজন জানান, এই মসজিদটি ‘কাদির বক্স মণ্ডল মসজিদ’ নামে ২০১৩ সালের ২ জুন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হয়েছে। যদিও এটার আদি নাম কেউ জানেন না। এটি কবে নির্মিত হয়েছে, সেটাও অজানা।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের লোকজন জানান, এই মসজিদের নির্মাণশৈলী পাশের গোবিন্দগঞ্জের লাল মসজিদ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সৌর মসজিদের মতো। এ থেকে ধারণা করা হয়, এসব মসজিদ প্রায় পৌনে পাঁচ শ বছর আগে সুবাদার সুজাউদ্দৌলার শাসনামলে নির্মিত।
স্থানীয় লোকজন জানান, স্থাপনাটির ভেতরে মিহরাব ও মিম্বর দেখে এটিকে মসজিদ বলে চিহ্নিত করা যায়। তা ছাড়া এখানে বংশ পরম্পরায় নামাজ পড়েও আসছেন তাঁরা। পরে লোকজন বেড়ে গেলে এটির সামনে একই নামে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়। পুরোনোটিতে আর নামাজ পড়া হয় না। এটি স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়া হয়েছে।
এ মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সায়াদ ও সাধারণ সম্পাদক নুরুলের বাড়ি নুনিয়াগাড়ী গ্রামেই। দুজনই পঞ্চাশোর্ধ। তাঁরা বলেন, এই মসজিদ কবে নির্মাণ করা হয়েছে, তাঁদের দাদারাও জানতেন না। তবে তাঁরা এই মসজিদের সামনে টিনের ছাপড়ায় নামাজ পড়তেন।
এত ছোট মসজিদ কেন করা হয়েছিল বা এটিই দেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ কি না– এ বিষয়ে কেউ স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি। তবে সায়াদ ও নুরুল জানান, তখন এই অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের লোক কম ছিল। এ কারণে হয়ত এত ছোট মসজিদ করা হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।