জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরের সদর উপজেলার সিংরাতুলি শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিঃসন্তান থাকলেও দুই সন্তানের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ভাতা গ্রহণ করছেন। প্রভাবশালী ওই প্রধান শিক্ষক স্কুলের সভাপতি ও শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে এমন কাজ করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা বলছেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ থাকলেও উপজেলা শিক্ষা বিভাগ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের নাম জালাল উদ্দিন। তিনি উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের দরগারচালা গ্রামের মৃত আব্দুল্লাহর ছেলে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর ওই স্কুলটিতে যোগদান করেন জালাল উদ্দিন। এরপর থেকেই ছাত্রদের নাম ব্যবহার করে শিক্ষা ভাতা নিতেন। যদিও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে শিক্ষা অফিস।
তবে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ওই শিক্ষক মো. সুজন ও মো. সুমন নাম ব্যবহার করে শিক্ষা ভাতা নিচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরেই একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হলে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়ে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসে।
২৪ আগস্ট থেকে মেসেঞ্জারে মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট ভবানীপুর এলাকায় ৩ সন্তানের জননীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে ওই শিক্ষকের অপসারণ দাবি করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন এলাকাবাসী।
এদিকে অন্যের সংসার থেকে ভাগিয়ে আনা শিক্ষকের প্রথম স্ত্রীর আগের সংসারের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দ্বিতীয়বার পরকীয়ায় ধরা পড়ায় প্রথম স্ত্রী বাদী হয়ে যৌতুক আইনে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
ওই শিক্ষকের প্রথম স্ত্রী বলেন, জালাল উদ্দিন আমার টাকায় ঘরবাড়ি করছে। এখন আমাকে না জানিয়ে পরকীয়ায় ধরা পড়ে আরেকজনকে বিয়ে করছে। আমি তার শাস্তি চাই।
স্থানীয় কাজী সোহেল রানা বলেন, মানুষ গড়ার কারিগর একজন প্রধান শিক্ষক যদি এমন অনিয়ম ও অপকর্মে লিপ্ত থাকে তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমরা এর সঠিক বিচার দাবি করছি।
সিংরাতুলি শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মমতাজ বেগম জানান, হেড স্যারকে উনার সন্তানদের কোনোদিনও স্কুলে আনতে দেখিনি। সন্তান আছে এটাও আমাদের বলেননি তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্কুলে গিয়েও প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার সন্তান নেই। আমি ওইসব টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিব। এসব নিউজ করবেন না। আমার ওয়াশ রুমের দেওয়ালে ইট ২ নম্বর দিছে এটা নিউজ করেন। আমি কয় টাকা নিছি, কয়টা বিয়ে করছি, মামলা খাইছি এটা নিয়ে পড়ে আছেন কেন?
রাতের আঁধারে অনৈতিক কাজে ধরা পড়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান ওই প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে স্কুলের সভাপতি হারুন উর রশীদের বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহমেদ জানান, প্রধান শিক্ষকের দুই সন্তানের কাগজপত্র জমা পড়ায় বিধি অনুযায়ী শিক্ষা ভাতা দেওয়া হয়েছে। আমরা যেহেতু ডিএনএ পরীক্ষা করি না। তাই কার বাচ্চা নিয়ে আসলো সেটা যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসে্ন জানান, এসব বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। যদি এগুলো সত্যি হয় তাহলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।