স্পোর্টস ডেস্ক : চমক জাগিয়ে বেলজিয়ামকে হটিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে শেষ ষোলোয় উঠলেও নেদারল্যান্ডসের আক্রমণের তোড়ে ভেসে গেল রোমানিয়া। অন্যদিকে, তৃতীয় হয়ে কোনোমতে শেষ ষোলোয় উঠলেও নকআউট পর্বে এসে নিজেদের মেলে ধরল ডাচরা। এর ফলে বড় জয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে রোনাল্ড কুমানের দল।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) মিউনিখের আলিয়ান্স আরেনায় সপ্তম ম্যাচে রোমানিয়াকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস।
ডাচদের হয়ে গোলের খাতা খোলেন লিভারপুলের স্ট্রাইকার কোডি গাকপো, পরের গোল দুটি করেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বদলি নামা ডনিয়েল মালেন।
এদিন গোলের জন্য মোট ২৩টি শট নিয়ে তার ৬টি লক্ষ্যে রাখতে পারে নেদারল্যান্ডস। অন্যদিকে, রোমানিয়ার ৫টি শটের মাত্র একটি ছিল লক্ষ্যে।
খেলায় ৬৫ শতাংশ সময় বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যায় ডাচরা। খেলার সর্বোপরি চিত্র এমন হলেও শুরুটা মোটেও একপেশে ছিল না।
প্রথম থেকেই ডাচদের সঙ্গে সমানে লড়াই করতে থাকে রোমানিয়া। নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেলার ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম শটটি নেন পিএসজির তরুণ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জাভি সিমোন্স। তবে দুই মিনিট পরই ডাচ রক্ষণের পরীক্ষা নেয় রোমানিয়া।
এরপর ম্যাচের চতুর্দশ মিনিটে পরপর দুবার আক্রমণে ওঠে রোমানিয়া। তবে গোলের খুব কাছাকাছি গিয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি তারা।
এ সময় সাবধানী ফুটবলে মনোযোগী হয় নেদারল্যান্ডস। ছোট ছোট পাসে বলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। এতে দ্রুত সফলও হয় তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০তম মিনিটে ফলাফলও পেয়ে যায় নেদারল্যান্ডস।
সিমোন্সের পাস ধরে বাঁ দিক দিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন গাকপো। এরপর একজন ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে কাছের পোস্ট দিয়ে নিচু শট শানান তিনি। আর এতেই বল গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জাল খুঁজে নেয়। ফলে প্রথমবার ম্যাচে এগিয়ে যায় ডাচরা।
চলতি আসরে গাকপোর এটি ছিল তৃতীয় গোল। জর্জিয়ার জর্জেস মিকাউতাদজে, জার্মানির জামাল মুসিয়ালা ও স্লোভাকিয়ার ইভান শারাঞ্জের সঙ্গে যৌথভাবে যা টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ।
গোল হজম করেও শুরুতে দমে যায়নি রোমানিয়া। তবে গোল পেয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলে পাসিংয়ে ভুল অনেক কমে আসে ডাচদের। ফলে বলে নিয়ন্ত্রণ না রাখতে পেরে ধীরে ধীরে খেই হারিয়ে ফেলে রোমানিয়া।
পরবর্তীতে রক্ষণাত্মক খেলায় মনোযোগী হয় তারা। সেইসঙ্গে বল পেলেই আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছিল বারবার। কিন্তু ডাচ ডিফেন্সের সামনে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল তাদের প্রচেষ্টা।
তবে পরের দশ মিনিটে মুহূর্মুহূ আক্রমণে রোমানিয়ার রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় নেদারল্যান্ডস। কোনোমতে আক্রমণগুলো ঠেকিয়ে ডাচদের ব্যবধান বাড়াতে না দিলেও প্রথমার্ধের খেলা থেকে এসময় একপ্রকার ছিটকে যায় রোমানিয়া। তাদের প্রাণশক্তিই যেন ফুরিয়ে যায়।
ম্যাচের ৪৪তম মিনিটে ফের আরেকটি সুযোগ আসে সিমন্সের কাছে। ডানদিকে বাইলাইন থেকে ডেন্সেল ডুমফ্রিসের বাড়ানো বল ধরে শট নেন তিনি। পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে তার নেওয়া সেই শটটি জোরালো না হওয়ায় থেমে যায় কমলা জার্সি পরা সমর্থকদের উল্লাস।
প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে সুযোগ এসেছিল রোমানিয়ার সামনেও। তবে দেনিস দ্রাগাসের দুর্বল সেই শট ডাচ গোলরক্ষকের মনে ভীতির সঞ্চারও করতে পারেনি।
বিরতির পর ফের আরেকবার ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে রোমানিয়া। তবে তাদের প্রচেষ্টাকাল বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। ম্যাচের ৫০ মিনিট পেরোতেই আক্রমণের পুরনো ধার ফিরিয়ে আনে নেদারল্যান্ডস।
৫৪তম মিনিটে ডাচদের দুর্দান্ত একটি আক্রমণ রোমানিয়ার রক্ষণে বাধা পেলে চার মিনিট পর নিশ্চিত গোলবঞ্চিত হন ভার্জিল ফন ডাইক। কর্নার থেকে আসা ক্রস লাফিয়ে উঠে জোরালো হেডে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করেন লিভারপুল অধিনায়ক। তবে বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
এরপর থেকে একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করতে থাকে নেদারল্যান্ডস। কিন্তু কোনোভাবেই কোয়ার্টারের জায়গা পাকাপোক্ত করতে যে আরেকটি গোল প্রয়োজন ছিল, সেটি মিলছিল না।
৬৩তম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত সেই গোলটি পেলেও ভিএআরের অফসাইডের সিদ্ধান্তে হতাশ হন গাকপো। এসময় থেকে কিছু সময়ের জন্য খানিকটা হতাশই দেখাচ্ছিল ডাচদের। তবে প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছিল তারা।
চেষ্টা করতে করতে অবশেষে ভাগ্যদেবী প্রসন্ন হন ম্যাচের ৮০ মিনিট পর। ৮৩তম মিনিটে গাকপোর সহায়তায় নেদারল্যান্ডসকে আনন্দে ভাসান মালেন। বক্সের ভেতরে বাঁ দিকের বাইলাইন থেকে প্রতিপক্ষের একজন কাটিয়ে সামনে অসাধারণ এক পাস বাড়ান গাকপো, তা থেকে চকিতে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মালেন।
এরপর অতিরিক্ত যোগ করা সময়ে নিজেদের অর্ধ থেকে বল ধরে এগিয়ে গিয়ে রোমানিয়ার গোলরক্ষককে পরাস্ত করে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করার পর বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নেদারল্যান্ডস।
আগামী শনিবার (৬ জুলাই) রাত ১টায় কোয়ার্টার ফাইনালে তুরস্কের মুখোমুখি হবে রোনাল্ড কুমানের শিষ্যরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।