Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা: অনিশ্চিত ভবিষ্যতের একমাত্র আস্থার ভিত্তি
    লাইফস্টাইল ডেস্ক
    লাইফস্টাইল

    পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা: অনিশ্চিত ভবিষ্যতের একমাত্র আস্থার ভিত্তি

    লাইফস্টাইল ডেস্কTarek HasanJuly 9, 202516 Mins Read
    Advertisement

    গাজীপুরের রহিমা বেগমের চোখে এখনও সেই আতঙ্ক ভাসে। স্বামী মো. রফিক, একজন টেক্সটাইল শ্রমিক, হঠাৎ তীব্র বুকে ব্যথা নিয়ে পড়ে গেলেন কাজের জায়গায়। অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন তাকে এপোলো হাসপাতালে নেওয়া হলো, তখন ডাক্তাররা জানালেন – জরুরি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি দরকার। খরচ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। রহিমার হাতের গহনা, স্বামীর প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রামের জমি – সব বিক্রি করেও যখন টাকা জোগাড় হচ্ছিল না, তখন একমাত্র ভরসা ছিল স্বামীর কোম্পানির দেওয়া পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা পলিসিটি। সেই বীমাই সময়মতো চিকিৎসার খরচ বহন করেছিল। রফিক আজ সুস্থ। কিন্তু রহিমা ভাবেন, ওই বীমা কভারেজ না থাকলে কী হতো? এভাবেই অপ্রত্যাশিত অসুস্থতা বা দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের হাজার হাজার নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে যায়, শুধুমাত্র একটি সহজ সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে – পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত।

    পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা

    • পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা: কেন এটি অপরিহার্য জীবনরক্ষাকারী বর্ম
    • পরিবারের জন্য সঠিক স্বাস্থ্য বীমা পলিসি কিভাবে বেছে নেবেন: গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ
    • দুরারোগ্য ব্যাধির আঘাত: পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা কেন তখন জীবনরক্ষাকারী হয়ে ওঠে
    • সরকারি বনাম বেসরকারি: পরিবারের জন্য কোন স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনা আপনার জন্য উপযুক্ত?
    • ভবিষ্যতের নিরাপত্তা: পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা নেওয়ার সঠিক সময় কখন?
    • জেনে রাখুন

    বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার বাস্তবতা কঠিন। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে প্রতি ১০ জনে ১ জনেরও বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ক্যান্সারের হারও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর প্রায় ২.৫ লক্ষ মানুষ মারা যান। এসব রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ একটি অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশনই খরচ করতে পারে ৫০-৭০ হাজার টাকা। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে – স্বাস্থ্য ঝুঁকি কখন, কার উপর, কীভাবে আঘাত হানবে, তা কেউ বলতে পারে না। এমন অনিশ্চিত পরিবেশে পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা শুধু আর্থিক সুরক্ষাই দেয় না, দেয় মানসিক শান্তি ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসার সুযোগ।

    পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা: কেন এটি অপরিহার্য জীবনরক্ষাকারী বর্ম

    আমাদের সমাজে ‘বীমা’ শব্দটির সাথে এখনও অনেকেরই একধরনের অনীহা বা অবিশ্বাস কাজ করে। অনেকেই ভাবেন, “আমাদের পরিবারে তো কেউ অসুস্থ হয় না”, “বীমা কোম্পানিগুলো তো দাবি মেটায় না”, অথবা “মাসিক প্রিমিয়াম দেয়ার সামর্থ্য নেই”। কিন্তু রফিক-রহিমার মতো অসংখ্য পরিবারের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতির পরিসংখ্যান একটাই কথা বলে – পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং আধুনিক জীবনের একটি অপরিহার্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বারবার সতর্ক করে আসছে যে চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়ে। বাংলাদেশও এই সত্য থেকে আলাদা নয়।

    • চিকিৎসা ব্যয়ের আকাশছোঁয়া বৃদ্ধি: বিশেষায়িত হাসপাতাল, আধুনিক ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি (MRI, CT Scan), নতুন প্রজন্মের ওষুধ ও জটিল সার্জারির খরচ গত এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। একটি সাধারণ ফ্র্যাকচারের চিকিৎসায় ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাওয়াটা এখন অস্বাভাবিক নয়। ক্রনিক কিডনি রোগের ডায়ালাইসিস বা ক্যান্সারের কেমোথেরাপি নিয়মিত চিকিৎসা একটি পরিবারের সমস্ত সঞ্চয় শুষে নিতে পারে। পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমা এই বিপুল আর্থিক চাপ সামলানোর একমাত্র কার্যকর হাতিয়ার।
    • জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও রোগের প্রকৃতি: নগরায়ন, প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার বৃদ্ধি, শারীরিক পরিশ্রম কমা, মানসিক চাপের মাত্রা বেড়ে যাওয়া – এসব কারণে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হৃদরোগ, স্ট্রোক, এমনকি অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনাও বাড়ছে। এসব রোগ দীর্ঘমেয়াদি এবং চিকিৎসা ব্যয়বহুল। পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা ছাড়া এই দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা খরচ মেটানো মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেও প্রায় অসম্ভব।
    • দুর্ঘটনার অনিশ্চয়তা: রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনা, কর্মক্ষেত্রে বা বাড়িতে হঠাৎ আঘাত পাওয়া – এসব ঘটনা কখন ঘটবে তা কেউ জানে না। জরুরি অবস্থায় প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি, অপারেশন, আইসিইউ খরচ একদিনেই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা এই অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের সময় আর্থিক দুশ্চিন্তা দূর করে জীবন বাঁচানোর চিকিৎসায় মনোযোগ দিতে সাহায্য করে।
    • সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবার মান উন্নত হলেও, প্রচুর ভিড়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব এবং উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির অপ্রতুলতা অনেক সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জরুরি বা জটিল অবস্থায় প্রাইভেট সেবা নিতে গেলেই বিপুল খরচের সম্মুখীন হতে হয়। পরিবারের স্বাস্থ্য বীমা প্রাইভেট সেবার দরজা খুলে দেয়।

    সরল কথায়: পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা মানে শুধু টাকার গ্যারান্টি নয়, মানে সময়মতো সেরা চিকিৎসা পাওয়ার গ্যারান্টি। মানে অসুস্থতার সময় আর্থিক সংকটে পরিবারকে জমি-জিরাত, গহনা বা ভবিষ্যতের শিক্ষা তহবিল বিক্রি করতে না দেওয়া। মানে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আর্থিক ঢাল তৈরি করা।

    পরিবারের জন্য সঠিক স্বাস্থ্য বীমা পলিসি কিভাবে বেছে নেবেন: গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ

    একটি পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা পলিসি বেছে নেওয়া সহজ কাজ নয়। বাজারে নানা কোম্পানির নানা রকম প্ল্যান, কভারেজ, এক্সক্লুশন এবং প্রিমিয়াম রেট বিদ্যমান। ভুল পলিসি বেছে নিলে জরুরি সময়ে সুবিধা পাওয়া নাও যেতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিচের বিষয়গুলো গভীরভাবে বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি:

    1. পরিবারের সদস্যসংখ্যা ও বয়স: পলিসি কেনার সময় পরিবারের মোট কতজন সদস্যকে কভার করা হবে (প্যারেন্টস, স্পাউস, শিশু – সাধারণত ১৮-২৫ বছর পর্যন্ত) তা নির্ধারণ করুন। বীমাকারী সদস্যদের বয়স প্রিমিয়াম রেটকে সরাসরি প্রভাবিত করে। সাধারণত কম বয়সে পলিসি নিলে প্রিমিয়াম কম হয়। তাই সন্তান জন্মানোর পরপরই বা দম্পতি হিসেবে বিবাহের পরেই পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। বয়স্ক পিতামাতাকে অন্তর্ভুক্ত করলে প্রিমিয়াম বেশি হবে, কিন্তু তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি হওয়ায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
    2. সুম অ্যাশিওর্ড (Assured Sum): এটি পলিসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। সুম অ্যাশিওর্ড হলো সেই সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা, যা বীমা কোম্পানি একটি বীমা বছরে আপনার চিকিৎসা খরচের জন্য দেবে। এই পরিমাণ নির্ধারণের সময় বিবেচনা করুন:
      • পরিবারের সদস্যদের বর্তমান স্বাস্থ্য অবস্থা (কোনো ক্রনিক ডিজিজ আছে কিনা)।
      • পরিবারের প্রধান আয়ের উৎসের পেশাগত ঝুঁকি।
      • আপনার বসবাসরত এলাকায় ভালো হাসপাতালের চিকিৎসার আনুমানিক খরচ।
      • মুদ্রাস্ফীতির হার (ভবিষ্যতে চিকিৎসা খরচ বাড়বে)।
      • পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা পলিসিতে সাধারণত ২ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ২০ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি সুম অ্যাশিওর্ড নেওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা সাধারণত অন্তত ৫-১০ লক্ষ টাকা সুম অ্যাশিওর্ড নেওয়ার পরামর্শ দেন, বিশেষ করে শহুরে পরিবারের জন্য।
    3. কভারেজের পরিধি (What’s Covered): পলিসির ফাইন প্রিন্ট ভালো করে পড়ুন। নিচের কভারেজগুলো থাকা আবশ্যক:
      • হাসপাতালে ভর্তি খরচ (Hospitalization): রুম রেন্ট, ডাক্তারের ফি, নার্সিং চার্জ, ওষুধ, ডায়াগনস্টিক টেস্ট, অপারেশন থিয়েটার খরচ ইত্যাদি। (সাধারণত ২৪ ঘন্টার বেশি ভর্তি থাকতে হবে)।
      • প্রি-হসপিটালাইজেশন ও পোস্ট-হসপিটালাইজেশন খরচ: হাসপাতালে ভর্তির আগে এবং ছাড়ার পরের নির্দিষ্ট দিন (যেমন ৩০/৬০ দিন) পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শ ও টেস্টের খরচ।
      • ডে কেয়ার প্রসিডিউর: যেসব জটিল চিকিৎসা (কেমোথেরাপি, ডায়ালাইসিস, ক্যাথেটারাইজেশন) ২৪ ঘন্টার কম সময়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন হয়, সেগুলোর খরচ।
      • অ্যাম্বুলেন্স চার্জ: জরুরি ভর্তির জন্য অ্যাম্বুলেন্স খরচ।
      • ক্যাশলেস হাসপাতালাইজেশন ফেসিলিটি: নেটওয়ার্ক হাসপাতালে সরাসরি বীমা কোম্পানির সাথে বিল নিষ্পত্তির সুবিধা। এটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা-র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা, যাতে নিজে অগ্রিম টাকা গুনতে না হয়।
      • ক্রিটিক্যাল ইলনেস কভার (ঐচ্ছিক কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ): ক্যান্সার, কিডনি ফেইলিউর, মেজর অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো নির্দিষ্ট দুরারোগ্য ব্যাধির জন্য আলাদা লাম্প সাম কভারেজ (সুম অ্যাশিওর্ডের অতিরিক্ত বা নির্দিষ্ট পরিমাণ)।
    4. এক্সক্লুশন (What’s NOT Covered): কোন কোন ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি দাবি মেটাবে না, তা জেনে নেওয়া জরুরি। সাধারণ এক্সক্লুশনগুলোর মধ্যে রয়েছে:
      • প্রাক-বিদ্যমান রোগ (Pre-existing Diseases – PED): পলিসি কেনার আগেই বিদ্যমান কোনো রোগ। বেশিরভাগ কোম্পানি ২-৪ বছরের ওয়েটিং পিরিয়ডের পর PED কভার করে। তাই যত তাড়াতাড়ি পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা নেবেন, তত তাড়াতাড়ি PED কভারেজ পাবেন।
      • প্রসূতি ও প্রসব সংক্রান্ত জটিলতা (সাধারণত নির্দিষ্ট ওয়েটিং পিরিয়ড পর)।
      • কসমেটিক সার্জারি।
      • ডেন্টাল ট্রিটমেন্ট (জটিল সার্জারি ছাড়া)।
      • এইডস/এইচআইভি সংক্রান্ত রোগ।
      • যুদ্ধ, দাঙ্গা, আত্মহত্যার চেষ্টাজনিত আঘাত।
      • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা বন্ধ করা বা হাসপাতাল ত্যাগ করা।
    5. ক্লেইম সেটেলমেন্ট রেশিও (CSR): বীমা কোম্পানি কতটা দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্যভাবে দাবি নিষ্পত্তি করে, তার একটি সূচক। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অথরিটি (বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ) এর ওয়েবসাইটে বা স্বাধীন রিভিউ সাইটগুলোতে কোম্পানিগুলোর CSR রেশিও দেখে নিন। উচ্চ CSR (৯০%+) নির্ভরযোগ্যতার ইঙ্গিত দেয়। পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা-র মূল উদ্দেশ্যই তো জরুরি সময়ে আর্থিক সহায়তা পাওয়া।
    6. নেটওয়ার্ক হাসপাতাল: বীমা কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হাসপাতালগুলোর তালিকা (যেখানে ক্যাশলেস সুবিধা পাওয়া যায়) দেখুন। আপনার পছন্দের বা কাছাকাছি মানসম্মত হাসপাতালগুলো এই নেটওয়ার্কে আছে কিনা, তা নিশ্চিত হোন।
    7. সাব-লিমিট: অনেক পলিসিতে রুম রেন্ট, সার্জারি চার্জ, ডাক্তারের ফি, আইসিইউ খরচ ইত্যাদির জন্য আলাদা সাব-লিমিট থাকে। সুম অ্যাশিওর্ড অনেক হলেও, সাব-লিমিট কম থাকলে সমস্যা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রুম রেন্টের সাব-লিমিট যদি শুধুমাত্র ৫,০০০ টাকা হয়, কিন্তু আপনি ১০,০০০ টাকার রুম নিলে, বাকি ৫,০০০ টাকা নিজে দিতে হবে। তাই পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা পলিসি বাছাইয়ের সময় কম সাব-লিমিট বা ‘আইটেম ওয়াইজ লিমিট’ যুক্ত পলিসি এড়িয়ে চলুন। ‘ফ্লোটার’ সুম অ্যাশিওর্ড বা কম সাব-লিমিট যুক্ত পলিসি ভালো।
    8. কো-পেমেন্ট (Co-payment): কিছু পলিসিতে কো-পেমেন্ট ক্লজ থাকে, যেখানে আপনাকে চিকিৎসা খরচের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ (যেমন ১০% বা ২০%) নিজে বহন করতে হবে, বাকিটা বীমা কোম্পানি দেবে। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য বা নির্দিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা করালে এই শর্ত আরোপ করা হতে পারে। কো-পেমেন্ট থাকলে প্রিমিয়াম কিছুটা কম হতে পারে, কিন্তু জরুরি অবস্থায় অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপতে পারে। কো-পেমেন্ট আছে কিনা খেয়াল করুন।
    9. প্রিমিয়াম রেট ও পেমেন্ট মোড: মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক বা বার্ষিক – কোন মোডে প্রিমিয়াম দিতে পারবেন? বার্ষিক দিলে প্রায়ই কিছু ছাড় পাওয়া যায়। প্রিমিয়াম রেট বিভিন্ন কোম্পানি থেকে তুলনা করুন, কিন্তু শুধু কম প্রিমিয়ামের লোভে কম কভারেজ বা বেশি এক্সক্লুশন যুক্ত পলিসি নেবেন না। মনে রাখবেন, পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমা একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ।

    পরামর্শ: কমপক্ষে ৩-৪টি নামকরা বীমা কোম্পানির (সানলাইফ, পপুলার লাইফ, মেটলাইফ, আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল, ডেল্টা লাইফ, ন্যাশনাল লাইফ ইত্যাদি) পলিসির বিস্তারিত ফিচার, কভারেজ, এক্সক্লুশন এবং প্রিমিয়াম তুলনা করুন। একজন স্বাধীন ও বিশ্বস্ত বীমা উপদেষ্টার (Insurance Advisor) সহায়তা নিন। তারা আপনার পরিবারের সুনির্দিষ্ট চাহিদা বুঝে সঠিক পলিসি বেছে দিতে সাহায্য করবেন। পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা নির্বাচন কখনই তাড়াহুড়ো করে করা উচিত নয়।

    দুরারোগ্য ব্যাধির আঘাত: পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা কেন তখন জীবনরক্ষাকারী হয়ে ওঠে

    ক্যান্সার, কিডনি ফেইলিউর, মেজর অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট, প্যারালাইসিস বা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের মতো ক্রিটিক্যাল ইলনেস (দুরারোগ্য ব্যাধি) শুধু শারীরিক ও মানসিকভাবে ধ্বংসাত্মক নয়, আর্থিকভাবেও একেবারে নিঃস্ব করে দিতে পারে। এসব রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী, জটিল এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল। একটি ক্যান্সারের সম্পূর্ণ চিকিৎসা (সার্জারি, কেমো, রেডিওথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি) সহজেই ২০-৫০ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি খরচ করতে পারে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের খরচও প্রায় একই রকম। নিয়মিত ডায়ালাইসিস মাসে হাজার হাজার টাকা খরচ করে।

    এমন পরিস্থিতিতে একটি সাধারণ পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা পলিসির সুম অ্যাশিওর্ড (ধরা যাক ৫ লক্ষ টাকা) এক বা দুইটি কেমো সেশনের খরচ মেটাতেই শেষ হয়ে যেতে পারে। বাকি চিকিৎসার খরচ কোথা থেকে আসবে? এখানেই পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা পলিসির সাথে ক্রিটিক্যাল ইলনেস (CI) রাইডার বা অ্যাড-অন কভারেজের গুরুত্ব অপরিসীম।

    • ক্রিটিক্যাল ইলনেস বেনিফিট: এটি একটি লাম্প সাম (এককালীন অর্থ) সুবিধা। পলিসির মূল সুম অ্যাশিওর্ডের অতিরিক্ত বা আলাদাভাবে (নির্ভর করে পলিসির উপর) এই পরিমাণ টাকা বীমা করা যায়। ধরা যাক, আপনার মূল পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা সুম অ্যাশিওর্ড ১০ লক্ষ টাকা এবং আপনি ২০ লক্ষ টাকার CI বেনিফিট নিলেন। যদি পলিসির মেয়াদে আপনি নির্দিষ্ট তালিকাভুক্ত কোনো ক্রিটিক্যাল ইলনেসে (যেমন ক্যান্সার) আক্রান্ত হন এবং ডায়াগনোসিস নিশ্চিত হয়, তাহলে বীমা কোম্পানি আপনাকে এককালীন সেই ২০ লক্ষ টাকা দেবে।
    • কীভাবে সাহায্য করে?
      • এই টাকা দিয়ে আপনি উচ্চ ব্যয়বহুল চিকিৎসা (বিদেশে গেলেও) নিতে পারবেন।
      • আয়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন (চিকিৎসার সময় কাজ করা সম্ভব নাও হতে পারে)।
      • পরিবারের চলমান খরচ (বাচ্চার পড়ালেখা, বাড়ি ভাড়া, ঋণের কিস্তি) চালিয়ে যেতে পারবেন।
      • মানসিক চাপ কমবে, শুধুমাত্র সুস্থ হওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন।
      • মূল পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা কভারেজ (১০ লক্ষ টাকা) হাসপাতালে ভর্তি ও অন্যান্য খরচের জন্য অক্ষত থাকবে। CI বেনিফিট তা থেকে আলাদা।

    বাস্তব উদাহরণ: খুলনার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। তার স্ত্রীর স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। শফিকুলের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা পলিসিতে ছিল ১৫ লক্ষ টাকার ক্রিটিক্যাল ইলনেস কভার। ডায়াগনোসিস নিশ্চিত হওয়ার পর বীমা কোম্পানি তাকে ১৫ লক্ষ টাকা এককালীন দেয়। এই টাকা দিয়ে তিনি স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছেন ঢাকা ও ভারতের ভালো হাসপাতালে। তার মূল হাসপাতাল কভারেজ (১০ লক্ষ টাকা) দিয়ে অপারেশন ও হাসপাতাল খরচ মেটানো হয়েছে। তিনি বলেন, “এই CI কভার না থাকলে হয়তো স্ত্রীকে নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া, বা এমনকি সম্পূর্ণ চিকিৎসাই সম্ভব হতো না। পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা-র সাথে এই রাইডার জুড়ে নেয়াটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত।

    সতর্কতা: CI কভারেজের তালিকা (কোন কোন রোগ কভার করা হবে), ওয়েটিং পিরিয়ড (পলিসি শুরুর কতদিন পর কভার শুরু হবে) এবং রোগের ডেফিনিশন (কোন পর্যায়ের রোগে কভার মিলবে) খুব ভালো করে বুঝে নিতে হবে। প্রাক-বিদ্যমান রোগের জন্য আলাদা নিয়ম থাকতে পারে।

    সরকারি বনাম বেসরকারি: পরিবারের জন্য কোন স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনা আপনার জন্য উপযুক্ত?

    বাংলাদেশে পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা সেবা দেয় মূলত দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান:

    1. সরকারি স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প:
      • শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন (বিকেএমএফ): নিবন্ধিত শ্রমিকদের জন্য স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা। চিকিৎসা খরচের ৭০% পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হয়।
      • স্বাস্থ্য অর্থ সহায়তা তহবিল (Health Economics Unit – HEU): গরিব ও দরিদ্র মানুষের জন্য বিশেষ করে জেলা সদর হাসপাতালে নির্দিষ্ট চিকিৎসা খরচের আংশিক বা পূর্ণ সহায়তা। এটি সরাসরি বীমা নয়, কিন্তু আর্থিক ঝুঁকি কমায়।
      • সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্য সেবা (সিএইচসিপি): কিছু ইউনিয়ন/উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু স্বাস্থ্য বীমার মতো প্রকল্প, যেখানে নামমাত্র চাঁদা দিয়ে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায়।
      • সুবিধা:
        • অত্যন্ত কম খরচ বা প্রায় বিনামূল্যে।
        • সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ।
      • সীমাবদ্ধতা:
        • সীমিত কভারেজ: নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা পরিমাণে।
        • সুবিধাভোগীর সীমাবদ্ধতা: শুধুমাত্র নিবন্ধিত শ্রমিক বা নির্দিষ্ট আয়ের নিচের পরিবার।
        • বিস্তৃত এক্সক্লুশন: অনেক রোগ বা চিকিৎসা কভার করা হয় না।
        • ক্যাশলেস সুবিধার অভাব: প্রায়ই অগ্রিম খরচ করে পরে রিইমবার্সমেন্ট নিতে হয়, যা গরিব পরিবারের জন্য কষ্টকর।
        • নেটওয়ার্ক সীমিত: শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে (যেখানে সেবার মান ও ভিড়ের চাপ সমস্যা)।
        • ক্রিটিক্যাল ইলনেস বা জটিল চিকিৎসার জন্য অপ্রতুল: সুম অ্যাশিওর্ড খুবই কম।
      • কার জন্য: যাদের আর্থিক সামর্থ্য খুবই সীমিত এবং শুধুমাত্র মৌলিক সরকারি সেবাতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারেন।
    2. বেসরকারি বীমা কোম্পানির স্বাস্থ্য বীমা:
      • লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো (সানলাইফ, পপুলার লাইফ, মেটলাইফ, আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল, ডেল্টা লাইফ, ন্যাশনাল লাইফ ইত্যাদি) এবং কিছু জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি স্বাস্থ্য বীমা পলিসি অফার করে।
      • সুবিধা:
        • বিস্তৃত কভারেজ: হাসপাতাল ভর্তি, ডে কেয়ার, প্রি ও পোস্ট হসপিটালাইজেশন, ক্রিটিক্যাল ইলনেস (রাইডার হিসেবে), অ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদি।
        • উচ্চ সুম অ্যাশিওর্ড: চাহিদা অনুযায়ী ২ লক্ষ থেকে কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত বীমা করা যায়।
        • ক্যাশলেস সুবিধা: নেটওয়ার্ক হাসপাতালে টাকা ছাড়াই চিকিৎসা পাওয়া যায় (টপ-আপ পলিসিতে)। এটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা-র সবচেয়ে বড় সুবিধা।
        • বিশ্বব্যাপী কভারেজ (কিছু পলিসিতে): বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ।
        • নেটওয়ার্ক হাসপাতাল: দেশের প্রায় সব নামকরা প্রাইভেট হাসপাতালে সুবিধা।
        • দাবি নিষ্পত্তির গতি: প্রতিযোগিতার কারণে কোম্পানিগুলো দ্রুত দাবি মেটানোর চেষ্টা করে (CSR লক্ষ্য রাখুন)।
        • নবায়নযোগ্য: প্রতি বছর পলিসি নবায়ন করা যায়, বয়স বাড়ার সাথে সাথে সুম অ্যাশিওর্ড বাড়ানো যায়।
      • সীমাবদ্ধতা:
        • মাসিক/বার্ষিক প্রিমিয়াম দিতে হয়: যা আয়ের উপর নির্ভর করে খরচ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে (যদিও এটি সুরক্ষার বিনিয়োগ)।
        • এক্সক্লুশন ও শর্তাবলী: প্রাক-বিদ্যমান রোগ, ওয়েটিং পিরিয়ড, নির্দিষ্ট রোগের ডেফিনিশন ইত্যাদি ভালো করে বুঝতে হবে।
        • পলিসি জটিলতা: বিভিন্ন রাইডার, ক্লজ বুঝতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
      • কার জন্য: মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং যে কেউ যারা সময়মতো মানসম্মত, কম জটিলতায় প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চান এবং আর্থিকভাবে নিজেকে ও পরিবারকে দুরারোগ্য ব্যাধির বিরুদ্ধে সুরক্ষিত রাখতে চান। পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা-র পূর্ণ সুবিধা পেতে চাইলে বেসরকারি বীমাই বর্তমানে সর্বোত্তম পছন্দ।

    ভবিষ্যতের নিরাপত্তা: পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা নেওয়ার সঠিক সময় কখন?

    এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো – এখনই। আজ এই মুহূর্তে। পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা নেওয়ার জন্য ‘সঠিক সময়’ বলে কিছু নেই। বরং অপেক্ষা করাই সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ:

    • বয়সই মূল ফ্যাক্টর: বীমা প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয় প্রধানত বয়সের উপর ভিত্তি করে। আপনি যত কম বয়সে পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা নেবেন, মাসিক প্রিমিয়াম তত কম হবে। ৩০ বছর বয়সে নেওয়া পলিসির প্রিমিয়াম ৪০ বা ৫০ বছর বয়সে একই কভারেজের জন্য নেওয়া পলিসির চেয়ে অনেক কম হবে। কম বয়সে নিলে দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয় হয়।
    • স্বাস্থ্য আজ ভালো, কাল কী হবে কে জানে? আজ আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ, কিন্তু আগামীকাল কী হতে পারে, কেউ জানে না। দুর্ঘটনা, হঠাৎ অসুস্থতা – এগুলো কখন আসবে বলে না। যদি অসুস্থ হওয়ার পর আপনি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা নিতে যান, তাহলে:
      • প্রাক-বিদ্যমান রোগ (PED) হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং কভার করা হবে না।
      • অনেক বেশি প্রিমিয়াম দিতে হবে।
      • বীমা কোম্পানি পলিসি দিতে অস্বীকারও করতে পারে।
    • ওয়েটিং পিরিয়ডের খেলা: প্রাক-বিদ্যমান রোগের জন্য সাধারণত ২-৪ বছর ওয়েটিং পিরিয়ড থাকে। অর্থাৎ পলিসি নেওয়ার পর ২-৪ বছর অপেক্ষা করতে হবে, তারপরই সেই রোগের জন্য কভারেজ পাবেন। যদি এই ওয়েটিং পিরিয়ডের মধ্যেই ওই রোগের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তাহলে দাবি করা যাবে না। তাই সুস্থ থাকতেই পলিসি নিয়ে ওয়েটিং পিরিয়ড পার করে ফেলা জরুরি।
    • জীবনের অনিশ্চয়তা: চাকরি যেতে পারে, ব্যবসায় মন্দা আসতে পারে। আজ আপনার আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারে। যখন সামর্থ্য আছে, তখনই ভবিষ্যতের আর্থিক ঝুঁকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা (পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমা) কিনে রাখুন।
    • পরিবার বেড়ে যাওয়া: সদ্য বিবাহিত দম্পতি, নবজাতক শিশু – পরিবার বাড়ার সাথে সাথে দায়িত্বও বাড়ে। সন্তান জন্মানোর পরপরই তাকে এবং নিজেদের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা-র আওতায় আনুন। শিশুদের প্রিমিয়াম খুবই কম হয়।

    সুতরাং, অপেক্ষা নয়, আজই সিদ্ধান্ত নিন। একটি বিশ্বস্ত বীমা উপদেষ্টার সাথে কথা বলুন। আপনার পরিবারের বয়স, আয়, চিকিৎসার চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী সঠিক পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা পলিসি বেছে নিন। এটি কোনো বিলাসিতা নয়, বরং আধুনিক, দায়িত্বশীল পরিবারের একটি অপরিহার্য ভিত্তি।

    জেনে রাখুন

    • পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা বলতে আসলে কী বোঝায়?
      পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা হলো একটি বিশেষ ধরনের ইন্স্যুরেন্স পলিসি যা একটি একক পলিসির আওতায় পরিবারের একাধিক সদস্যকে (সাধারণত স্বামী-স্ত্রী, অপরিবারিক সদস্য এবং নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তান) স্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থার আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে। হাসপাতালে ভর্তি, অপারেশন, জরুরি চিকিৎসা, ডে কেয়ার প্রসিডিউর, এমনকি দুরারোগ্য ব্যাধির জন্য এটি খরচ বহন করে, যাতে অসুস্থতার সময় পরিবারকে বিপুল ঋণের মুখে পড়তে না হয় বা সম্পদ বিক্রি করতে না হয়।
    • স্বাস্থ্য বীমা থাকলে পরিবারের কী কী সুবিধা পাওয়া যায়?
      পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা থাকলে প্রধান সুবিধাগুলো হলো: (১) আর্থিক সুরক্ষা: আকস্মিক ও উচ্চ চিকিৎসা খরচ থেকে পরিবারকে রক্ষা করে। (২) মানসম্মত চিকিৎসার সুযোগ: ক্যাশলেস সুবিধার মাধ্যমে নেটওয়ার্ক হাসপাতালে দ্রুত ও ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করে। (৩) মানসিক শান্তি: আর্থিক দুশ্চিন্তা কমিয়ে রোগীর পূর্ণ সুস্থতায় মনোযোগ দিতে সাহায্য করে। (৪) কর সুবিধা: বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম কর-ছাড়ের আওতায় পড়ে। (৫) দুরারোগ্য ব্যাধির বিরুদ্ধে ঢাল: ক্রিটিক্যাল ইলনেস কভার যুক্ত করলে দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ মেটে।
    • স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম কিসের উপর নির্ভর করে?
      পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা পলিসির প্রিমিয়াম মূলত নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর নির্ভরশীল: (১) বীমাকারী সদস্যদের বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রিমিয়াম বাড়ে। (২) সুম অ্যাশিওর্ডের পরিমাণ: যে পরিমাণ টাকা পর্যন্ত কভার চান, তার সাথে প্রিমিয়াম সরাসরি সমানুপাতিক। (৩) অন্তর্ভুক্ত সদস্যসংখ্যা: পরিবারে কতজন সদস্যকে কভার করা হচ্ছে। (৪) কভারেজের পরিধি: বেসিক হসপিটালাইজেশন, ক্রিটিক্যাল ইলনেস রাইডার, মাতৃত্ব সুবিধা ইত্যাদি যুক্ত করলে প্রিমিয়াম বাড়ে। (৫) চিকিৎসার ইতিহাস: ধূমপান, স্থূলতা বা প্রাক-বিদ্যমান রোগ থাকলে প্রিমিয়াম বেশি হতে পারে। (৬) কোম্পানি ও প্ল্যানের ধরন: ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি ও পলিসির ফিচারের উপর ভিত্তি করে প্রিমিয়াম ভিন্ন হয়।
    • প্রাক-বিদ্যমান রোগ (যেমন ডায়াবেটিস, প্রেশার) থাকলে কি স্বাস্থ্য বীমা পাওয়া যাবে?
      হ্যাঁ, পাওয়া যাবে, তবে শর্তসাপেক্ষে। পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা পলিসিতে সাধারণত প্রাক-বিদ্যমান রোগের জন্য একটি ওয়েটিং পিরিয়ড (সাধারণত ২ থেকে ৪ বছর) থাকে। এই সময়কাল পার হওয়ার পরই কেবল সেই নির্দিষ্ট রোগের জন্য দাবি করা যাবে। পলিসি কেনার সময় এই রোগগুলো ডিক্লেয়ার করা বাধ্যতামূলক। না করলে দাবি প্রত্যাখ্যাত হতে পারে। কিছু কোম্পানি বা প্ল্যানে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দিয়ে শর্টার ওয়েটিং পিরিয়ড বা নির্দিষ্ট শর্তে কভারও পাওয়া যেতে পারে।
    • স্বাস্থ্য বীমার দাবি করার সময় কী কী কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়?
      পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা-র দাবি (ক্লেইম) করার সময় সাধারণত নিম্নোক্ত কাগজপত্রগুলোর প্রয়োজন হয়: (১) সম্পূর্ণ দাবি ফর্ম (বীমা কোম্পানি বা হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত)। (২) চিকিৎসা শুরুর আগে বীমা কোম্পানিকে জানানোর প্রমাণ (যেখানে প্রয়োজন)। (৩) হাসপাতালের অরিজিনাল ডিসচার্জ সার্টিফিকেট। (৪) সমস্ত অরিজিনাল বিল ও রশিদ (ওষুধ, টেস্ট, সার্জারি, কনসালটেশন ইত্যাদি)। (৫) ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ও ডায়াগনোসিস রিপোর্ট (প্যাথলজি, এক্সরে, ECG, ইকো ইত্যাদি)। (৬) বীমা পলিসির কপি এবং বীমাকৃত ব্যক্তির আইডি প্রুফ। ক্যাশলেস ক্লেইমের ক্ষেত্রে হাসপাতাল এই কাজগুলোতে সাহায্য করে।

    পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা কেবলমাত্র একটি কাগজে স্বাক্ষর নয়; এটি আপনার প্রিয়জনদের জীবন, স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি অঙ্গীকারপত্র। রফিক, রহিমা বা শফিকুলের মতো অসংখ্য পরিবারের গল্প প্রমাণ করে, এই আর্থিক ঢালই পারে মৃত্যু আর দারিদ্র্যের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একমাত্র অবলম্বন হতে। চিকিৎসা ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি, দুরারোগ্য ব্যাধির বিস্তার এবং জীবনযাত্রার অনিশ্চয়তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে – পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা ছাড়া ভবিষ্যত পরিকল্পনা অসম্পূর্ণ। এটি মাসিক কিছু টাকার বিনিময়ে কেনা অমূল্য শান্তি, যার মূল্য বোঝা যায় ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আপনার পরিবারের সুরক্ষা, সুস্থতা এবং সুখের ভিত্তি হিসেবে আজই একটি উপযুক্ত পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা পলিসি নির্বাচন করুন – আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করবেন না, কারণ ভবিষ্যৎ কখনও জানান দেয় না।

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    best health insurance bima company family health insurance health card health insurance in bangladesh health insurance policy health insurance premium medical insurance অনিশ্চিত আস্থার একমাত্র ক্যাশলেস হাসপাতাল ক্রিটিক্যাল ইলনেস খরচ গুরুত্ব চিকিৎসা জন্য দুরারোগ্য ব্যাধি নীতি পরিকল্পনা পরিবারিক স্বাস্থ্য বীমা পরিবারের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বীমা প্রতিরোধ বীমা বীমা পলিসি ভবিষ্যতের ভিত্তি যত্ন লাইফস্টাইল সাশ্রয়ী স্বাস্থ্য বীমা সিদ্ধান্ত সুরক্ষা সেবা স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য খরচ স্বাস্থ্য বীমা স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমা
    Related Posts
    মেয়ে

    মেয়েরা কেন ভালো ছেলেদের পছন্দ করে না

    July 9, 2025
    ঢেঁড়স

    বাড়ির আঙ্গিনায় সহজে টবে ঢেঁড়স যেভাবে চাষ করবেন

    July 9, 2025
    ওয়েব সিরিজ

    নতুন গল্পের মোড়! রহস্য-রোমাঞ্চে ভরপুর জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ

    July 9, 2025
    সর্বশেষ খবর
    Manage Money Together: Best Budgeting Tools for Couples

    Manage Money Together: Best Budgeting Tools for Couples

    Kensington Security Solutions: Leading the Device Protection Revolution

    Kensington Security Solutions: Leading the Device Protection Revolution

    Realme GT Neo 5 বাংলাদেশে ও ভারতে দাম বিস্তারিত স্পেসিফিকেশনসহ

    Realme GT Neo 5 বাংলাদেশে ও ভারতে দাম বিস্তারিত স্পেসিফিকেশনসহ

    Buy Password Protected External Hard Drive

    Buy Password Protected External Hard Drive

    Best Personal Finance Blogs to Follow in 2025

    Best Personal Finance Blogs to Follow in 2025

    Best Electric Scooters Under $500: Top Picks for Budget Buyers

    Best Electric Scooters Under $500: Top Picks for Budget Buyers

    MrBeast: Architect of Viral Generosity and YouTube Supremacy

    MrBeast: Architect of Viral Generosity and YouTube Supremacy

    Katharine Hamnett Ethical Fashion: Pioneering Sustainable Activist Apparel

    Katharine Hamnett Ethical Fashion: Pioneering Sustainable Activist Apparel

    Kawai Piano Innovations: Leading the Musical Instrument Revolution

    Kawai Piano Innovations: Leading the Musical Instrument Revolution

    How to Sell Digital Templates on Etsy: Ultimate Step-by-Step Guide

    How to Sell Digital Templates on Etsy: Ultimate Step-by-Step Guide

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.