নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: ঈদের উৎসব শেষে যখন সবাই ধীরে ধীরে কর্মমুখর জীবনে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তখনই পরিবেশবান্ধব এক উদ্যোগে মেতে উঠলো সোয়াক (SWAC) একটি তরুণদের সংগঠন, যারা সমাজ ও পরিবেশ উন্নয়নে সচেতন ও সক্রিয়। ঈদের পরদিন থেকেই তারা টানা ছুটির দিনগুলোতে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুরু করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। পরে এর আশেপাশেও চলে এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। তবে এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল শুধু গাছ লাগানো নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ পৃথিবীর বীজ বপন।
এই মৌসুমে রোপণের পেছনে পরিবেশগত কারণ ছিল শক্তিশালী। বর্ষা আসছে, মাটি সিক্ত, গাছের বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ। এটাই ছিল সময় গাছ লাগিয়ে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা দেখানোর।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন সোয়াকের বর্তমান সদস্যরা ছাড়াও কয়েকজন অভিজ্ঞ ও প্রেরণাদায়ী। স্কুল প্রাঙ্গণের বিভিন্ন অংশে ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করা হয়, যার মধ্যে ছিল আম, কাঁঠাল, লিচু, গামারি, মেহগনি, রেইনট্রি প্রভৃতি প্রজাতি।
মাসুম বিল্লাহ নামে একজন শিক্ষাবিদ ও পরিবেশকর্মী, এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “যখন তরুণরা নিজেরা সংগঠিত হয়ে পরিবেশের জন্য কাজ করতে চায়, তখনই বদল আসে। গাছ লাগানো মানে শুধু প্রকৃতিকে ভালোবাসা নয়, নিজেদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা।”
সোয়াকের অন্যতম পথপ্রদর্শক আল আমিন বলেন, “ঈদের ছুটিকে শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি এমন কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়, যেখানে সমাজ ও প্রকৃতি উভয়ের উপকার হয় তবে সেটাই হবে সত্যিকারের ‘ঈদ পরবর্তী উদযাপন’। সোয়াক সেটাই করছে।”
কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক রাশেদুল রনি বলেন, “আমরা চেয়েছি সবাই মিলে একটা ছোট্ট পরিবর্তনের সূচনা করতে। আজ হয়তো গাছগুলো ছোট, কিন্তু একদিন এগুলোই হবে স্কুলের ছায়ার উৎস, পাখিদের বাসস্থান, আর আমাদের অহংকার।”
জানা গেছে, এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে শুধু গাছ লাগানো হয়নি, স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝেও পরিবেশ সচেতনতা জাগানোর একটি প্রচেষ্টা করা হয়েছে। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অনেকেই আগ্রহভরে রোপণ প্রক্রিয়া দেখেছে, কেউ কেউ হাতে নিয়েও লাগিয়েছে। এতে গড়ে উঠেছে একধরনের সংযোগ গাছের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে।
সোয়াক জানিয়েছে, এটি তাদের এককালীন আয়োজন নয়। ভবিষ্যতে উপজেলার আরও বিভিন্ন স্কুল ও জনবহুল এলাকায় তারা নিয়মিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায়। সেই সঙ্গে তারা স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করছে।
সোয়াকের এক সদস্য বলেন, “আমরা জানি, সব গাছ টিকে থাকবে না। কিন্তু কিছু যদি টিকে যায়, বড় হয়, সেটা হবে আমাদের চেষ্টার সফলতা। আর কিছু ছাত্র যদি এই কর্মসূচি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরাও গাছ লাগায়, তাহলেই প্রকৃত পরিবর্তন শুরু হবে।”
ঈদের ছুটির এই সময়টিকে শুধু আনন্দ আর ভোজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সোয়াক সদস্যরা দেখিয়ে দিলেন দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়া মানে প্রকৃতির প্রতিও দায়িত্বশীল হওয়া। তারা প্রমাণ করলেন, গাছ লাগানো মানে শুধু মাটি খুঁড়ে চারাগাছ বসানো নয়, এটি একটি আদর্শ, একটি আন্দোলন, একটি প্রতিজ্ঞাভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ পৃথিবী রেখে যাওয়ার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।