বেশিরভাগ মানুষ মাস শেষে অবাক হয়ে খেয়াল করেন যে, কোথায় যেন টাকা গায়েব হয়ে গেছে! অথচ একটু সচেতনতা, পরিকল্পনা আর কিছু কার্যকর টিপস মেনে চললে প্রতি মাসেই সঞ্চয় করা যায় অন্তত ৫০০০ টাকা। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এমন মাসিক বাজেট প্ল্যান খুবই প্রয়োজনীয়।
মাসিক বাজেট প্ল্যান: সঠিক পরিকল্পনায় সঞ্চয়ের দিকটি নিশ্চিত করুন
মাসিক বাজেট প্ল্যান এমন একটি কৌশল যা ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক আর্থিক স্থিতি বজায় রাখতে সহায়ক। এটি শুধু খরচ কমানো নয়, বরং প্রয়োজনীয় খাতে বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় নিশ্চিত করার পথ খুলে দেয়।
Table of Contents
প্রথমেই আয় ও খরচের খতিয়ান তৈরি করুন: মাসিক আয় কত, আর কোন কোন খাতে কেমন খরচ হচ্ছে তা লিখে রাখুন। একটি expense tracker বা একটি এক্সেল শিট ব্যবহার করতে পারেন। এতে সহজেই অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
৬০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণ করুন: আয়ের ৬০% দৈনন্দিন ব্যয়, ২০% সঞ্চয় এবং ২০% ব্যক্তিগত চাহিদা বা বিনোদনের জন্য বরাদ্দ করুন। এটি একটি প্রমাণিত বাজেটিং ফর্মুলা।
বাজারের আগে লিস্ট তৈরি করুন: পরিকল্পনা ছাড়া বাজারে গেলে অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু কিনে ফেলা হয়। কাজেই সব সময় প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি তালিকা তৈরি করে তবেই বাজার করুন।
ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন ও অপ্রয়োজনীয় সদস্যতা পর্যালোচনা করুন: মাসে কতো টাকা Netflix, YouTube Premium, বা অন্যান্য অ্যাপে খরচ হচ্ছে তা যাচাই করে প্রয়োজনবোধে বাদ দিন।
অল্প আয়ে সঞ্চয়: কৌশলী পরিকল্পনাই সেরা উপায়
অনেকেই মনে করেন আয় কম হলে সঞ্চয় সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবে সঠিক পরিকল্পনা থাকলে কম আয়েও সঞ্চয় সম্ভব।
খরচের উপর নিয়ন্ত্রণ: প্রথম ধাপ হলো অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো চিহ্নিত করে তা বাদ দেয়া। যেমন: বাহিরে খাওয়া, বারবার রাইড শেয়ার ব্যবহার ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ: আগামী ছয় মাসে কি কিনতে চান? যেমন: একটি স্মার্টফোন, বাইক, অথবা ছুটির ট্যুর। এই লক্ষ্য অনুযায়ী প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করুন।
সঞ্চয় অ্যাপ ব্যবহার করুন: Bkash, Nagad বা Upay-এর মত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয় ফিচার ব্যবহার করে প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা জমাতে পারেন।
দৈনন্দিন খরচের বিকল্প ভাবুন: রিকশার পরিবর্তে হাঁটা, খাবার তৈরি করে অফিসে নেয়া, নিজের চুল কাটা শেখা—এসব অভ্যাস সঞ্চয় বাড়াতে সাহায্য করে।
কোন খাতে কত খরচ করবেন? (টেবিল সহ)
খাত | মোট আয়ের শতকরা ভাগ | মন্তব্য |
---|---|---|
বাসা ভাড়া | ২৫% | চেষ্টায় থাকুন যেন আয়ের এক চতুর্থাংশের বেশি না হয় |
খাবার | ২০% | বাড়িতে রান্না সাশ্রয়ী উপায় |
যাতায়াত | ১০% | পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন |
সঞ্চয় | ২০% | বিনিয়োগ হিসেবেও বিবেচনা করুন |
শিক্ষা ও মেডিকেল | ১০% | অনিবার্য খরচ, তাই বাজেটে রাখুন |
বিনোদন ও ব্যক্তিগত | ১৫% | সীমিত খরচ করুন |
স্মার্ট বাজেটিং টুলস এবং অ্যাপস
আপনার মাসিক বাজেট প্ল্যান সহজ করতে কিছু আধুনিক টুল ও অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন:
- Wallet: ব্যক্তিগত খরচ ট্র্যাকিংয়ের জন্য ভালো অপশন
- YNAB (You Need A Budget): সাশ্রয় ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
- Splitwise: বন্ধু বা পরিবারের সাথে শেয়ার্ড খরচ হিসাব রাখার জন্য কার্যকর
জেনে রাখুন-
কম আয়েও কি সঞ্চয় সম্ভব?
হ্যাঁ, অল্প আয়েও সঞ্চয় সম্ভব। মূল কথা হলো পরিকল্পনা। সঠিক বাজেট ও সাশ্রয়ী জীবনধারা অনুসরণ করলেই এটি বাস্তবায়নযোগ্য।
সঞ্চয়ের জন্য মাসিক কত টাকা আলাদা রাখা উচিত?
সাধারণভাবে আয়ের অন্তত ২০% সঞ্চয়ের জন্য আলাদা রাখা উচিত। আয় অনুযায়ী এই পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।
কোন অ্যাপ দিয়ে মাসিক বাজেট তৈরি করা যায়?
Wallet, YNAB, Bkash বা Nagad অ্যাপ দিয়ে সহজেই মাসিক বাজেট তৈরি ও খরচ মনিটর করা যায়।
সঞ্চয় ও খরচের তালিকা কোথায় রাখলে ভালো?
এক্সেল শিট, গুগল ডকস বা বিভিন্ন বাজেট অ্যাপের মাধ্যমে তালিকা সংরক্ষণ করা নিরাপদ ও সুবিধাজনক।
কেন প্রতিটি কেনাকাটার আগে তালিকা করা দরকার?
এটি অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর গুরুত্ব দিতে সহায়তা করে। এটি সাশ্রয় বাড়ায়।
প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা সঞ্চয় করতে চাইলে মাসিক বাজেট প্ল্যান অনুসরণ করাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
একটি সুসংগঠিত বাজেট পরিকল্পনা আপনাকে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। আজ থেকেই শুরু করুন আপনার মাসিক বাজেট প্ল্যান, এবং নিশ্চিত করুন একটি সঞ্চয়ময় আগামীর পথ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।