জুমবাংলা ডেস্ক: মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের খুব কাছেই চলে এসেছে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’। তাই এই দুই বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও এই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। তবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতই দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বুধবার সকাল ৬টায় বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় আবহাওয়া অধিদফতর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৬টায় (২০ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ (২০ মে) বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বাতাসের বেগে আম্ফান যখন বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানবে তখন দ্বীপ ও চরাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহওয়া অফিস৷
২০০৭ সালে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর, তাতে তছনছ হয়েছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল, প্রাণ হারিয়েছিল দুই হাজারের বেশি মানুষ৷ এক যুগ পর সেই একই অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসা আরেক ঘূর্ণিঝড় আমফান এখন সিডরের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে৷ বিধ্বংসী সিডর ‘সুপার সাইক্লোন’ ছিল না৷
বঙ্গোপসাগরের জানা ইতিহাসে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন আম্ফান৷ প্রথম সুপার সাইক্লোনটি ছিল ১৯৯৯ সালের উড়িষ্যা সাইক্লোন৷
ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে উপকূলে আঘাত হানলেও এ বিস্তৃতি থাকবে বাংলাদেশের হাতিয়া পর্যন্ত৷
সিডরের উৎপত্তি যেখানে ছিল, আমফানের উৎপত্তিও বঙ্গোপসাগরের একই এলাকায়, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে৷ গত ডিসেম্বরে আঘাত হানা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মতোই এগোচ্ছে আমফান৷ গত বছরের মে মাসে আরেকটি শক্তিশালী ঝড় ফনীও একই পথে আঘাত হেনেছিল৷
সিডর আঘাত হানার সময় ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরবন উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিল৷ বুলবুলের ক্ষেত্রেও ঢাল হয়ে ছিল সুন্দরবন৷
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার আমফানের সম্ভাব্য যে গতিপথ দেখিয়েছে, তাতে উপকূল অতিক্রম করার সময় এ ঝড়ের কেন্দ্র বা চোখ থাকতে পারে সুন্দরবনের ওপর৷
বন অধিদপ্তরের (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল) বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, ‘এবারের সুপার সাইক্লোনের প্রভাব সুন্দরবনেও পড়বে৷ আমরা এর মধ্যে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট এলাকাসহ সবাইকে নিরাপদে অবস্থান নেওয়ার জন্যে সতর্ক করে দিয়েছে৷ মৎসজীবী ও বনজীবীদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্যে বলেছি৷’
মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেলেও বনের ক্ষয়ক্ষতি ঝড় থেকে এড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, অতীতে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে সুন্দরবনই রক্ষা করেছিল।”
তিনি আরও বলেন, ‘সুপার সাইক্লোনটি যদি সুন্দরবনে আঘাত হানে তবে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ থাকবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।