রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : কয়েক ফুট উঁচু মসজিদ ঘরের মতো দেখতে। তাতে প্রবেশদ্বারের মতো তিনটি দরজা কাটা। কিন্তু সেগুলো দরজা নয়। কারণ, এর ভেতরে ঢোকা যায় না। পেছনে শুধুই দেয়াল। একটু সরে সবার ডানপাশে একটি ছোট্ট কুঠুরি। ওপরে গম্বুজ। এটির ভেতরে ঢোকা যায়।
এটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কয়ারপাড়া ঈদগাহ’র সামনের স্থাপনা। তবে কারা এটি কবে তৈরি করেছেন– এলাকার কেউ বলতে পারেন না। সরকারিভাবেও কেউ কখনো এটি দেখতে আসেননি। ফলে স্থাপনার চুন-সুরকি খসে পড়েছে কবেই। পরিত্যক্ত প্রাচীরের ওপর গজিয়েছে লতাগুল্মের ঝোঁপ।
স্থানীয় লোকজন জানান, তাঁরা বংশানুক্রমিকভাবে এই স্থাপনার সামনে ইদের নামাজ পড়ে আসছেন। স্থাপনাটি কীসের ধ্বংসাবশেষ তাঁরা জানেন না। তাঁদের বাপ-দাদারাও এর কথা বলতে পারেননি।
কেউ কেউ দাবি করলেন, স্থাপনাটি রাতারাতি এখানে তৈরি হয়েছে। কেউ এটি গড়েননি।
ইদগাহটি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে স্থানীয় কয়ারপাড়া মসজিদ কমিটি। এই কমিটির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ রব মিয়া।
এম এ রব বলেন, তাঁরা শুনেছেন, প্রাচীরের মতো দেখতে স্থাপনাটি আরও অনেক উঁচু ছিল। ভূমিকম্পের ফলে এটির উচ্চতা কমে গেছে। পাশের দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় অবস্থিত সৌর মসজিদেও এমন উঁচু প্রাচীর দেখা যায়। তাই তাঁদের ধারণা, এটি মোগল আমলে তৈরি।
এলাকার কয়েকজন জানান, এই ইদগায় অনেক লোক মানত করেন। প্রায় প্রতিদিনই এখানে কেউ না কেউ খিচুড়িসহ নানা পদের সিন্নি দেন।
কোষাধ্যক্ষ এম এ রব বলেন, তিনি লোকজনকে এখানে সিন্নি দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেছিলেন। লোকজন জানিয়েছেন, এখানে মানত করলে তা পূরণ হয়। সে কারণে মানত পূরণ করতে তাঁরা এখানে আসেন।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, তিনপাশে ফসলের মাঠ। একদিকে রাস্তা। সড়কের ঠিক পূর্ব পাশেই পরিত্যক্ত স্থাপনাটি। এর চুনসুরকি খসে ইট বেরিয়ে গেছে। ডানপাশের ছোট কুঠুরিটির ভেতর কিছু বাঁশ-বালতি রাখা। প্রাচীর দখল করে ঝোঁপঝাড় তৈরি করেছে লতাগুল্ম।
ঢাকা থেকে আসা বন্ধুকে নিয়ে স্থাপনাটিতে ঘুরতে এসেছিলেন সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহওয়াজ কবির।
শাহওয়াজ বলেন, ‘এসব স্থাপনা অনেক কালের সাক্ষ্য বহন করছে। এগুলো প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য। আমাদের সম্পদ। এসব স্থাপনা রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’
গাইবান্ধা জেলা ও পলাশবাড়ী উপজেলার সরকারি তথ্য বাতায়ন ঘেঁটে দেখা যায়, এই স্থাপনাটি সম্পর্কে কোথাও কিছু নেই।
এ বিষয়ে এম এ রব বলেন, এখানে কখনো কোনো সরকারি কর্মকর্তা তাঁরা আসতে দেখেননি। হয়ত তাঁরা জানেনই না। কিন্তু সরকারিভাবে ঐতিহ্যটি দেখভাল করা দরকার। তাঁরা স্থাপনাটি সামাজিকভাবে সংস্কার করতে চান। কিন্তু এই কাজ করার মতো লোকের অভাব রয়েছে। ঐতিহ্যটি ধরে রেখে কীভাবে এটি সংস্কার করা যায়, সে বিষয়ে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
১ কেজি মিষ্টি কুমড়া ৮০ টাকা দিয়ে কিনে খেতে হবে কল্পনাও করিনি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।