জুমবাংলা ডেস্ক : বাগেরহাটের রামপালে প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তার ভুল চিকিৎসায় এক খামারীর ১৭টি ছাগল মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ খামারী ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের পেড়িখালী গ্রামের শেখ মাসুদ রানা পেশায় একজন ব্যবসায়ী। সম্প্রতি তিনি তার নিজ বাড়িতে একটি ছাগলের খামার গড়ে তোলেন। গত রবিবার তিনি পশু পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার সম্পর্কে জানার জন্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে তিনি উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মমতাজুল হক সুজনের কাছে তার ছাগলের খামারের কথা জানিয়ে পরামর্শ চান। এরপর মঙ্গলবার ডা. মমতাজুল তার খামারে ছাগলগুলো দেখতে যান। দেখেশুনে ছাগলগুলোকে ভ্যাকসিন (কৃমি ও লিভার) দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তার কথা মত খামারীও ভ্যাকসিন দিতে রাজি হলে ডা. মমতাজুল ভ্যাকসিনের একটি প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। এ বাবদ তিনি খামারীর কাছ থেকে এক হাজার টাকা ফি হিসেবে নেন। এরপর বুধবার সকালে ডা. মমতাজুল তার অফিস থেকে ভ্যাকসিন দিয়ে প্রাণী সম্পদ দপ্তর’র পেড়িখালী ইউনিয়নের দায়িত্বরত প্রতিনিধি আলাউদ্দিন শেখকে খামারীর বাড়িতে পাঠান। বুধবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে আলাউদ্দিন শেখ ওই খামারীর ১৭টি ছাগলকে সেই ভ্যাকসিন পুশ করেন। কিন্তু ছাগল প্রতি দুই সিসি ওষুধ চামড়ায় পুশ করার কথা থাকলেও তিনি তা না করে মাংসের মধ্যে পুশ করেন। ভ্যাকসিন দেয়ার পর ওই দিন সকাল ৯টার পর থেকে ছাগলগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। খিচুনি ও লাফালাফি করে পরবর্তীতে নিস্তেজ হয়ে মরতে শুরু করে ছাগলগুলো। ওই দিন সকালে ও রাতে ৫টি, বৃহস্পতিবার ৭টি, শুক্রবার ২টি ছাগল মারা যায়। এভাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত তার খামারের ১৭টি ছাগল মারা গেছে। প্রথম দফায় ৫টি ছাগল মারা যাওয়ার পর খামারী মাসুদ আবারো ডা. মমতাজুলকে খবর দিলে তিনি এসে বাকি অসুস্থ ছাগলের মধ্যে দুইটির অবস্থা খারাপ দেখে সেগুলোকে জবাই দিতে বলেন। তার সামনেই জবাই দেয়ার পর সেখান থেকেও তিনি খাওয়ার কথা বলে ১ কেজি মাংস নিয়ে যান। এরপর একের পর এক ছাগল মারা যাওয়ায় খামারী মাসুদ বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কবীর হোসেন ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল হাসানের বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম খামারীর সাথে চরম র্দুব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ করেছেন খামারী মাসুদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মমতাজুল হক সুজন বলেন, তার ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তবে যে (আলাউদ্দিন শেখ) ভ্যাকসিন পুশ করেছে সে চামড়ায় না করে মাংসে করাতে এমনটা হতে পারে। আমি চামড়ায় পুশ করতে বলেছি, মাংসে নয়। তারপরও বিষয়টি দেখতে হবে কেন এমন হলো। ভ্যাকসিনের মেয়াদ ঠিক ছিল কিনা এবং কি কারণে এমন হয়েছে তা উদঘাটন না করে বলা সম্ভব নয়।
আলাউদ্দিন শেখ বলেন, ইনজেকশন দিতে গেলে চামড়া ও মাংসে এদিক ওদিক হতে পারে। ওষুধে সমস্যা নাকি পুশে সমস্যা, নাকি ছাগলের অন্য কোন রোগ ছিল তা পরীক্ষা ছাড়া তো বলা সম্ভব না। ভুল চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসা ভুল না সঠিক বুঝবো কিভাবে। মানুষের তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দেয়া হয়, আর পশুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ওষুধ দিতে হয়, দেখতে হয়। তবে তিনি দাবি করেন, তিনি ৫ বছর ধরে এই কাজ করি, তার ভুল হওয়ার কথা না।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল হাসান বলেন, এক ছাগলের খামারীর একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের তদন্তে একটি কমিটি করা হবে। তারপর কমিটির সিদ্ধান্ত মতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।