জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রামে এক ব্যক্তির হত্যার ঘটনায় ‘স্বীকারোক্তি’ দেওয়া জীবন চক্রবর্তী ও দুর্জয় আচার্য্য নামের দুই কিশোর এখনো কারাগারে; যদিও ‘নিহত’ সেই ব্যক্তিকে পরে পুলিশই খুঁজে পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে মরদেহ কার ছিল? এ খুনের ঘটনায় জড়িত স্বীকার করেই বা এক কিশোর জবানবন্দি দিয়েছিল কেন?
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার ‘ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়!’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। গতকালই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সঞ্জয় সিংহকে তলব করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি প্রকৃত নিহত ব্যক্তির পরিচয় দ্রুততম সময়ে খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন।
যে ব্যক্তি নিহত সন্দেহে জীবন ও দুর্জয়কে গ্রেফতার করা হয়, তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলার জিপিএইচ ইস্পাতের কর্মী দিলীপ রায়। ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল পোড়া একটি মরদেহ উদ্ধার করে হালিশহর থানার পুলিশ। এর পাঁচ দিনের মধ্যে ওই দুই কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত দুই কিশোরের একজন জীবন চক্রবর্তী চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল। সে আদালতকে জানিয়েছিল, তারা জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। গাঁজা সেবন ও ৫০ টাকার বিরোধকে কেন্দ্র করে দিলীপ রায়কে তারা হত্যা করেছে এবং মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।
তবে তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হালিশহর থানার সাবেক উপপরিদর্শক মো. সাইফুল্লাহ তাঁর প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত হন, দিলীপ রায় জীবিত আছেন। জীবনের জবানবন্দি দেওয়ার আট দিনের মাথায় দিলীপকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তিনি জিপিএইচ ইস্পাতের চাকরি ছেড়ে খাগড়াছড়িতে বাস করছিলেন।
জীবনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়ে তার বাবা সুমন চক্রবর্তী দাবি করেছেন, পুলিশ নির্যাতন করে তার ছেলের কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করেছে। তাঁর দাবি ‘সত্য’ হলেও এখনো প্রকৃত নিহত ব্যক্তির সন্ধান পায়নি পুলিশ।
ঘটনাটি উচ্চ আদালতের নজরে আসায় জীবন ও দুর্জয়সহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হালিশহর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক সাইফুল্লাহকে আগামী ২২ অক্টোবর হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপপরিদর্শক সাইফুল্লাহ এরই মধ্যে সিলেট রেঞ্জে বদলি হয়েছেন। পরে মামলার তদন্তভার পান হালিশহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এ এম বদরুল কবীর। তিনি প্রায় আট মাস তদন্ত করেও নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করতে পারেননি। এরপর হালিশহর থানা থেকে তিনি বদলি হওয়ায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সিংহ। গত ডিসেম্বর থেকে তিনি মামলাটি তদন্ত করছেন।
গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘কমিশনার স্যার পুরো বিষয়টি অবগত হয়েছেন। কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।’ এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না।’
পুলিশের অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকৃত খুনের শিকার ব্যক্তির পরিচয় জানা জরুরি। কিন্তু প্রায় ১৭ মাসেও ওই ব্যক্তির পরিচয় দাবি করে কেউ থানায় আসেনি। উদ্ধারের সময় মরদেহ ছিল বিকৃত। মরদেহ থেকে নিয়ম অনুযায়ী ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। বয়স অনুমান করা হয়েছিল ১৬ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। পুরুষের মরদেহ হিসেবে শনাক্ত হলেও ওই ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি; যদিও ময়নাতদন্তের পর মরদেহ আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।