জুমবাংলা ডেস্ক : উনিশ পেরিয়ে কুড়িতে পা দিয়েছিলেন সজল, মাত্র ছ’মাস হলো। দুরন্তপনা শৈশব ও কৈশোরে গা মাড়িয়ে একটাই স্বপ্ন ছিল তার; বড় ফুটবলার হবেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তার বাবা। যদিও সজল বলত, ‘আমাকে খেলতে দাও। একদিন আমি ফুটবল খেলে তোমার জন্য সম্মান বয়ে আনব’। কিন্তু সেই বাধাই যে কাল হবে জানতে না তিনি, ছেলে হারিয়ে তাই বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মাজু মিয়া।
ছেলেকে খেলতে না দেওয়ার কারণ, যদি না কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে সজল। তাই নিজের মনকে শক্ত করে ছেলেকে জোর করে পাশের জেলা গাজীপুরের কেশরিতা গ্রামে অবস্থিত রওজা হাইটেক লাক্সারি ফ্যান করাখানা কাজ করতে পাঠান তিনি। গতকাল রোববার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা গেছেন সজল।
নরসিংদী জেলার বেলাব থানার চর কাশিমনগর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সজল (২০)। আজ সোমবার সকালে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার লাশ সনাক্ত করেন বড়বোন সোনিয়া আক্তার।
সোনিয়া জানান, তার ভাই ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের ভক্ত ছিল। লেখাপড়া ফাঁকি দিয়ে সারাক্ষণ ফুটবল খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকত। খেলায় তার নৈপুন্যতার কারণে অল্পদিনে সকলের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে নরসিংদী জেলা জুড়ে।
বাবা-মায়ের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসএসসির বেশি পড়ালেখা করেননি সজল। খেলাধুলার নেশা তাকে এমনভাবে গ্রাস করেছিল, তার বাবা চাইছিলেন ছেলেকে কোনো কাজে বেঁধে রাখতে। সেই চিন্তা করেই সজলকে গাজীপুরের ওই কারখানায় কাজ করতে পাঠান বাবা।
ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায় মাজু মিয়া কোনো কথা বলতে পারছেন না। বার বার ছেলের নাম মুখে আনছেন, মূর্ছা যাচ্ছেন। কথা বলছেন না সজলেও মাও।
আজ সোমবার সজলের লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার মরদেহ হস্তান্তরের সময় জেলা প্রশাসন ঘোষিত ২৫ হাজার টাকা এবং মালিকের পক্ষ থেকে আরও ২০ হাজার টাকা প্রতিলাশের স্বজনদের দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হলেও ফায়ার সার্ভিস সন্ধ্যা ৫টা ৫২ মিনিটে ওই কারখানার তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লাগার খবর পায়। পরে তাদের স্টেশনের চারটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিভে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।