বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, “ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে নির্বাচন না হলে দেশ মহাবিপর্যয়ের কবলে পড়বে।”
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই জনগণের গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব, এবং বিএনপি এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত বর্ণাঢ্য মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করাই একাত্তর ও চব্বিশের গণহত্যাকারীদের মূল লক্ষ্য। এর সম্পূর্ণ দায় সরকারকেই নিতে হবে।”
নভেম্বরের ১১ থেকে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং জামায়াত নেতাদের ‘ঢাকার চেহারা পাল্টে দেওয়ার’ হুংকার প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন— “নির্বাচন বানচালে তারা কি যুগপৎ আন্দোলনের পথে হাঁটছে?
তিনি আরও বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরের সিপাহি জনতার বিপ্লব এবং চব্বিশের ছাত্র গণঅভ্যুত্থান একই সূত্রে গাঁথা, এক ও অভিন্ন। দখলদার ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি নিশ্চিত করে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সুসংহত ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করাই মুক্তিযুদ্ধ, সিপাহি-জনতার বিপ্লব এবং ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা। নির্বাচনের পথে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন, বিএনপির পক্ষে জন জোয়ার দেখে তারা নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে দেশকে আবার অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়। এতে সুযোগ নিয়ে পলাতক ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসবে।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আওয়ামী ফ্যসিবাদকে ফিরিয়ে আনার চক্রান্ত হচ্ছে বলে জনমনে ধারণা জন্মেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনা ও গণতন্ত্র ও গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করার যে কোনো চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। তিনি জনগণের প্রতি নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যে কোনো মূল্যে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। এ সময় তিনি ডক্টর মুহম্মদ ইউনূসের প্রতি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। কয়েকটি জনবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত দল সরকারকে তাদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন।
তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনগণ ও রাজনৈতিক দলের কাছে প্রদত্ত ওয়াদা অনুযায়ী আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনে দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। প্রিন্স বলেন, বিএনপি সংস্কার চায় বলেই সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে সহযোগিতা করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জুলাই জাতীয় সনদের যে সব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে তার আইনানুগ বাস্তবায়নের জন্য এবং যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আন্তরিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বানও জানান।
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে বর্ণিত সব বিষয়কে বিএনপি ধারণ করে এবং সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি ময়মনসিংহ-১ আসনে তাকে বিএনপির মনোনয়ন প্রদান করায় বিএনপির চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করবেন।
হালুয়াঘাট পৌরশহরের ডিএস আলিম মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশের পর একটি বিশাল মিছিল হালুয়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, মধ্য বাজার, উত্তর বাজার হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সুবিশাল এই মিছিলে নারী ও গারোদের ব্যাপক উপস্থিতি সবার নজর কাড়ে। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মিছিলটি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার স্লোগানে মুখরিত হয়ে এক পর্যায়ে নির্বাচনী মিছিলে পরিণত হয়।
এ সময় মিছিলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হাসনাত বদরুল কবীর, যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আমজাদ আলীসহ উপজেলা ও পৌর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



