জুমবাংলা ডেস্ক : সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের বেঙ্গাবেরইল গ্রামে ২০ জুন নিহত জাহিদের বৃদ্ধ মা রাবেয়া বেগমকে মামলা তুলে নিতে আসামিরা দুই বিঘা জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে তারা ব্যর্থতার পর মামলা নিষ্পত্তি করতে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতাকে দিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। তার সহযোগিতায় আদালতে এসব মামলার মাধ্যমে নিহত জাহিদের পরিবারের সদস্যদের চাপে রাখা হয়েছে। এমন বানোয়াট মামলার জাঁতাকলে পড়ে ওই গ্রামের অন্তত ৩৫টি কৃষক পরিবারের দেড় শতাধিক মানুষের জীবন এখন জটিল ধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বেঙ্গাবেরইল গ্রামের মানুষ সামাজিক দলাদলিতে বিভক্ত। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধী কুদ্দুস মোল্লার ছেলে জাহিদ কোনো দলেই ছিলেন না। অন্যের বাড়িতে কামলা খেটে চলত তার সংসার। অথচ একখণ্ড জমি নিয়ে গ্রামের দুই প্রতিবেশীর সংঘর্ষে নিহত হতে হয়েছে তাকেই।
২০ জুন দুপুরে ওই গ্রামের আনার মোল্যা বিরোধপূর্ণ জমিতে ঘর তোলার উদ্দেশ্যে মাটি ভরাট করতে গেলে বাধা দেয় তারই চাচাতো ভাই আশরাফ মোল্যার পরিবার। বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় হট্টগোলের শব্দ পেয়ে ঘর থেকে উঠোনে নামতেই আশরাফ মোল্যার লোকজন আনার মোল্যার ভাগিনা জাহিদকে কুপিয়ে খুন করে। এরপর আনার মোল্যার প্রতিপক্ষের বাড়ি ঘরেও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরদিন নিহত জাহিদের মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় ২৬ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। অন্যদিকে প্রতিপক্ষে একই গ্রামের আবু বক্কার মোল্যার ছেলে শরিফুল ইসলাম ২৮ জুন সুনির্দিষ্ট ৩২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
পালটাপালটি ওই মামলার পরও হত্যা মামলা মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়ে জাহিদ হত্যা মামলার বাদী ও পরিবারসংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা করা হয়।
আদালতে ওইসব মামলা সূত্রে দেখা যায়, নিহত জাহিদের পরিবারসংশ্লিষ্টদের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা মামলা থেকে ছেলে মেহেদিকে রক্ষা করতে বাবা আশরাফ মোল্যা ২৪ সেপ্টেম্বর ৪৩ জনকে সুনির্দিষ্ট আসামি করে লুটপাটের মামলা (৭০/২৪) করেছেন। এ মামলার ১নং আসামি আনারুল এবং ৪৩নং আসামি বকুল। আবার একই ঘটনা উল্লেখ করে অপরিবর্তিত শব্দ-বর্ণ-বাক্যে ওই ৪৩ জনকেই আসামি করে আশরাফ মোল্যা তার ভাগিনা নিটু মোল্যাকে দিয়ে একই তারিখে আরেকটি মামলা (৬৯/২৪) করিয়েছেন। উভয় মামলার আইনজীবীও ছিলেন একই ব্যক্তি আবু নইম মিলন।
আবার একই গ্রামের হাছেদ আলি মোল্যা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি দুই পুত্র সাজ্জাদ ও হাসানকে রক্ষা করতে ১৯ আগস্ট এবং ২০ আগস্ট হত্যাকাণ্ড পরবর্তী একই তারিখের ঘটনা উল্লেখ করে আমলি আদালতে দুটি লুটপাটের মামলা দায়ের করেছেন। এখানেও আইনজীবী সেই আবু নইম মিলন।
অপরদিকে হত্যা মামলার পর ২৮ জুন শরিফুল ইসলাম ওই গ্রামের প্রতিপক্ষ ২২ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করলেও ১৮ সেপ্টেম্বর ছোট ভাই কামরান হোসেনকে দিয়ে আদালতে আগের ঘটনা উল্লেখ করে আবার মামলা করিয়েছেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪০ জনকে।
একইভাবে হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে পরিবারের অল্পবয়সি ও নারী সদস্য জেলেখা খাতুন, সাগরিকা খাতুন, রুনা, স্বপ্না খাতুন, ফাতেমা, ফুলজান বেগমসহ, জাবের হোসেন, মাফুজ মোল্যা, লিয়াকত হোসেনকে দিয়েও বিভিন্ন রকম মামলা করা হয়েছে। আর সব ক্ষেত্রেই প্রায় একই বিবরণে ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তন’-এর বিষয়টি মামলা দায়েরে বিলম্বের কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিহত জাহিদের মামা মন্টু মোল্যা জানান, হাছেদ আলিসহ আসামিপক্ষের আরও অনেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। দুই বিঘা জমি, নগদ টাকা ছাড়াও নানারকম প্রস্তাব দিয়েছে। জাহিদের মারা যাওয়ায় সংসার চলছেই না। তারপরও তার বৃদ্ধ মা কোনো কিছুর বিনিময়ে মামলা নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় তারা এখন একজন রাজনৈতিক নেতাকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে একটি ঘটনা নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে এতগুলো মামলা দিয়ে আমাদের নাজেহাল করছে।
থানায় মামলা করার পরও আদালতে একই ঘটনা নিয়ে একাধিক মামলা সৃষ্টির বিষয় নিয়ে মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আকবর কল্লোল, সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাবলু, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ হাসান টগরসহ বিজ্ঞ আইনজীবীরা এ ধরনের ঘটনাকে ‘এবিউজ অব দ্য প্রসেস অব দ্য কোর্ট’ এবং আইনজীবীদের ‘ম্যাল প্রাকটিস’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
মাগুরা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, একটি ঘটনা নিয়ে একাধিক মামলা হতে পারে না। কিন্তু মামলাগুলো আদালতে করা হয়েছে বিধায় এটি তদন্তের দায়িত্ব পুলিশকে দেওয়া হলে নিরপরাধ মানুষ যাতে শাস্তি না পায় বা হয়রানির শিকার না হয়, সেটি নিশ্চিত করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।