জুমবাংলা ডেস্ক : সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ফাইজা আক্তার রুজি। জন্ম থেকেই দুই পা প্রতিবন্ধী। শ্রমজীবী শওকত মিয়া ও মা মনিরা খাতুন দম্পতির মেয়ে। শ্রমিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় মা-বাবার ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য হয়ে ওঠেনি তাকে একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেয়ার। মা-বাবা কষ্ট করে তাকে নয় ধরে লালন-পালন করে বড় করছেন। শিক্ষার আলো ছড়াতে মেয়েকে ২০১৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন দুর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ভর্তির শুরু থেকেই প্রতিবন্ধি রুজিকে তার মা প্রথমেই কোলে-পিঠে করে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। একটু বড় হওয়ার পর নিজেই হাটুতে ভর দিয়ে তিন বছর ধরে বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করছে।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রুজি। বাড়িতে লেখাপড়া চালিয়েই ক্লাসে তার রোল হয়েছে ১২। শারিরীক প্রতিবন্ধী থেকেও এভাবেই কষ্ট করে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া দৃশ্য এলাকাবাসী চোখে পড়লেও কারো সাধ্য হয়ে ওঠেনি তাকে সহযোগিতার।
এ প্রতিবেদকের সামনে পড়লে প্রতিবেদকের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সবার নজরে আসে।
সুধী সমাজে প্রশ্ন উঠেছে প্রতি বছরই উপজেলা শিক্ষা অধিদফতরে প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদের জন্য ডিভাইজ (হুইল চেয়ার, আনুষাঙ্গিক) বাবদ যে টাকা বরাদ্ধ আসে এগুলো কি আদৌ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে ?
পারিবারিকভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই স্কুলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রুজির জন্য একটি হুইল চেয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়ে বার বার রুজির মা মনিরা খাতুন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে বলেছেন। প্রধান শিক্ষক রুজির মাকে বার বার শুধু আশ্বস্তই করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রুজির হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা হয়নি।
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মা মিনারা খাতুন বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ কোনো রকম খাইয়া বাইচ্চা আছি। কয়েক বছর ধরে আমার মেয়ে হাঁটুতে ভর দিয়ে এভাবেই স্কুলে যাওয়া-আসা করে। মেয়ের কষ্ট দেখে চোখে পানি আসে। স্কুলের হেড স্যারের কাছে তিন বছর ধইরা কইছি আমার মেয়ের একটা উইল চেয়ার কিনে দেয়ার লাইগা। কোনো ব্যবস্থা করতে পারি নাই। হেড স্যারে খালি কই, আমি উপজেলার শিক্ষা স্যারকে জানাইছি বিষয়টা। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তিন বছর ধইরা আশ্বাসের বাণী খালি শুনতাসি। এখন কইছি ঋণ কইরা হইলেও আমার মেয়ের লাগি একটা হুইল চেয়ার কিনতাম ‘
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে দুর্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকে মো: আবদুল গফ্ফারকে মোবাইল করলে তিনি বলেন, রুজির মা আমাকে বারবার বলে রুজিকে একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য। না হয় ঋণ করেই তিনিই একটি হুইল চেয়ার কিনবেন। রোজির মায়ের কথা শুনে আমি অনেক লজ্জিত হই।
তিনি আরো বলেন, হাঁটুর উপর ভর দিয়ে রোজ স্কুলে আসায় আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগে। আমি বেশ কয়েক বার আমাদের উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি বলেছি। তিনি জানিয়েছেন তার তালিকা করা হয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন বলেন, ওর জন্য হুইল চেয়ার কেনা হয়েছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর তালিকাভুক্ত সাতজন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হবে। তবে তিন বছরের মধ্যে এই শিক্ষার্থী হুইল চেয়ার পাইনি কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে বলেন আমরা আগে তথ্য পাইনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।