জুমবাংলা ডেস্ক: কেভিড-১৯ রোগীদের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস-এ সহায়তার জন্য বাড়িতে ও হাসপাতালে ব্যাবহার যোগ্য সিপি-এপি যন্ত্র তৈরী করা হয়েছে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিএসই বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ আমিনুল হক আকন্দ এবং ইঞ্জিনিয়ার মিঠুন কুমার দাস (সিইও, এম’স ল্যাব ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন, ঢাকা) যৌথভাবে এই সিপিএপি যন্ত্র তৈরি করেছেন বলে আজ কুয়েট থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
যুক্তরাজ্যের আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এর ড.এনসিদ্দিক ও আরও কয়েকজন চিকিৎসক পরামর্শদিয়ে তাদের সহযোগিতা করেছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় , তৈরিকৃত সিপিএপি যন্ত্রটি মাইক্রোকন্ট্রোলার ভিত্তিক বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক ডিভাইস যা নিয়ন্ত্রিত নিয়মিত বায়ুচাপ বজায় রাখে। ফলে এটি শ্বাসকষ্টজনিত কোভিড-১৯ রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সহায়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডিভাইসে একটি কন্ট্রোল ইউনিট, একটি বিশেষ এয়ার পাম্প, ব্যাকআপ ব্যাটারি সহ পাওয়ার ইউনিট, মাস্ক, এবং ডিজিটাল ডিসপ্লেন্ট রয়েছে। পাম্পটি যন্ত্রটির প্রাণকেন্দ্র যা চাপযুক্ত বায়ু তৈরি করে, প্রতিস্থাপিত প্রেসার সেন্সর বায়ুচাপকে পরিমাপ করে ও নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
এছাড়াও একটি টিউনারের দ্বারা রোগীর শ্বাস প্রশ্বাসের অবস্থা অনুযায়ী উপযুক্ত চাপ টিউন করা হয়, যা কন্ট্রোল সার্কিটের মাধ্যমে পাম্পটি নিয়ন্ত্রণ করে। ডিভাইসটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রোগীদের অবস্থা যেমন ঘুম বা জাগ্রত অবস্থার ভিত্তিতে বায়ু চাপ বজায় রাখে। অবশেষে, চাপযুক্ত বায়ু নলের মাধ্যমে মাস্ক এবং রোগীর নাক দিয়ে প্রবাহিত হয়। ডিভাইসটি এসি ২২০ এর পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করে সার্কিট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে রিচার্জেবল ব্যাটারির মাধ্যমে চলে।
বিদ্যুৎ না থাকলেও এক ঘন্টা বা আরও বেশি সময় (ব্যাটারির ক্ষমতা নির্ভর করে) ব্যাটারি ব্যাকআপ থেকে চলবে। ব্যাটারি এবং সিস্টেমের অন্যান্য অবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে এলসিডি ডিসপ্লেতে পরিলক্ষিত হয়।
এতে আরো বলা হয় ,তৈরিকৃত সিপিএপি যন্ত্রটির মান ইন্টারনেটে প্রাপ্ত ডিভাইসগুলির তথ্যের ভিত্তিতে পর্যালোচনায় সামঞ্জস্যপূর্ণ তবে দাম হিসাবে অত্যন্ত সাশ্রয়ী। এই মুহূর্তে সিপিএপি যন্ত্রটির প্রোটোটাইপ ভার্সন তৈরির ব্যয় প্রায় ১২,০০০ টাকা । তবে অধিক সংখ্যক উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় এবং বিপণনের ব্যয় বিবেচনায় খুচরা মূল্য কম হবে। বর্তমানে চীনে তৈরি সিপিএপি’র অনলাইন খুচরা মূল্য ৫০,০০০ টাকা বা তারও অধিক। মাঝারি বা উচ্চতর উৎপাদন সুবিধা থাকা যেকোন ইলেকট্রনিক অ্যাসেম্বলি কোম্পানিতে উক্ত সিপিএপির বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব।
করোনা ভাইরাস তথা কোভিড -১৯ বর্তমানে এক আতংকের নাম যা মানব জাতির জন্য দিনে দিনে আরও কঠিন হয়ে উঠছে। ভাইরাসটি শ্বাসযন্ত্রে (অর্থাৎ ফুসফুসে) আক্রমণ করে এবং যাদের ফুসফুসে সমস্যা আছে তারা অত্যন্ত সংকটময় অবস্থায় চলেযেতে পারে যখন ভেন্টিলেটরের এর প্রয়োজন পড়ে।
এ ব্যাপারে সংকটাপন্ন রোগীদের আইসিইউতে চিকিৎসার জন্য মেকানিকাল ভেন্টিলেটর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোভিড -১৯ এর প্রায় ৮০ভাগ রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই সুস্থ হয়ে উঠেন এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর কেবলমাত্র একটি ছোট অংশের (ছয়জনের মধ্যে একজন) ভেন্টিলেটর সহায়তা প্রয়োজন পরে। এ ব্যাপারে পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার (সিপিএপি) শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়ক যন্ত্রও ব্যবহৃত হয়।
ভেন্টিলেটরও সিপিএপি উভয়টি শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়ক যন্ত্র হলেও তাদের মাঝে বিশেষ পার্থক্য আছে উল্লেখ করে বলা হয় , ভেন্টিলেটর টিউবের মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে যা রোগীর মুখ, ভোকালকর্ড এর মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করানো হয়। ডিভাইসটি কেবলমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালে ব্যাবহার যোগ্য এবং কেবল দক্ষ প্রযুক্তিবিদ এটি স্থাপন করে যখন রোগী নিজের শ্বাস নিতে না পারে ।
অন্যদিকে, সিপিএপি মুখোশদ্বারা নাকের মাধ্যমে শ্বাসকষ্টে সহায়তার জন্য ব্যবহৃত হয় এবংএটি ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ বা অনিয়মিত হয়ে নিদ্রাহীনতার ক্ষেত্রে কার্যকরি। সিপিএপি ভেন্টিলেটরের তুলনায় অনেক সস্তা এবং এটি হাসপাতাল এবং বাড়তি উভয় পরিবেশেই ব্যবহারযোগ্য। কারণ এটি স্থাপনের জন্য দক্ষ প্রযুক্তিবিদ প্রয়োজন নেই।
উদ্ভাবকরা বলেছেন, দেশীয় প্রযুক্তির অবকাঠামো ব্যবহার করে সিপিএপি যন্ত্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারে। এব্যাপারে উদ্ভাবকগন সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্তৃপক্ষ এবং বিভাগের কাছ থেকে প্রয়োাজনীয় সহায়তা কামনা করছেন। সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।