নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর : করোনাকালে বন্ধ বিদ্যালয়, অলস সময়ে নাভিশ্বাস ফেলা শিক্ষকদের হাতে কোনো কাজ না থাকায় মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে হাজী আব্দুল কাদের প্রধান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাদকে দেশি-বিদেশি ফুল, ফল ও ঔষধি উদ্ভিদে সাজিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। ৭৫টি প্রজাতির হাজারো উদ্ভিদের সবুজের সমারোহ এখন বিদ্যালয়জুড়ে।
‘নির্মল বায়ু, দীর্ঘ আয়ু’ এ বিশ্বাসকে লালন করে তাদের এ উদ্যোগ সাড়া জাগিয়েছে এলাকায়। এখন সবার দৃষ্টিজুড়েই এ বিদ্যালয়ের ছাদ বাগান।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, শ্রীপুর উপজেলার হায়াতখার চালা গ্রামে এই বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ৬৭৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। অবকাঠামোগত তেমন উন্নয়ন না হলেও শিক্ষক, কর্মচারীদের প্রচেষ্টায় দুই বছর আগে বিদ্যালয়টি শতভাগ তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় চলে আসে।
শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের বায়োমেট্রিক উপস্থিতি, প্রযুক্তি ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, সিসি ক্যামেরায় পুরো ক্যাম্পাস নজরদারিসহ বিদ্যালয়ের যাবতীয় হিসাব-নিকাশেও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। উপজেলার একমাত্র বিদ্যালয় হিসেবে এই বিদ্যালয়ে শতভাগ স্কাউটিং রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যখন ব্যাপকভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন করেনার কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে একদল উদ্যমী শিক্ষক শুরু করেন গ্রিন ক্যাম্পাস গড়ে তোলার কাজ। বিদ্যালয়ের চারপাশের কিছু জায়গা বাদে অন্য কোনো জায়গা না থাকায় বিদ্যালয়ের এক তলা ভবনের প্রায় চার হাজার বর্গফুটের ছাদে বাগান গড়ে তুলেন।
আম, জামরুল, আতাফল, আলুবোখরা, আপেল, রাম্বুটান, কদবেল, সফেদা, বেলি, বেল, কমলা, ত্বীনফল, জামরুল, তেঁতুল, মালবেরী, লটকন, সুইট লেমন, করমচা, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, পারসিমন, পেপিনোমেলন, জাম্বুরা, কমলা, মাল্টা, করছুল, কাঁঠাল লেবু, আমড়া, গোলাপ, গাদা, কসমস, হুরহুরিয়া, স্টার, রজনীগন্ধা, হাইড্রেনজিয়া, সিজিয়াম, বলকামিনী, পাতাবাহার, রঙ্গন, মাধবীলতা, জবা, টমেটো, জাম, বেগুন, শিম, বরবটি গাজর, ক্যাপসিকামসহ মোট ৭৫টি প্রজাতির প্রায় হাজারের ওপর উদ্ভিদের সমারোহ এখন এই ছাদ বাগানে।
এসব উদ্ভিদের মধ্যে দেশি-বিদেশিসহ অধিকাংশই রয়েছে বিপন্ন তালিকায়। দেশি-বিদেশি এসব উদ্ভিদ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন। ভবিষ্যতে এই বিদ্যালয় থেকেই উৎপাদিত বিভিন্ন উদ্ভিদের চারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা পুরো ক্যাম্পাসটিকেই সবুজে পরিণত করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ডিজিটাল গ্রিন ক্যাম্পাসে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পাঠদানে অংশ নেয়ার সময় যেন নির্মল বায়ু পেতে পারে। ছাদ বাগানের হাজারো উদ্ভিদ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার একটি বিষয় হবে। তারা ছোট বয়সেই এসব উদ্ভিদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠবে। আমরা গ্রাফটিং-এর মাধ্যমে নানা ধরনের উদ্ভিদের চারা নিজেরাই উৎপাদন করে আসছি, সে হিসেবে শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে শিক্ষার একটি সুযোগ পেয়ে নিজেরাই বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত হবে। মূলত আমাদের পুরো আয়োজনটা শিক্ষার্থীদের ঘিরেই।
গাজীপুর জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বলেন, জেলায় এ বিদ্যালয়টি একটি মডেল। বিভিন্ন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে গ্রিন ক্যাম্পাসে রূপান্তরিত করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকার পরও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে শিক্ষকরা মিলে সবুজ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমি বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়েছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।