কমল দাশ: ‘কষ্ট হচ্ছে আমার শহরটার জন্য। কিছুই ভালো লাগছে না। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডুবে গিয়েছিল প্রিয় শহর বান্দরবান। প্রায় সব বাসাতেই পানি উঠেছিল। আমার অফিসে, সাবস্টেশনেও পানি উঠেছিল। পানি নেমে যাওয়ার পরও জনজীবন স্বাভাবিক হয়নি। সর্বত্রই যেন বন্যার ক্ষত ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। শহরের প্রায় সব জায়গায় কাদা। বিভিন্ন সড়ক ও ভবনে বন্যার পানির সঙ্গে আসা পলি এখনো পরিষ্কার করা যায়নি।
সাবস্টেশনে পানির কারণে আর দোহাজারি ৩৩ কেভি সোর্সে ৪টি গাছ পড়ার কারণে ৩৩ কেভি লাইন ক্ষতিগ্রস্ত। অফিসের মানুষেরা বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গতরাত এবং আজ সারাদিনের পরিশ্রম শেষে বান্দরবান শহরের ৯০ ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা হয়েছে। বালাঘাটা, কালাঘাটা, স্বর্ণমন্দির এলাকা এখনও সচল সম্ভব হয়নি। কারণ যে ট্রান্সফর্মার থেকে উক্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সেখানে এখনও হাটুর উপরে কাদা। ট্রান্সফর্মারের ভেতর পানি ঢুকে যাবার আশঙ্কা আছে। সেক্ষেত্রে তেল সেন্ট্রিফিউজ করে চালু করতে হবে, তা না হলে ট্রান্সফরমার পার্মানেন্টলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শহরে লাইন চালু করার পর বান্দরবানের ডিসি মহোদয় এবং রিজিওন কমান্ডার মহোদয় বিদ্যুৎ অফিসে এসে আমাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। এখন বালাঘাটা এবং স্বর্ণমন্দিরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করার চেষ্টা চলছে। ক্যাসিংঘাটা নিচু এলাকা হওয়ায় ট্রান্সফর্মার পানির নিচে ছিল। পানি নেমে যাবার পর সাবষ্টেশনে একহাটু কাদা। জেনারেটর বসানো, পানির লাইন নেওয়া, কাজ করা ভীষণ কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। একহাটু কাদার মধ্যে চিফ স্যার, এসই স্যারসহ সবাই কাজ করে যাচ্ছি। বালাঘাটা-স্বর্নমন্দির চালু না করে যাচ্ছি না।
এই হচ্ছে ওয়াই জাংশন টু থানচি রাস্তার প্রথম পাহাড় ধসের ছবি। আমাদের কারিগরি দল লাইন চালু করতে গিয়ে এর বেশি আগাতে পারেনি। এছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি পোল পড়ে আছে। সেগুলো রিস্টোর করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। ইতোমধ্যেই আমরা ওয়াই জাংশন পর্যন্ত লাইন চালু করে চিম্বুক ক্যাম্প পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করে ফেলেছি। গাড়ি না যাওয়ার কারণে আমাদের মালামাল ও সরঞ্জাম নিয়ে যেতে পারছি না। ফলে থানচিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।
গত চার/পাঁচ দিন ধরে থানচিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করার জন্য চিম্বুকে আমার কারিগরি দল কাজ করছে। অমানুষিক পরিশ্রম করছে সবাই। সহকারী প্রকৌশলী দীপ্ত চক্রবর্তী আর উপসহকারী প্রকৌশলী নেপচুন খীসা খেয়ে না খেয়ে কাজ করে চলেছেন। আর আমাদের কারিগরি দলের কথা আর নাইবা বললাম। প্রথম দুইদিন তারা দুপুরে শুধু কেক-বিস্কুট খেয়ে থেকেছে। আশেপাশে খাবার দোকান ও রেস্টুরেন্ট সব কিছু বন্ধ। গতকাল অবশেষে নিজেরাই রান্না করে খেয়েছি। সামান্য কিছু কাজ শেষে আজ আমরা ট্রায়ালে যাব। আশা করছি, আজকালের মধ্যে থানচি আলোকিত করতে পারব। আমার লোকদের আপনাদের শুভ কামনায় রাখবেন। বান্দরবানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু করার চেষ্টা করছি।’
বন্যায় বিধ্বস্ত বান্দরবানের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এতক্ষণ আপনারা পড়ছিলেন বান্দরবান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আমির হোসেনের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা।
তিনি পেশায় একজন বিদ্যুৎ প্রকৌশলী হলেও ফটোগ্রাফি তার নেশা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছেন।
আমির হোসেন জুমবাংলাকে বলেন, ‘বান্দরবানে ৬ আগস্ট অতিবৃষ্টি শুরু হয়। ৭ আগস্ট থেকে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কে পানি উঠে জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পাহাড় ধসে গিয়ে রুমা ও থানচির সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সদরের ডিসি, এসপির কার্যালয়সহ বেশির ভাগ সরকারি–বেসরকারি কার্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ ও খাবার পানি সরবরাহ। এমন পরিস্থিতি এর আগে এই জেলায় কখনও হয়নি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।