সৈয়দ আবদাল আহমদ : প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস আবারো তার সম্পদ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন। চলতি বছরের ১৩ জুলাই তিনি ঘোষণা করেছেন, তার দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আরো দুই হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলার অনুদান দেবেন। ফাউন্ডেশনের বার্ষিক কার্যক্রমকে আরো বাড়াতে তিনি এ অনুদান দেন। এরপর আরো সম্পদ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় তিনি আর থাকতে চান না।
বিল গেটস বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। বিবিসির খবরে বলা হয়, বিল গেটস বলেছেন, সমাজে তার সম্পদগুলো দান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে বিল গেটস তার সব সম্পদ দান করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তার সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তার সম্পদমূল্য ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে জুলাই মাসে প্রতিশ্রুত দানের অর্থ চলে গেলে বিল গেটসের সম্পদ ১০০ কোটি বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়াবে।
বিল ও মেলিন্ডা গেটস ১৯৯৪ সাল থেকে দাতব্য কাজে জড়িত রয়েছেন। এখন থেকে ২২ বছর আগে ২০০০ সালে বিল গেটস ও তার স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস মিলে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বিশ্বের অন্যতম বড় দাতব্য সংস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বর্তমানে বিল ও মেলিন্ডার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও উভয়ের সম্মতিতে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম আগের মতোই চলছে। আরেক শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেট এ প্রতিষ্ঠানে আগে থাকলেও এখন নেই। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি ও চরম দারিদ্র্য হ্রাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার সুযোগ প্রসারিত করা, তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার, মহামারী মোকাবেলায় টিকা তৈরিতে অনুদান, জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবেলায় অর্থ সহযোগিতাসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম রয়েছে এই দাতব্য সংস্থাটির।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের আগের নাম ছিল উইলিয়াম এইচ ফাউন্ডেশন। ১৯৯৯ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে এক হাজার ৫২৫ কোটি মার্কিন ডলারের বৃত্তি দেয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য। ওই বৃত্তি শিক্ষা খাতে আমেরিকার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক অনুদান। ২০০০ সালে বিল গেটস ক্যামব্রিজ বৃত্তি চালু করেন। এই বৃত্তি বর্তমানে পৃথিবীর আর্থিক অনুদানের সর্ববৃহৎ ও সেরা শিক্ষাবৃত্তি। যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শতাধিক মেধাবী এই মেধাবৃত্তি পেয়ে থাকে। স্বাস্থ্য খাতে প্রতি বছর এই ফাউন্ডেশন পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করে থাকে। ১৯৯৯ সালে প্রাণঘাতী রোগের ভ্যাকসিন ও টিকা উন্নয়নে ৭৫ কোটি ডলার দান করা হয়। এভাবে প্রতি বছরই এমন দান চলতে থাকে। করোনা মহামারী মোকাবেলায় ভ্যাকসিন তৈরির জন্য গেটস ফাউন্ডেশন থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করা হয়েছে। কৃষির উন্নয়নেও এই ফাউন্ডেশন থেকে দান করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে এসেছিলেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস। তাদের দাতব্য ফাউন্ডেশনের দানকার্যক্রম বাংলাদেশেও রয়েছে। দুই দশকে ১৯ কোটি ডলারেরও বেশি অনুদান এসেছে বাংলাদেশে। এই অনুদানের বেশির ভাগ এসেছে আইসিডিডিআর,বিতে। শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটেও এসেছে অনুদান। দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি এবং নারী উন্নয়নকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রকল্পে এ দানের অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
বিবিসির খবরে আরো বলা হয়, বিল গেটস বলেছেন, আমি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সব সম্পদ দাতব্য ফাউন্ডেশনকে দেয়ার পরিকল্পনা করেছি। শীর্ষ ধনীর তালিকা থেকে আমি নিচে চলে যাব, ধনীর তালিকায় থাকব না। মানুষের দুঃখকষ্ট কমাতে ও জীবনকে উন্নত করতে যাতে তা প্রভাব ফেলে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্য ধনীরাও এতে এগিয়ে আসবেন। বিল গেটসের নতুন অনুদানের মধ্য দিয়ে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে সাত হাজার কোটি মার্কিন ডলার (৭০ বিলিয়ন)।
২০১৭ সালের ৬ জুন বিল গেটস তার মোট সম্পদের ৫ শতাংশ যার আর্থিক মূল্য ৪৬০ কোটি মার্কিন ডলার দান করেছিলেন। ওই দান তখন ছিল একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় অঙ্কের অর্থদান। উল্লেøখ্য, তিনি তখন ছয় কোটি ৪০ লাখ শেয়ার দান করেছিলেন।
ফোর্বসের তালিকায় বিল গেটস ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের এক নম্বরে বা শীর্ষ ধনী ছিলেন। এরপর আবার ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শীর্ষ ধনীর তালিকায় উঠে আসেন। ২০১৭ সালে শীর্ষ ধনীর তালিকায় নাম ওঠে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের। বর্তমানে বিল গেটস শীর্ষ ধনীর তালিকায় চতুর্থ নম্বরে। বেজোসও এক নম্বরে নেই। শীর্ষ ধনীর তালিকায় টেসলার শীর্ষ নির্বাহী ইলন মাস্কের নাম উঠেছে।
মাত্র ১০ শতাংশ ধনীর হাতে বিশ্বের ৭৬ শতাংশ সম্পদ
গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ৭৬ শতাংশ সম্পদ কুক্ষিগত রয়েছে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী মানুষের হাতে। মধ্যম আয়ের ৪০ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মোট বৈশ্বিক সম্পদের ২২ শতাংশ। আর নি¤œ আয়ের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে মাত্র ২ শতাংশ সম্পদ। বৈশ্বিক পুঁজির ক্ষেত্রেও শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর হাতেই বেশির ভাগ পুঁজি পুঞ্জীভূত রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই পুরো পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ ধনীদের হাতেই। প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের তৈরি ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি রিপোর্টারের মুখবন্ধ লিখেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জী ও এস্তার দুফলো।
দাতব্য সংস্থা অক্সফাম গত জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভা শুরুর আগে বৈশ্বিক বৈষম্যের ওপর এক রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ ১০ জন ধনীর সম্মিলিত সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠীতে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ২১ হাজার মানুষ। রিপোর্টটিতে আরো বলা হয়, করোনা মহামারী চলার সময় প্রায় প্রতিদিন একজন করে নতুন শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ার তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে লকডাউন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হ্রাস, বৈশ্বিক পর্যটন সঙ্কোচনের কারণে বিশ্বের ৯৯ শতাংশ মানুষ লোকসানে পড়েছে। এর ফলে ১৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমায় নেমে গেছে।
ফোর্বসের রিয়েল টাইম বিলিয়নিয়ার ও ব্লুম্বার্গের প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী মানুষের প্রথমে রয়েছেন টেসলার সিইও ইলন মাস্ক। ২০২১ সালে তার মোট সম্পদের সাথে ১২১ বিলিয়ন ডলার নতুন যোগ করেছেন। তার সম্পদ ৩০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। পাঁচ বিলিয়ন ডলার নতুন যোগ হয়ে তার সম্পদের পরিমাণ ১৯৫ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থানে আছেন বিলাসদ্রব্য এলভিএমএইচের সিইও আর্নস্ট হল। তার সম্পদ রয়েছে ১৭৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে ৬১ বিলিয়ন ডলার নতুন যোগ হয়েছে। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন মাইক্রোসফটের বিল গেটস। ২০২১ সালে সাত বিলিয়ন ডলার যোগ করে তার সম্পদ ১১৮ বিলিয়ন ডলার। গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ১৩০ বিলিয়ন ডলার নেট মূল্যের সাথে ২০২১ সালে ৪৭ বিলিয়ন ডলার যোগ করেছেন। তিনি বিশ্বের পঞ্চম ধনী। ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ ১২৮ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে আছেন ষষ্ঠ অবস্থানে। তিনি ২০২১ সালে ২৪ বিলিয়ন ডলার নতুন সম্পদ যোগ করেছেন।
সপ্তম স্থানে আছেন গুগলের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই বিন ১২৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদের সাথে ২০২১ সালে যোগ করেছেন ৪৫ বিলিয়ন ডলার। অষ্টম স্থানে আছেন মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও এবং এনবিএর লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্সের মালিক স্টিভ বালমার। ২০২১ সালে ৪১ বিলিয়ন ডলার নতুন যোগ করে তার মোট সম্পদ হয়েছে ১২২ বিলিয়ন ডলার। ফ্লউড মেজর ওরাকলের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন ২০২১ সালে নতুন ২৯ বিলিয়ন যোগ করে ১০৯ বিলিয়ন ডলারের মালিক। তিনি আছেন নবম অবস্থানে। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেট ২০২১ সালে ২১ বিলিয়ন ডলার নতুন যোগ করে নেট সম্পদ ১০৯ বিলিয়ন ডলার করেছেন। তিনি দশম স্থানে। এই ১০ জন ধনী এক বছরে প্রায় ৪০২.১৭ বিলিয়ন ডলার সম্পদ বাড়িয়েছেন বা যোগ করেছেন। ২০২০ সালে এশিয়া ও ভারতের এক নম্বর ধনী মুকেশ আম্বানি শীর্ষ দশের তালিকায় ছিলেন। তার সম্পদ ছিল ছয় হাজার ৪৫০ কোটি ডলারের।
এই শীর্ষ ১০ ধনীর একজন হচ্ছেন বিল গেটস। দানের ক্ষেত্রে তিনি কয়েকবারই নজির স্থাপন করেছেন। নতুন ঘোষণা তিনি দিয়েছেন সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার সব সম্পদ দান করে দেবেন। বাকি ৯ জন শীর্ষ ধনী যদি একই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেন তাহলে পৃথিবীতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে ও ভারসাম্য ফিরে আসবে। ১০ জন বড় ধনী এ দৃষ্টান্ত দেখালে ১০০ ধনীর শীর্ষ তালিকার বাকি ৯০ জনও দানে এগিয়ে আসবেন। তাহলে সম্পদ আর পুঞ্জীভূত বা কুক্ষিগত থাকবে না। ধনী-গরিবের বৈষম্য কমে আসবে।
ইসলাম, দান ও জাকাতব্যবস্থা
ইসলামে দান সাদকার গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআন ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর হাদিসে দান, সাদকাহ ও জাকাতের কথা বারবার বলা হয়েছে। বুখারি ও মুসলিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সর্বোত্তম দান হচ্ছে নিজের শ্রম দিয়ে অর্জিত অর্থ থেকে সাধ্যমতো দান করা।’
যারা আল্লøাহর পথে দান সাদকাহ করেন, তাদের এ দান-সাদকাহর জন্য মহান আল্লøাহ দানকারীকে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সওয়াব দিয়ে থাকেন। সূরা বাকারার ২৬১ নম্বর আয়াতে আল্লøাহ বলেন, ‘যারা আল্লøাহর পথে তাদের সম্পদ দান করে, তাদের উপমা হচ্ছে একটি বীজের মতো, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে ১০০ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’
আমাদের প্রিয় নবীজী সা: দানশীলতার এক অনুপম আদর্শ। তিনি বলে গেছেন, তোমার কাছে যা আছে তা থেকেই দান করো। ইসলামে দান-সাদকাহ তিন প্রকারের। ফরজ দান-সাদকা হলো জাকাত। ওয়াজিব দান সাদকাহ হলো সাদকায়ে ফিতর ও নফল দান-সাদকাহ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ফকির-মিসকিন ও আত্মীয়-স্বজনকে দেয়া অনাবশ্যক দান।
জাকাত ইসলামের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ। তাওহিদ ও সালাতের পরই এর স্থান, অর্থাৎ ইসলামের তৃতীয় রুকন। আল কুরআনের বহু আয়াতে সালাতের সাথে জাকাতের কথা বলা হয়েছে। ‘নিসাব’ পরিমাণ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ কোনো ব্যক্তির মালিকানায় থাকলে নির্দিষ্ট সময় পর ওই সম্পদের একটি অংশ শরিয়াহ নির্ধারিত আট খাতে বিতরণ ও বণ্টন করাকেই জাকাত বলে। নির্দিষ্ট সময় হলো এক চান্দ্রবছর। জাকাত পরিশোধ প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য অবশ্যই কর্তব্য। তাই একজন মুসলিমের জীবনে এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সম্পাদন করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে আখিরাতে কঠিন আজাবের সম্মুখীন হতে হবে। এ ব্যাপারে কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি রয়েছে। এ ছাড়া জাকাতের আর্থসামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহর নির্দেশিত আটটি খাতে জাকাত বিতরণ করা হলে সমাজে আয় বৈষম্য হ্রাস পাবে ও অসহায় মানবতা কল্যাণ লাভ করবে।
জাকাত দয়া-দাক্ষিণ্য বা করুণা নয়। ধনী ব্যক্তির সম্পদে সমাজের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের হক বা অধিকার আছে তার পাওনা, যা তাদের দিতেই হবে। কুরআন কারিমে ৪০ স্থানে ‘ব্যয়’ করার বিষয়ে বিভিন্ন প্রকার নির্দেশনা এসেছে। এ ছাড়া আরো অনেক স্থানে খাদ্য প্রদান, সাহায্য ইত্যাদি নামে জাকাত দেয়ার নির্দেশনা এসেছে। এ থেকে বোঝা যায়, একজন সত্যিকার মুসলিম তথা মুমিনের জীবনের অন্যতম ফরজ, ইহকালীন ও পরকালীন সব সফলতার অন্যতম উৎস জাকাত।
জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তির অন্তর কলুষমুক্ত হয়। সম্পদের লোভ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তবে এর নিয়ন্ত্রণই মানুষের কল্যাণ। জাকাত মানুষের কাছে এ সুযোগ এনে দেয়। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনীরা নিজেদের সম্পদে বিদ্যমান থাকা অপরের ‘হক’ বা অধিকার হস্তান্তর করে। ফলে একদিকে তাদের সম্পদ পবিত্র হয় অপর দিকে, মনও কৃপণতার কলুষ থেকে পবিত্র হয়।
জাকাতের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বর্তমান পৃথিবীর অশান্তির অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য। আবার সম্পদের স্বল্পতা দারিদ্র্যের কারণ নয়। দারিদ্র্যের মূল কারণ হলো সমাজের কিছু শ্রেণীর মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হওয়া। আগেই উল্লেøখ করেছি, শীর্ষ ১০ ধনীর হাতে বিশ্বের মোট সম্পদের অর্ধেকের বেশি রয়েছে। সম্পদের জাকাত আদায় করতে হয় মাত্র ২.৫ শতাংশ বা ভাগ। জাকাতব্যবস্থা কতটা উপকারী সোনালি যুগের ইসলামী রাষ্ট্রের উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। জাকাত দেয়ার ফলে এমন অবস্থা হয়েছিলে যে, সমাজে জাকাত নেয়ার মতো লোক ছিল না। অর্থাৎ আয় বৈষম্য ও বণ্টন বৈষম্য দূর করে জাকাত সমাজে বা দেশে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে। ফলে দারিদ্র্য দূর হয়।
তাই যার যেমন সামর্থ্য, সে অনুযায়ী দান করার সংস্কৃতি গড়ে উঠুক সমাজের কল্যাণের জন্যই। বিশে^র দেশগুলো ইসলামের জাকাতব্যবস্থা চালু করলে বর্তমান অর্থনৈতিক দৈন্যদশা থাকত না।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
abdal62@ gmail.com
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।