যেভাবে সময় কাটে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ‘তিনি একজন বাজে মানুষ। আপনি ভাবতে পারেন এমন প্রায় প্রতিটি খারাপ কাজই তিনি করেছেন।’ নিজের বাবা সম্পর্কে এমন মূল্যায়ন ইলন মাস্কের। নামই তার খ্যাতি হয়ে গেছে। এই মন্তব্য পড়ে হয়তো মনে হতে পারে যে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক খুবই খোলামেলা এবং আড্ডাবাজ বা ভিন্ন ধরনের মানুষ। কিন্তু তার চলাফেরা সম্পর্কে জানলে বোঝা যায় যে তার জীবন কতোটা শৃঙ্খলাপূর্ণ। জীবনটা এতোই শৃঙ্খল যে তার নামেই হয়েছে ‘ইলন টাইম’।
বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্ব কিংবা কর্পোরেট জগত- যেটাই বলেন, ইলন মাস্কের মতো প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সত্যিই মুশকিল। তিনি শুধু সফল ব্যবসায়ীই নন, বরং হালের তরুণদের আইকনে পরিণত হয়েছেন। অনেকে হয়তো টেসলা ও স্পেসএক্সের কল্যাণে ইলন মাস্কের নাম জানেন। কিন্তু টেসলা এবং স্পেসএক্সের বাইরেও তার আরও অসাধারণ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। বলা হয় ইলন মাস্ক বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সিইওদের একজন। দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত এই প্রযুক্তি মোগল এমনিতেই আজ শীর্ষ ধনীর খেতাব পাননি। শীর্ষে উঠতে জীবনকে কঠোর নিয়মানুবর্তীর মধ্যে রেখেছেন। এখনো তার ব্যতিক্রম নয়।
এটা বলা খুবই ন্যায্য হবে যে ইলন মাস্ক একটি আক্রমণাত্মক আশাবাদী সময়সূচির জন্য কিছু উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। একে ‘ইলন টাইম’ বলা হয় যা হয়তো অনেকের কাছে কল্পনাও করা যায় না। যাই হোক, তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা যিনি বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি তৈরির জন্য দায়ী।
সময় কাটে যেভাবে
ইলন মাস্ক তার কোম্পানি টেসলা, স্পেসএক্স, দ্য বোরিং কোম্পানি এবং নিউরালিংক চালানোর জন্য সময় ভাগ করে নেন। তার ২৪ ঘণ্টা ‘ফাইভ মিনিটস রুল’ এ বিভক্ত। তিনি এতোটা কঠোর পরিশ্রম করেন যে অনেক সময় খাবার খেতেও ভুলে যান। ইলন সাস্কের মতো বিল গেটসও কর্মদিবসের সময় নির্ধারণের এই কঠোর পদ্ধতিকে কাজে লাগানোর জন্য পরিচিত। এমনও জানা যায়, ইলন মাস্ক পণ্য উৎপাদনের ফ্লোরে কিংবা কনফারেন্স কক্ষে রাত কাটিয়েছেন। তার এই পরিশ্রমটা কেবলই উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। এবার জানা যাক, সত্যিকারের টনি স্টার্ক খ্যাত ইলন মাস্কের সময় কাটে কিভাবে।
সকালবেলার মাস্ক
শীর্ষ ধনী মাস্ক সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। রাতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় ঘণ্টা ঘুমান। ঘুম কম-বেশি হলে সারাদিনের কাজেও সেটা প্রভাব ফেলে। ঘুম থেকে উঠে গোসলের মাধ্যমে সবকিছু শুরু করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, গোসল করাটা তার কাছে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঝর্ণা ছাড়া তার মাথার অংশটা ঠিকভাবে ভেজে না। সারাদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেকে প্রস্তুত করতে ঝরনা ছেড়ে গোসল করাটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর পোশাক পরেন এবং এক কাপ কফি খেতে পছন্দ করেন। তিনি প্রায়ই সকালের নাস্তা করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে একটি অমলেট খেয়েই তার দিন শুরু হয়।
নাস্তা করতে না পারা ইলন মাস্ক বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যান এবং পরে গাড়িতে করে কাজে চলে যান। মাস্ক দাবি করেন যে তিনি নিয়মিত কর্মঘন্টার সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০-ঘণ্টা কাজ করেন। তার বেশিরভাগ সময় যায় ডিজাইন এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজে।
মাস্ক ৯০ শতাংশ সময় ব্যয় করেন স্পেসএক্সে। টেসলায় তার দিনের ৬০ শতাংশ সময় যায়। তিনি এতোটা ব্যস্ত থাকেন যে ই-মেইল দেখা হয় না তার। ফোন ধরতেও ভুলে যান। সোমবার এবং শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেস বা বোকা চিকার স্পেসএক্সে এবং সপ্তাহের বাকি সময় সান ফ্রান্সিসকোতে টেসলা বা টুইটারে কাটান তিনি।
বিকেলটা কাটে যেভাবে
যেহেতু তিনি এত ব্যস্ত এবং তার নিজের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, তিনি তার পুষ্টির প্রতি যতটা মনোযোগ দেওয়া উচিত ততটা দেন না। তবে তিনি বলেছেন যে গ্রিসের ছুটিতে তার অপ্রস্তুত ছবি প্রকাশিত হওয়ার পরে তিনি তার খাদ্য এবং ব্যায়ামের ব্যবস্থা উন্নত করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বৈঠকের মধ্যেই দুপুরের খাবার খাওয়ার কাজটা সেরে নেন।
কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার বিষয়ে তার খ্যাতি রয়েছে। তিনি কর্মচারীদেরও সেইভাবে দক্ষ করে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। তার বিকেলটা কাটে বৈঠক এবং ডিজাইনের কাজে। যদি তিনি মনে করেন যে তার সময় নষ্ট হচ্ছে, তখন তিনি আকস্মিকভাবেই বৈঠক ছেড়ে চলে যান। অপ্রয়োজনীয় বৈঠক তার কাছে একেবারেই পছন্দ নয়। যে বৈঠকে কোনো লাভ আসবে না সেই বৈঠককে মাস্ক সবসময় নিরুৎসাহিত করেন। তিনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ পছন্দ করেন।
সন্ধ্যাটা যেমন যায় মাস্কের
২০১৮ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রোফাইলে মাস্ক বলেছিল যে তিনি নিয়মিত সপ্তাহে ১২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেছেন। তার সন্তান এক্স, এই এবং এ-১২ কে (এটা মাস্কের সন্তানদের নাম) আরও ভাল সময় দিতে সময়কে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সারাদিন ব্যস্ত থাকায় ইলন মাস্ক রাতে ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন। তিনি তার ক্ষুধা মেটানোর জন্য ব্যবসায়ীক নৈশভোজকেই বেছে নেন এবং তিনি খুব বেশি খাওয়ার কথা স্বীকার করেন। ডায়েট কোকের তার ভালবাসা রয়েছে। মাস্ক যখন খান, তখন সে ফ্রেঞ্চ খাবার এবং বারবিকিউ উপভোগ করেন। তিনি সময়ে সময়ে হুইস্কি বা ওয়াইন উপভোগ করেন। তিনি প্রতি রাতে প্রায় ১০ টায় কাজ থেকে বাসায় ফিরে আসেন। বিছানায় যাওয়ার আগে ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটান। তারপরে পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা পড়তে এবং অ্যানিমে (ইভাঞ্জেলিয়ন এবং ডেথ নোট) দেখতে ব্যয় করেন। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে রাত ১টায় ঘুমাতে যান তিনি। রাত একটায় ঘুমালে সকাল সাতটা বা সাড়ে সাতটায় ওঠেন। আর তিনটায় ঘুমালে সকাল ৯ টা বা সাড়ে ৯ টায় ওঠেন। এই নিয়মানুবর্তিতার কারণেই শিক্ষা জীবন শেষ না করা ইলন মাস্ক মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার।
যে কারণে নিজের বাড়ি ছেড়ে পালালেন ‘কাঁচা বাদাম’-এর ভুবন বাদ্যকর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।