জুমবাংলা ডেস্ক : সমৃদ্ধিতে ভারত-পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেলেও স্বাধীনতার সূচকে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দুটি সংস্থা। স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৪ দেশের মধ্যে ১৪১তম। আর সমৃদ্ধি সূচকে অবস্থান ৯৯তম।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস, ইউনাইটেড স্টেটস্ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আটলান্টিক কাউন্সিলের নতুন বৈশ্বিক স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি প্রতিবেদন (গ্লোবাল ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি রিপোর্ট) এর ফলাফল জানাতে সমৃদ্ধি ও সুশাসন সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব দেশ শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থাসহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করে, তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি করে স্বাগত জানায়। এসব দেশ কম স্বাধীনতা থাকা দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি বিদেশি বিনিয়োগ পায়। সামগ্রিকভাবে স্বাধীনতা সূচক সুপারিশ করে যে, স্বাধীনতার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মূল অনুষঙ্গ। আবার সুশাসন বৃহত্তর সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্বাধীনতা সূচকে অন্তর্ভুক্ত আছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আইনি উপাদান। সেই সূচকে দীর্ঘ ২২বছর ধরে বাংলাদেশের অবনতি হচ্ছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে সমৃদ্ধির দিক থেকে ছাড়িয়ে গেলেও স্বাধীনতা সূচকে দেশগুলো থেকে অনেকটা পিছিয়ে ছিল।
আটলান্টিক কাউন্সিলের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি কেন্দ্রের ‘ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি) শীর্ষক প্রতিবেদনে ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসচ্ছল’ এবং স্বাধীনতা সূচকে ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরাধীন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
২০২৩ সালের জন্য করা এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৪টি দেশের মধ্যে ৯৯তম। তালিকায় ভারতের অবস্থান ১৪৬তম এবং পাকিস্তানের অবস্থান ১৫০তম। কিন্তু স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম যেখানে ভারত ১০৪তম এবং পাকিস্তান ১১৩তম অবস্থানে রয়েছে।
সমৃদ্ধি সূচকের তালিকা করার জন্য স্বাস্থ্য, বৈষম্য, পরিবেশগত অবস্থা, সংখ্যালঘু অধিকার এবং শিক্ষাসহ মাথাপিছু জিডিপির মতো বিভিন্ন কারণ বিবেচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে স্বাধীনতা সূচকের তালিকা করার জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আইনি অবস্থার পরিমাপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারিতে হওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি কর্তৃত্ববাদী দলীয় ব্যবস্থার দিকে শক্তিশালী পরিবর্তন এসেছে। বিরোধী দলকে বয়কট করে সেটি পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ তার পনেরো বছরের শাসনকাল টিকিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকার প্রধান হতে যাচ্ছেন। এটি স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিলেও, কর্তৃত্ববাদী দলীয় ব্যবস্থাগুলো প্রায়ই বিভিন্ন ঝুঁকির মুখোমুখি হয় যা সুশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই ঝুঁকিগুলো কমানোর জন্য রাজনীতি, সরকার ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্কটির গবেষণায় দেখা গেছে, মৌলিক স্বাধীনতা জোরদার করলে সেটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে গতিশীল করে।
এসময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, প্রত্যেক দেশ দুর্নীতির মতো বিষয়ে এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষিত রাখার লড়াই করছে। কিন্তু মূল সমস্যাগুলো এড়িয়ে না গিয়ে বরং সমস্যা মেনে নেওয়া ও সক্রিয়ভাবে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করাই আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আটলান্টিক কাউন্সিল যে ১৬৪টি দেশকে তালিকাভুক্ত (স্বাধীনতা সূচকে) করেছে সেখানে ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরাধীন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত দেশগুলো ‘সমৃদ্ধশালী’ দেশ হিসেবে (সমৃদ্ধি সূচকে) তালিকাভুক্ত হয়নি। এটি থেকে বোঝা যায়, সমৃদ্ধশালী হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আইনি স্বাধীনতা বৃদ্ধি করতে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদনে স্বাধীনতার সূচক এবং সমৃদ্ধি সূচকের ওপর ভিত্তি করে গণতান্ত্রিক এবং শাসন সূচক ব্যবহার করে একটি জাতির অর্থনৈতিক অবস্থানের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
সমৃদ্ধি ও সুশাসন সম্মেলনে সরকার, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী, দাতা, একাডেমিয়ান এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আটলান্টিক কাউন্সিলের ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি সেন্টারের পরিচালক জোসেফ লেমোইন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন।
মূল উপস্থাপনায় লেমোইন বলেন, উপাত্ত বলছে, যেসব দেশে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে, সেসব দেশে অধিকতর সমৃদ্ধিও দেখা যায়। অন্যদিকে যেসব দেশে কম স্বাধীনতা রয়েছে, সেখানে কম সমৃদ্ধি থাকার প্রবণতা রয়েছে। তথ্যগুলো থেকে দেখা যায়, অধিক স্বাধীনতার দেশগুলো বেশি সমৃদ্ধি উপভোগ করে এবং কম স্বাধীনতার দেশগুলোর সমৃদ্ধি নিচের দিকে। একটি দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে উন্নত করে একটি শক্তিশালী আইনি পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি স্বাগত জানাতে পারে।
স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধি সূচকের মধ্যে দুটি আলাদা সূচক রয়েছে, যা বিশ্বের ১৬৪টি দেশের স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধির ধরণ অনুযায়ী ক্রম বা অবস্থান নির্ধারণ করেছে। স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বঞ্চিত’ ক্যাটাগরিতে। সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৪টি দেশের মধ্যে ৯৯তম এবং ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসমৃদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে বলে জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় গবেষণা বাড়ানো হবে : কৃষিমন্ত্রী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।