জুমবাংলা ডেস্ক : ব্যাংক ১ টাকা দিয়ে ১০ টাকার জমি নিতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইফতেখার রাফসান (রাফসান দ্য ছোট ভাই)।
মঙ্গলবার (১৪ মে) নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিওতে এ অভিযোগ করেন তিনি।
ভিডিও শুরুতে তিনি বলেন, আমি গতকাল ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখলাম আমি নাকি ২ কোটি টাকার একটা গাড়ি কিনেছি, আর আমার বাবার নাকি ৩ কোটি টাকার লোন। এখানে কিছু ভুল তথ্য আছে। আমার এই গাড়ির দাম ২ কোটি টাকার আশপাশেও না। এটা একটু চেক করে দেখেন, এটা অনেকেই জানে।
ইফতেখার রাফসান বলেন, হ্যাঁ আমার বাবার একটা কোম্পানি ছিল। ব্যাংকের সঙ্গে একটু সমস্যা হয়েছে। ব্যাংক তো আর চেহারা দেখে লোন দেয় না। মর্ডগেজ রেখে লোন দেয়। যেখানে আমরা একটা জমি দিছি। মনে করেন, জমির দাম দশ টাকা, লোন নিয়েছি এক টাকা। এখন ওই পার্টিটা চায় এক টাকা দিয়ে ১০ টাকার জমি নিতে।
এ সময় তিনি ব্যাংকের দিকে অভিযোগ তুলে বলেন, আমরা কত টাকা ফেরত দেব সেটা তো আমাদের জানাবে। না জানালে কীভাবে টাকা ফেরত দেব? কেউ তো আমাকে বলতে পারবেন না এটা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। আপনি তো ভাই কোর্ট না!
রাফসান বলেন, আমরা কি দেশ থেকে পালিয়ে গেছি? আমরা কি হাজার কোটি টাকা নিছি? না! আমরা দেশে আছি। যখন কোর্ট রায় দিবে এই পরিমাণ টাকা দিতে হবে, তখন আমরা দিয়ে দেব। তার আগে কারও অধিকার নেই এটা বলার।
এ সময় তিনি মামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাদের নামে আপনারা যেই পরিমাণ ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন এর কারণে আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।
সম্প্রতি কনটেন্ট থেকে আয় করার টাকায় মাকে অডি গাড়ি উপহার দেওয়ার দাবি করে নতুনভাবে আলোচনায় আসেন রাফসান দ্য ছোট ভাই। কিন্তু তার বাবা ও মা বিপুল অর্থের ঋণ পরিশোধ না করায় বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন সাইয়েদ আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি।
পোস্টের কমেন্টে তিনি রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের বাবা ও মায়ের ঋণ নেওয়ার, সম্পত্তি নিলাম হওয়ার এবং রিট পিটিশনের ডকুমেন্টও সংযুক্ত করেছেন। সাইয়েদ আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্টটি পাঠকের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘একটু অনুসন্ধান করে একটা আনএক্সপেক্টেড জিনিস জানতে পেলাম। ইউটিউবার রাফসান দ্য ছোট ভাই সেদিন দেখলাম তার মা-বাবাকে সারপ্রাইজ দিতে ২ কোটিরও বেশি দামের Audi Car গিফট করল। সেটা নিয়ে হুলস্থূল বেধে গেল। পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা। যাই হোক, আমার অবস্থানটা ক্লিয়ার করে রাখি শুরুতেই। রাফসান ২ কোটি কেন, সে যদি কোনো দুর্নীতি না করে ২০০ কোটি দিয়েও কাউকে কোনোকিছু গিফট করে, তাতে আমার কোনোই সমস্যা নাই। সে তার নিজের মতো করে এগিয়ে যাক, নিজের ড্রিমগুলো পূরণ করতে থাক, এটা দেখতে বরং ভালো লাগবে। আমার এই লেখার টার্গেট ভিন্ন এঙ্গেল থেকে।’
ধরেন, আপনার পরিবার এই মুহূর্তে একটা ব্যাংক থেকে সোয়া তিন কোটি টাকার ঋণখেলাপি। সেই টাকা আপনার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করছে না। ব্যাংকের লোন পেমেন্ট না করে ঝুলিয়ে রেখে অন্যান্য সব ক্ষেত্রে টাকা উড়ায়ে বেড়াচ্ছেন আপনি এবং সবাইকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন সেগুলো— কেমন লাগবে সেটা দেখতে?
‘Jack & Spencer Accessories Limited-এর নামে একটি গার্মেন্টস এক্সেসরিস কোম্পানি ট্রাস্ট ব্যাংকের মিলেনিয়াম করপোরেট শাখা থেকে ২.৫ কোটি টাকা লোন নিয়েছিল ২০১৬ সালে। সেই কোম্পানির শতভাগ মালিক রাফসানের বাবা এবং মা। তার বাবা মো. জাকারিয়া ওই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) এবং তার মা কাজী নুরুন্নেছা সেহেলি ওই কোম্পানির ডিরেক্টর।’
‘এখন পর্যন্ত ব্যাংকের একটা টাকাও লোন পরিশোধ করে নাই তারা। সেই লোন আজ অবধি ইন্টারেস্টসহ বেড়ে হয়েছে সোয়া তিন কোটি। ট্রাস্ট ব্যাংক ওই কোম্পানি এবং সেটার মালিক রাফসানের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করে। কোর্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তাদের কোর্টে আত্মসমর্পণ করার নোটিফিকেশন জারি করেছিল জাতীয় পত্রিকায়। পত্রিকার সেই নোটিফিকেশনের ছবিও আমি দেখেছি। এরপর অভিযুক্তরা সমর্পণ করে কোর্ট থেকে জামিন নেন।
লোনের এগেইনেস্টে যেসব সম্পদ মর্টগেজ রাখা ছিল ব্যাংকের কাছে, ব্যাংক ২০২২ সালে সেইগুলো নিলামে তুলে বিক্রি করারও প্রক্রিয়া গ্রহণ করে। সেই নিলাম বিজ্ঞপ্তিও জাতীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অনুসন্ধান করতে গিয়ে সেই কপিও দেখেছি আমি।’
‘পরবর্তীতে রাফসানের বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করে সেই নিলাম আটকানো হয়। এইজন্য ব্যাংক নিলাম থেকে সম্পদ বিক্রি করে টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। ব্যাংককে বারবার করে তার বাবা-মা কমিটমেন্ট দিয়েছে লোন পরিশোধের, কিন্তু আজ অবধি কোনো টাকা পরিশোধ করেনি। বর্তমানে এই লোনের টাকা আদায় করতে ঢাকার অর্থঋণ আদালতে মামলা বিচারাধীন। ২০১৬ সালে যেই লোন ছিল ২.৫ কোটি, বর্তমানে ইন্টারেস্টসহ সেই লোন দাঁড়িয়েছে ৩.১৫ কোটি। মানে আজ অবধি ৩.৫ কোটি টাকার ঋণখেলাপি হলো রাফসানের পরিবার।’
‘কেউ আবার প্রশ্ন তুলতে পারেন, রাফসানের বাবা-মা ঋণখেলাপি, এটা তাদের দায়। তাহলে রাফসান এ রকম লাক্সারিয়াস গাড়ি তার মা-বাবাকে গিফট করলে প্রবলেম কোথায়? কাগজে কলমে না হলেও অবশ্যই প্রবলেম আছে। রাফসান যখন তার মা-বাবাকে Audi Car গিফট করছে যার দাম ২ কোটিরও বেশি, এর মানে হলো তাদের পরিবারের হাতে টাকা আছে। শুধু ওই গাড়ি গিফট করাটাই না, রাফসান দেখলাম পরবর্তীতে মা দিবসে একটা ভিডিও বানিয়েছে। মাকে নিয়ে একটা সোনার শোরুমে গিয়ে ৫ লাখ টাকার সোনার গহনা গিফট করল সে। তার সাবস্ক্রাইবারদের বাইক, এসি, আইফোনের মতো দামি দামি গিফট গিভঅ্যাওয়ে করে সে। তাছাড়া তার লাইফস্টাইল খেয়াল করতে দেখবেন যথেষ্ট ঠাঁটবাট নিয়েই চলাফেরা করেন তিনি। এসব ঘটনা প্রমাণ করে তাদের পরিবারের হাতে টাকা আছে। টাকা থাকা সত্ত্বেও তারা খেলাপিঋণ পরিশোধ করছে না।’
‘জাস্ট চিন্তা করেন রাফসান কিন্তু এভাবেও ভাবতে পারত এই দুই কোটির সুপার লাক্সারিয়াস গাড়ি গিফট না করে চলাফেরার জন্য প্রয়োজনীয় সাধারণ গাড়ি কিনে ওই দুই কোটিখানেক টাকা দিয়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা যায় কীভাবে। অবশ্য সেখানে একটা সমস্যা ছিল তার। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার ভিডিওটা হয়তো পাবলিক করতে পারত না, যেভাবে অডি গাড়ি সারপ্রাইজের ভিডিওটা আপলোড করে মিলিয়ন ভিউ অর্জন করা যায়। এই ভিডিওটাও বেশি মানুষ দেখছে, সেখান থেকেও তার ইনকাম হচ্ছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।