জুমবাংলা ডেস্ক: মাদারীপুরের রাজৈরে ভালোবেসে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক নাবালিকা (১৭) ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পার্শ্ববর্তী আবু সাঈদ (২৩) নামে এক কলেজছাত্রকে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে তারা ৩ বার পালিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।
নাবালিকার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে প্রেমিককে কারাগারে প্রেরণ করে প্রেমিকাকে তার বাবার জিম্মায় দিয়েছে। বর্তমানে ১০দিন ধরে ওই কিশোরীকে তার বাবার বাড়িতে একটি ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজৈর উপজেলার খালিয়ার পালপাড়ায়। এ ঘটনা এলাকায় চাউর হলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল শেখের ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আবু সাইদ শেখের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এসএসসি পরীক্ষার্থী সনাতন ধর্মাবলম্বী এক নাবালিকার ৩-৪ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের টানে গত ৬ মাস আগে তারা দুজন পালিয়ে যায়।
পরে ওই মেয়ে গত বছরের ৪ নভেম্বর ফরিদপুর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে মসজিদে গিয়ে ইমামের কাছে হাজির হয়ে পবিত্র কালিমা পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। হিন্দু নাম পরিবর্তন করে ইসলামী নাম পপি আক্তার রাখে। ওই দিনই আরও একটি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তারা বিয়ে করে। এরপর থেকে তারা দুজনে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করতে থাকে।
এ ঘটনায় কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে রাজৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে রাজৈর থানা পুলিশ ৪ দিন পর তাদেরকে উদ্ধার করে কিশোরীকে পরিবারের কাছে দিয়ে আবু সাঈদকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। ওই ঘটনাটি পারিবারিক ও সামাজিক সমঝোতা হলে কিশোরীর বাবা আবু সাঈদকে জামিনে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করেন। এরপর কিশোরীর বাবা তার মেয়েকে নিয়ে তার কর্মস্থল সিলেট নিয়ে যায়।
কিন্তু আবু সাঈদ খোঁজ খবর নিয়ে সিলেট থেকে ওই কিশোরীকে নিয়ে আবার পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি সিলেট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পালিয়ে যাওয়ার প্রায় ১ মাস পর ঢাকার আশুলিয়া থেকে পুলিশ তাদেরকে আটক করে নিয়ে আসে। কিশোরীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তাকে পরিবারের হাতে এবং আবু সাঈদকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। বর্তমানে আবু সাঈদ জেল হাজতেই রয়েছে।
এরই মধ্যে আবু সাঈদের স্বজনরা কৌশলে কিশোরীকে নিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার রাজেশ্বরদী গ্রামে আবু সাঈদের বোনের বাড়িতে রাখে এবং স্থানীয় একটি মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়। কিশোরীর পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেয়। বাড়িতে আনার পর ১০ দিন ধরে তাকে একটি ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। আটকে রেখে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কিশোরীর মা জানান, মান-সম্মানের ভয়ে আমরা মেয়েকে শাসনে রাখি। এ ঘটনায় সমাজ আমাদের এক ঘরে করে রেখেছে। তাছাড়া আবু সাঈদের পরিবারের লোকজন সব সময় আমাদের হুমকি দিয়ে আসছে। লজ্জায় মুখ দেখাতে পারিনা।
আবু সাঈদের বাবা আবদুল জলিল শেখ বলেন, ওই মেয়েকে মুসলিম বানিয়ে আমার ছেলে বিয়ে করেছে । আমার ছেলের মুক্তি চাই এবং যাতে নিরাপদে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করা দরকার।
নাবালিকা জানায়, আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সাইদকে বিয়ে করেছি। আমি বাড়ি থেকে তিনবার পালিয়েছি। তাই আমার বাবা মা আমাকে ঘরে আটকিয়ে রেখেছে।
রাজৈর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কনা বলেন, আমরা খোঁজখবর নিয়েছি। নাবালিকা তার বাবা, মার কাছে নিরাপদে আছে। যদি ওই নাবালিকা নির্যাতনের কোনো অভিযোগ করে তাহলে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি শুনে মঙ্গলবার রাতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা কবীর ও বুধবার সকালে সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ফজলুল রহমান ছলাকারকে ওই নাবালিকার বাড়িতে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে ওই নাবালিকা বলেছে আমি আমার তার বাব-মার কাছেই ভাল আছি এবং নিরাপদে আছি। এর পরে যদি ওই নাবালিকা তার বাবা-মার কাছে নিরাপদ বোধ না করে তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।