মোঃ সজল আলী, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজারের এক কোনায় একটি ঘর নিয়ে গত ২০ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছেন গিয়াস উদ্দিন ভুইয়া নামের এক ভুয়া ডাক্তার। পল্লী চিকিৎসক হয়েও এলাকায় শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেশ পরিচিত তিনি। প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ১০০ জন রোগী দেখেন তার চেম্বারে। যার বেশির ভাগই শিশু। প্রত রোগীর কাছ থেকে ভিজিট নেন একশত টাকা।
জানা যায়, গত (১৫ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা সিকদারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নয়ন মিয়ার ছেলে শাহজাহানের (৩৫) বুকের ব্যথা নিয়ে তার স্ত্রী এই পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসলে তিনি তিনটি ইনজেকশন দিলে শাহজাহানের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যায়। পরবর্তীতে গিয়াস ডাক্তার তাদেরকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। ঘর থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষ পরই শাহজাহানের মৃত্যু হয় বলে জানান তার পরিবার।
নিহত শাহজাহানের বড় ভাই মজনু জানান, আমার ছোট ভাই ঢাকায় কাজ করতো। ঢাকায় থেকে বাড়ি আসার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। অস্থির আর বুকে ব্যাথা। নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। বমিও করে। পরে ঝিটকার গিয়াস ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তারসাব তিনটা ইনজেকশন দেয়। তারপরেই শাহজাহান আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপর শাহজাহানের স্ত্রী তাকে ঝিটকার আবির মেডিকেলে নিয়ে যায়। অবস্থা বেশি খারাপ হলে সেখান থেকে মুন্নু মেডিকেলে পাঠায়। সেখানে শাহাজাহান মারা গেছে।
মজনু আরো জানায়, মুন্নু মেডিকেল থেকে বলছে ইনজেশনটার কারণে শাহজাহানের বেশি ক্ষতি হইছে।
পল্লী চিকিৎসক গিয়াস উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি পল্লী চিকিৎসা সংক্রান্ত সাধারন একটি কোর্স করেছি এবং এখানে রোগী দেখছি প্রায় ২০ বছর ধরে। গত মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) শাহজাহান নামের এক রোগী ব্যথা নিয়ে আমার কাছে আসলে আমি মনে করেছি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা। তাই মানবতার খাতিরে আমি চিকিৎসা দিয়েছি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গিয়াসউদ্দিন পল্লী চিকিৎসক হলেও এলাকায় তার শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেশ নাম। এলাকার সবাই তাকে শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবেই চেনে। গত ২০ বছর ধরে ঝিটকা বাজারে একটি বিশাল আকারের টিনের ঘর নিয়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ জন রোগী দেখেন তিনি।কোন ঝামেলা হলে বিষয়টি দেখাশোনা করেন ঝিটকা বাজার কমিটির সভাপতি বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া ও বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেন্টু মোল্লা।
ঝিটকা সিকদারপাড়া এলাকার মাতাব্বর সোহরাব হোসেন জানান, ঝিটকা বাজার কমিটির মাধ্যমে নিহত শাহজাহানের পরিবারকে ষাট হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা হয়েছে।
হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, আমি গিয়াস উদ্দিন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনটা দেখেছি। প্রেসক্রিপশনে যেসব ইনজেকশনের নাম রয়েছে ওই ইনজেকশনে কোন মানুষের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।নিহতের পরিবারের লোকজন আবেগপ্রবণ হয়ে ইনজেকশনের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছে। গিয়াস উদ্দিন ভূয়া ডাক্তার কি’না আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাইনি। গিয়াস উদ্দিনের ব্যাপারে খোজ খবর নিয়ে ভূয়া ডাক্তার প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।