লাইফস্টাইল ডেস্ক : সুদীর্ঘকাল ধরে খাদ্যের পাশাপাশি ওষুধের বিকল্প হিসেবে মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিনিয়ত মধু খেয়ে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, কিন্তু তাদের অনেকেই হয়তো মধুর বহুমাত্রিক উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি জানেন না।
বিশ্বজুড়ে অনেকের প্রিয় খাদ্য মধুর ভালো-মন্দ ও সেটি খাওয়ার নিয়ম তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মধুকে প্রায়ই চিনির বিকল্প হিসেবে বাজারজাত করা হয়। মূলত বহুবিধ শারীরিক উপকারিতা ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এমনটি করা হয়ে থাকে।
কেউ কেউ মধুকে মিষ্টির সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বিকল্প হিসেবে দেখেন। বিপরীতে কেউ কেউ একে উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার মনে করেন।
মধুর উপকারিতা
মধুর পুষ্টি নির্ভর করে ধরনের ওপর। সাধারণত এক টেবিল চামচ (২১ গ্রাম) মধুতে ৬৪ ক্যালোরি ও ১৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাকে। এর বাইরে সামান্য ফ্যাট, ফাইবার ও প্রোটিন থাকতে পারে এতে।
বেশ কিছু অনুপুষ্টি বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টও সামান্য পরিমাণে থাকে মধুতে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক।
উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ভালো মানের মধুতে ফেনোলিক অ্যাসিড ও ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা সুস্বাস্থ্যে সহায়ক হতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
হৃৎপিণ্ডের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে
চিনির পরিবর্তে উচ্চমানের মধু খাওয়ার ফলে হৃৎপিণ্ডের নানামাত্রিক উপকার হতে পারে। এটি হৃদরোগের বেশ কিছু ঝুঁকি কমানোয় সহায়ক হতে পারে। ৩০ দিনের একটি গবেষণায় অংশ নেয়া ৫৫ জনের ওপর চিনি ও মধুর প্রভাব পরীক্ষা করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, মধু অংশগ্রহণকারীদের ‘ক্ষতিকর’ এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করেছে। অন্যদিকে ‘ভালো’ কোলেস্টেরল এইচডিএল বাড়াতে সহায়তা করেছে মধু।
ক্ষত নিরাময়
আয়ুর্বেদের মতো প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী ক্ষত নিরাময়ে ত্বকে সরাসরি মধু ব্যবহার করা হতো। মধুর ব্যাকটেরিয়ারোধী উপাদান এবং সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বৃদ্ধি রোধে এর সক্ষমতার কারণে এমনটি করা হতো।
পরিশোধিত চিনির চেয়ে ভালো
উচ্চমাত্রায় চিনি ও ক্যালোরি থাকার পরও পরিশোধিত চিনির চেয়ে ভালো বিকল্প মধু। পরিশোধিত চিনিতে পুষ্টির উপাদান যেখানে প্রায় শূন্যের কোঠায়, মধু সেখানে ফেনোলিক অ্যাসিড ও ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৪৮ জনের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, মধু রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ালেও চিনির মতো বৃদ্ধি করে না।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পরিশোধিত চিনির চেয়ে ভালো বিকল্প হলেও মধু এমন পরিমাণে খাওয়া উচিত যাতে করে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। খাদ্যটির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিচে দেওয়া হলো।
উচ্চমাত্রায় চিনি ও ক্যালোরি থাকায় ওজন কমানোর অন্য ব্যবস্থা না নিলে মধু মুটিয়ে যাওয়ায় ভূমিকা রাখতে পারে। মধুতে উচ্চমাত্রার চিনি (যেটি দ্রুত হজম হয়) রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়াতে পারে, যা ক্ষুধা বাড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদে ওজন বাড়ানোয় প্রভাব রাখতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বাড়তি চিনি ওজন বাড়া ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষণায় আরও বলা হয়, উচ্চমাত্রার চিনিযুক্ত খাবার স্থূলতা, প্রদাহ, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, লিভার ও হৃৎপিণ্ডে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অতিমাত্রায় চিনিযুক্ত খাবার বিষণ্নতা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, এমনকি কিছু ধরনের ক্যানসারেও ভূমিকা রাখতে পারে।
খাওয়ার নিয়ম
হাতের তালুতে নিয়ে চেটে খাওয়া ছাড়াও মধু বিভিন্নভাবে পান করা যায়। র আর্টিসান হানি নামের একটি ওয়েবসাইটে মধু খাওয়ার কিছু উপায়ের কথা জানানো হয়েছে।
জাউ বা দই
জাউজাতীয় খাবার কিংবা টকদইয়ে মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়। মধু মেশানোয় এ খাবারগুলো সুস্বাদু হয়।
পাউরুটি-মাখন
পাউরুটি ও মাখনের সঙ্গে মধু মিশিয়ে অনেকেই খেয়ে থাকেন। এতে খাবার দুটি আরও মুখরোচক হতে পারে।
সালাদ
সালাদেও অনেকে মধু খেয়ে থাকেন। তারা সবুজ সবজি ও বাদামের মতো ফলে মধু মেশান।
কেক
কেকে চিনির পরিবর্তে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে মধুর রং যত ধূসর হবে, স্বাদ তত ভালো হবে।
বাদাম
বাদামে মিশিয়ে মধু খেয়ে থাকেন অনেকে। বাদামের সঙ্গে মধুর মিশেলে জম্পেশ হতে পারে বিকেলের নাশতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।