যেখানে রক্তনালি আছে, সেখানেই ব্লক হবে। সেটি যদি হৃৎপিণ্ডে হয়, এর নাম হলো হার্ট অ্যাটাক। সেই রক্তনালির ব্লক যদি হয় মস্তিষ্কে, সেটির নাম স্ট্রোক। এটি যদি পায়ে হয়, আমরা বলি পায়ে অ্যাটাক। একিউট লিম্ব ইসকেমিয়া।
এটি যেকোনো জায়গায় হতে পারে। পায়ে অনেক রক্তনালি আছে। যাদের হার্টে হয়, তাদের পায়ে হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।
হাতে বা পায়ের রক্তনালিতে ব্লক হচ্ছে, সেটি বোঝার উপায় কী? এটি কাদের হচ্ছে?
আসলে ডাক্তাররা নতুন। তবে রোগটি আসলে অনেক আগে থেকেই রয়েছে। আগে থেকেই আপনি রাস্তাঘাটে অনেক লোককে দেখবেন, পা নেই বা হাঁটুর নিচে নেই। কী হয়েছে ? হঠাৎ করে পায়ে পচন ধরেছিল, কেটে ফেলেছে। এ রকম রোগী কিন্তু গ্রামেও রয়েছে। ঢাকা শহর থেকে শুরু করে সারা দেশেই রয়েছে। হঠাৎ করে হাতে-পায়ে পচন ধরছে। কেটে ফেলছে। এটিই আসলে রক্তনালির ব্লক।
উপসর্গ দুই ভাগে দেখা যায়। একটি হলো হঠাৎ করে উপসর্গ তৈরি হতে পারে। আরেকটি হলো ধীরে ধীরে। ধীরে ধীরে যে উপসর্গ তৈরি হয়, সেটি দেখা যায় দুভাবে আসে। একটি হলো যে তিনি প্রথমে হাঁটতে যাচ্ছেন, কোনো সমস্যা নেই। কিছুদূর হাঁটলেন, দেখা গেল এক কিলো হাঁটার পরে তাঁর হাঁটুর নিচে মাংসপেশিতে খিল ধরে ব্যথা হচ্ছে। ওই মুহূর্তে তিনি দাঁড়িয়ে যান। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে তাঁর ভালো লাগে। আবার তিনি হাঁটেন। এক পর্যায়ে দেখা যায় আধা কিলো হাঁটলেই ব্যথা হচ্ছে। একটি সময় আর হাঁটতেই পারছেন না। ঘরে বসেই ব্যথা হচ্ছে। কখনো কখনো দেখা যায় উল্টোটা। উনি ভালো আছেন, মাঝেমধ্যে একটু ব্যথা করে। হঠাৎ করে দেখা গেল তাঁর বুড়ো আঙুলে একটি ছোট ঘা হয়েছে।
অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে, ড্রেসিং করছে—এই ঘা আর ভালো হচ্ছে না। একটি সময় তিনি যখন চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন, শুনতে পাচ্ছেন তাঁর বার্জাজ ডিজিস হয়েছে। যদিও এই শব্দটি ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে ভুল প্রয়োগ করা হয়। এটি আসলে রক্তনালিতে ব্লক। যত কারণে রক্তনালিতে ব্লক হয়, তার একটি কারণ হলো বার্জাজ ডিজিস। নিরান্নবইটা কারণ যদি আমরা চিন্তা করি, সেটি হলো রক্তনালির গায়ে চর্বি জমে যাওয়া। তাই বার্জাজ ডিজিস বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল বলা হচ্ছে। আসলে আমরা উপসর্গের মধ্যে এটাই মূলত পাই, সে হাঁটতে গেলে ব্যথা, একটু বিশ্রাম নিচ্ছে, ভালো অনুভব করছে। রোগের শুরুটা আসলে হয় এভাবে।
হঠাৎ করে পায়ের রক্তনালিতে ব্লকের সমস্যার লক্ষণ জানেন?
পায়ের ব্লকের সমস্যার লক্ষণ দুভাবে প্রকাশ পায়। একটি প্রকাশ পায় ধীরে ধীরে। আরেকটি প্রকাশ পায় হঠাৎ করে। হঠাৎ করে যেগুলো হয়, সেগুলো বেশ মর্মান্তিক। কারো যদি হঠাৎ করে রক্তনালিতে ব্লক হয়, যে উপসর্গটা প্রথম প্রকাশ পায়, তার হঠাৎ করে হাতে কিংবা পায়ে তীব্র ব্যথা হয়। অসহ্য ব্যথা যাকে বলে। ব্যথানাশক ওষুধ সহজে কাজ করছে না। তখন তিনি হয়তো ইনজেকশন নিচ্ছেন, কেউ কেউ এক্স-রে করাচ্ছেন, কেউ কেউ এমআরআই করাচ্ছেন, ততক্ষণে দেরি হয়ে যাচ্ছে। একটি পর্যায় দেখা যাচ্ছে ব্যথা কমে যাচ্ছে, তবে হাঁটুর নিচে যে ব্যথা হচ্ছিল বা হাতে যে ব্যথা হচ্ছিল, সেটা ঠান্ডা হয়ে যায়। মানে পুরোপুরি অবশের দিকে চলে যায়। অনেকে ভুলে মনে করেন যে প্যারালাইসিস হয়ে গেছে।
তাই হঠাৎ করে যদি কারো হাতে বা পায়ে তীব্র ব্যথা হয় এবং দেখা যায় তার হাত বা পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, হাত দিয়ে যদি দেখা যায় পালস পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় তার হঠাৎ করে হাতের বা পায়ের রক্তনালি ব্লক হয়েছে।
নারীদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। তিনি ঠান্ডা হয়ে গেছেন। আঙুলগুলো হঠাৎ করে নীল হয়ে কালো হয়ে গেছে। ঠান্ডার কারণে তার আঙুলগুলো কালো হয়ে গেছে। নারী বা পুরুষদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঘাড়ের ভেতর অতিরিক্ত কশেরুকা থাকে। এই হাড়ের কারণে দেখা গেল তিনি একটি জিনিস তুলতে হাত তুলেছেন কিংবা তিনি কাপড় কাচছিলেন, হঠাৎ করে তার হাতে তীব্র ব্যথা। এখান থেকেই আসলে তার শুরু হয়। কারো হার্টে ভাল্ভে সমস্যা রয়েছে। হার্টের বিটটা ছন্দায়িত নয়। এরিদমিয়া বলি। তার ক্ষেত্রে হঠাৎ করে হার্টের মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে গেল, ওই জমাটবাঁধা রক্ত যদি পায়ের দিকে যায়, পায়ে ব্লক হবে, তাঁরা ঝুঁকিতে রয়েছেন। এগুলো হলো প্রচলিত উপসর্গ, যাদের হঠাৎ করে দেখা দেয়।
হাত ও পায়ের রক্তনালির ব্লকের চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?
যদি কারো হঠাৎ করে হাত বা পায়ের রক্তনালি ব্লক হয়ে যায়, তাদের হাতে আসলে সময় থাকে আট ঘণ্টা। মানে আট ঘণ্টার মধ্যে ওই হাতের বা পায়ের যে রক্তনালি ব্লক হয়ে গেছে, সেটি যদি ঠিক করে দেওয়া না হয়, তার হাত কিংবা পা হারানোর ভয় থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগীগুলোই আসলে হাত কিংবা পা হারান। এটি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
তাই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমরা বলব যে কারো যদি হাতে কিংবা পায়ে তীব্র ব্যথা হয়, আস্তে আস্তে পা ঠান্ডা হতে থাকে কিংবা তার পালসটা পাওয়া যাচ্ছে না এ রকম হয়, দ্রুত একজন ভাসকুলার সার্জনের কাছে পৌঁছালে, তার হাতকে সহজেই আমরা বাঁচাতে পারি। আমাদের জন্য এটি খুব সহজ একটি অস্ত্রোপচার। আমরা পালস দেখি, ওপরে ডুপ্লেক্স পরীক্ষা করি, যদি দেখা যায় যে হাতে কোনো সময় নেই। আর কোনো সময় অপচয় না করে আমরা সরাসরি অস্ত্রোপচারে চলে যাই।
ডা. সাকলায়েন রাসেল, সহকারী অধ্যাপক,ভাসকুলার সার্জারি বিভাগ, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।