মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা : বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু আছে সবই মহান আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। সব কিছু তাঁর আদেশে পরিচালিত হয়। সব কিছু তাঁর তাসবিহ জঁপে, যা সব ক্ষেত্রে মানুষ অনুভব করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত আসমান ও জমিন এবং এগুলোর অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই, যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা বুঝতে পার না; নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৪৪)
মহান আল্লাহর রহস্যময় সৃষ্টি পাথর, যা আমাদের দৈনন্দিন কাজে বহুল ব্যবহৃত জিনিস। এর মাধ্যমে যেমন তিনি পৃথিবীর বুকে বিশাল বিশাল মজবুত অট্টালিকা সৃষ্টি করেছেন, আবার এই মজবুত পাথরের বুক চিরেই তিনি মানুষের সুপেয় পানির ব্যবস্থাও করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন মুসা তাঁর জাতির জন্য পানি চাইলেন। আমি বললাম, আপনার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করুন। ফলে তা হতে বারোটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হলো। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানি গ্রহণের স্থান জেনে নিল। (বললাম) আল্লাহর দেওয়া জীবিকা থেকে তোমরা খাও, পান করো এবং জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িয়ো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৬০)
আবার পাথর দিয়েই তিনি জাহান্নামের আগুনকে উত্তপ্ত করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব যদি তোমরা তা করতে না পারো আর কখনই তা করতে পারবে না, তাহলে তোমরা সে আগুন থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে অবিশ্বাসীদের জন্য।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪)
দুনিয়ার মানুষের কাছে পাথর একটি জড়বস্তু মাত্র, যার কোনো বোধশক্তি নেই, বলার ক্ষমতা নেই, দেখা বা শোনার ক্ষমতা নেই। কিন্তু মহান আল্লাহ এই পাথরকে দিয়েই কথা বলিয়েছেন এবং শেষ যুগেও পাথর কথা বলবে বলে মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে।
আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে মক্কার কোনো এক প্রান্তের উদ্দেশ্যে বের হলাম। তিনি যেকোনো পাহাড় বা বৃক্ষের নিকট দিয়ে যেতেন, তারা তাঁকে ‘আস-সালামু আলাইকুম ইয়া রাসুলাল্লাহ’ বলে অভিবাদন জানাত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬২৬)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা এবং ইহুদি সমপ্রদায় পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হবে। অবশেষে পাথর বলবে, হে মুসলিম, এই যে আমার পেছনে ইহুদি লুকিয়ে আছে, এসো তুমি তাকে হত্যা করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭২২৭)
শুধু তা-ই নয়, মহানবী (সা.)-এর ভাষ্যমতো মহান আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টির মতো পাথরও আমাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডকে পর্যবেক্ষণ করে, আখিরাতে এই পাথরও আমাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে। আবদুর রহমান বিন আবু সাসাআহ থেকে বর্ণিত, আবু সাঈদ (রা.) আমাকে বলেছেন, যখন তুমি গ্রামে বা বন-জঙ্গলে থাকবে, তখন উচ্চৈঃস্বরে আজান দেবে। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, জিন, মানুষ, বৃক্ষলতা ও পাথর যে-ই এই আজান শুনবে, সে তাঁর জন্য (আখিরাতে) সাক্ষ্য দেবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭২৩)
সুবহানাল্লাহ, এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর অসংখ্য অগণিত সৃষ্টিকে আমাদের খেদমতে নিয়োজিত রেখেছেন। আমাদের উচিত প্রতিমুহূর্তে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। অন্যথায় এই সৃষ্টিগুলোই আমাদের বিপক্ষে সাক্ষী দেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।