সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: রমজান আলীর বিরুদ্ধে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের তিন কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন মানিকগঞ্জের দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাতজন স্বত্বাধিকারী।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চলতি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগকারী হলেন- মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসাইন কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুদেব সাহা, ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি বশীর রেজা, রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবলীগ নেতা আল রাফি, সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা সুভাষ সরকারের স্ত্রী প্রণতি সরকার ও আক্তার হোসেন।
এছাড়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধেও চুড়ান্ত বিল ছাড়ানোর কথা বলে ২০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই অভিযোগপত্রে।
এদিকে, পৌর মেয়র রমজান আলী উল্টো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় বিল আটকে রাখা হয়েছে। কোনো টাকা আত্মসাৎ করা হয়নি।
রমজান আলী আরও বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিল ছাড়ের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) প্রজেক্টের আওতায় গত ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল সড়ক উন্নয়নের দুটি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করেন মানিকগঞ্জ পৌরসভা। টেন্ডারে অংশ নিয়ে ১নং প্যাকেজে যৌথভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসাইন কনস্ট্রাকশন। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে একই বছরের ২ মে পৌরসভার তৎকালীন পৌর মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী কামরুল হুদার সঙ্গে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত বিল জমা দিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৪ কোটি ৫৪ লাখ, ৯৬ হাজার টাকা মঞ্জুর করেন।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর জামানত ও ম্যাচিং ফান্ডের টাকাসহ পাওনা চেয়ে আবেদন করলে পৌর কর্তৃপক্ষ নানাভাবে তালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন ২০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। বাধ্য হয়ে তারা বেল্লাল হোসেনকে তার রূপালী ব্যাংক মানিকগঞ্জ শাখার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু তার পরও তাদের বিল দেওয়া হয়নি।
এদিকে ভুক্তভোগী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন বিএমডিএফ প্রজেক্টের নামে মানিকগঞ্জ জনতা ব্যাংকে যে হিসাব খোলা হয়েছে, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে পৌর মেয়র রমজান আলী অপর এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে পৃথক দুটি চেকের মাধ্যমে এক কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন।
শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড টাকা নির্ধারিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বাইরে কাউকে প্রদান করা যাবেন না। শর্ত ভেঙে পৌর মেয়র রমজান আলী হিসাবরক্ষক আব্দুল আজিজের সহায়তায় মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসাইন কনস্ট্রাকশন পাওনা টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে ব্যাংক হিসাব থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করেছেন।
শহিদুল ইসলাম পুলক আরও অভিযোগ করেন, বর্তমান পৌর মেয়র রমজান আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে ২০০৭ সালে পৃথক চারটি মামলা হয়েছে ও আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল হয়েছে। সব মামলায় মেয়র রমজান আলীকে প্রধান আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন মামলাগুলো স্থগিত থাকলেও বর্তমানে মামলাগুলো সচল হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেল্লাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, চূড়ান্ত বিল প্রদানের সঙ্গে ২০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া অভিযোগ সত্য নয়। মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসাইন কনস্ট্রাকশন পৌরসভার কাছে জামানত বাবদ জামানতের এক কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬০২ টাকা ও ম্যাচিং ফান্ডে জমা দেওয়া এক কোটি ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩২ টাকা পাবেন। কিছু রাস্তা নষ্ট হওয়ার কারণে জামানতের টাকা দেওয়া হয়নি। রাস্তাগুলো সংস্কার করলে জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
পৌর মেয়র মো. রমজান আলী উল্টো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, কাজের গুণগত মান অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে। ১২ মিলি রডের পরিবর্তে ৮ মিলি রড ব্যবহার করা হয়েছে যে কারণে রাস্তার অনেক জায়গা ভেঙে গেছে। একটি তদন্ত টিম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। জামানতের টাকা ঠিকদার প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যাবে কিনা তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যাবে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ জানান, এ বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তার কপিও পেয়েছি। যেহেতু তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর অভিযোগ দিয়েছে, সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে আমরা ঠিকাদারদের অভিযোগের তদন্ত করব। তদন্তের পরে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।