জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদ্রাসায় মারধরের শিকার শিশুটির পড়ালেখা যেন বন্ধ না হয়, সেদিকে নজর রাখতে বলেছেন হাইকোর্ট। এভাবে শিশু নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আদালত বলেছেন, দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে মেনে চলতে হবে। ওই শিশু ও শিশুর পরিবারের সদস্যরা যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে, এ বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত।
আদালত বলেন, মাদ্রাসায় নির্যাতন, এমনকি যৌন নির্যাতনের ঘটনাও দেখা যায়। এ বিষয়ে অনেক আগে থেকে আদালতের নির্দেশনা আছে। নির্দেশনাগুলো সব জায়গায় যাতে কার্যকর হয়। কমিটি গঠনসহ আদালতের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যাতে সচেষ্ট থাকে।
ছাত্রকে বেধড়ক পেটানোর ঘটনায় মাদ্রাসাশিক্ষক ইয়াহইয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপবিষয়ক শুনানিতে রোববার আদালত এই মন্তব্য করেন। গৃহীত পদক্ষেপ বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ।
ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন ১১ মার্চ আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুলাহ আল মাহমুদ বাশার। সেদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই ঘটনায় নেওয়া পদক্ষেপ রোববারের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে মৌখিক আদেশ দেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ সংক্রান্ত তথ্য জানাতে বলা হয়।
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, আদালতের মৌখিক নির্দেশনা অনুসারে দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, দণ্ডবিধি ও শিশু আইনে এই ঘটনায় ১০ মার্চ মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে মাদ্রাসাশিক্ষক ইয়াহইয়াকে নিæ আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রতিষ্ঠান থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। নির্যাতিত শিশু শিক্ষার্থীকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রথমে শিশুটির মা-বাবা মামলা করতে চাননি বলে পর্যবেক্ষণ এসেছে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার (কাউন্সেলিং) পর শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ দায়িত্বশীল যারা আছেন, তাদের সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, যাতে এই মাদ্রাসা বা অন্য কোনো মাদ্রাসায় এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বিচ্ছিন্ন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
আদালত বলেন, মাদ্রাসা কি এখন খোলা? তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খোলা আছে। আদালত বলেন, এখন স্কুল-কলেজে ক্লাস হয় না, ওখানে (মাদ্রাসা) ক্লাস হয় কি? আবদুলাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, কওমি মাদ্রাসা আবাসিক। আদালত বলেন, তাদের নিয়ম অনুযায়ী চলে। যেহেতু মামলা হয়ে গেছে, আইন অনুসারে মামলা চলবে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুলাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, শিশু শিক্ষার্থীদের শাসন করার বিষয়ে ওই মাদ্রাসাসহ সক মাদ্রাসা প্রধানদের সতর্ক করেছেন আদালত। একই সঙ্গে দেশের সব মাদ্রাসার শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রতিবেদন : জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিশুটিকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া শিশুটিকে মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখতে চকলেট, কেক, গল্পের বইসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা উপহার দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। এছাড়া ঘটনার পরদিন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে। ঘটনার পরপরই শিশুটির গ্রামের বাড়িতে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।