গোপাল হালদার, পটুয়াখালী: বর্ষা মৌসুমেও মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে কাঁচামরিচ উৎপাদন করছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সবজিগ্রাম খ্যাত কুমিরমারা গ্রামের কৃষকরা।
কৃষকরা জমিকে উত্তমরূপে তৈরি করে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে বেড তৈরি করে মালচিং পেপার বিছিয়ে সেখানে নির্দিষ্ট দূরত্বে পরপর ছিদ্র করে চারা রোপণ করে কাঁচামরিচ চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে কাঁচামরিচ চাষ করে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় খুশি তারা।
২০০১ সালে প্রথম এ গ্রামে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে কাঁচামরিচ চারা রোপণ করলেও কাঙ্খিত সফলতা পায়নি কৃষকরা। ২০১৩ সালে প্রথম সফলতা পাবার পর থেকে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে মালচিং পদ্ধতি। দীর্ঘ সময় ফলন এবং বাজারে সারাবছর চাহিদা থাকায় কাঁচামরিচ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
কুমিরামাড়া গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, ‘এক শতক জমিতে যে কাঁচামরিচ হয়েছে, তা থেকে অনায়াসে ২০-২৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যাচ্ছে। এবার আমি মোট ২০ শতাংশ জমিতে কাঁচামরিচ আবাদ করেছি। এখন প্রতি কেজি মরিচ ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। কাঁচামরিচ হলো এখন কৃষকের মানিব্যাগ। কাঁচামরিচ নয়, এটা বলতে পারেন কাঁচা টাকা।’
কুমিরমাড়া গ্রামের কৃষক সুলতান গাজী বলেন, ‘মালচিং পেপার ব্যবহার করে কাঁচামরিচ চাষ করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। প্রথমত একবার সার দিয়ে গাছ লাগালে পরে আর সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া মালচিং পেপারের কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়। গাছের গোড়ায় ছাড়া পুরো বেড মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দেওয়ায় কোনো ধরনের আগাছা জন্মাতে পারে না। আগাছা দমনে বাড়তি খরচ করতে হয় না। ফলে উৎপাদন যেমন বাড়ছে; তেমনই ফলনও অনেক বেশি হচ্ছে। এ বছর ভালো দাম পাওয়ায় সব কৃষক লাভবান হয়েছেন। দিন দিন এ পদ্ধতিতে কাঁচামরিচ আবাদের পরিমাণ বাড়ছে।’
এলাকায় শতাধিক কৃষক কাঁচা মরিচের আবাদ করেছেন। প্রতিদিনই তারা পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা পাখিমাড়ায় অস্থায়ী সবজির আড়তে কাঁচামরিচসহ অন্য সবজি বিক্রি করছেন।
পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নীলগঞ্জের কৃষকরা সবজি উৎপাদনে অনেক সমৃদ্ধ। তারা জমিতে সারি সারি বেড তৈরি করে বেডের ওপর মালচিং পেপার ব্যবহার করে মরিচ আবাদ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। এ পদ্ধতি পুরো জেলার কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে কাঁচামরিচ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। বর্তমানে নীলগঞ্জে যে কাঁচামরিচ উৎপাদন হচ্ছে, তা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সব সময়ে তাদের পাশে আছে।’
এবছর জেলায় ৫ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের আবাদ হয়েছে। মালচিং পদ্ধতিতে কাঁচামরিচ উৎপাদন করলে বিদেশ নির্ভরতা কমানো সম্ভব বলে দাবি স্থানীয় কৃষকদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।