জুমবাংলা ডেস্ক : মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে হিউম্যান মিল্ক বা মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক৷ কিন্তু এ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক৷ কিন্তু কিভাবে এলো এই মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণের ধারণা? পৃথিবীর কোন কোন দেশ এটা চালু করেছে। বিশ্বব্যাপী এটা কিরকম প্রভাব বিস্তার লাভ করেছে সেটা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মান ভিত্তিক বাংলা গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতিবছর দুই কোটি শিশু কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়৷ এই ধরনের নবজাতকদেরকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর উপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছে সংস্থাটি৷ পাশাপাশি যেকোনো নবজাতককে জন্মের পর থেকে অন্তত ছয়মাস মাতৃদুগ্ধ পান করার পরামর্শ ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফের৷এই কারণে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক স্থাপন জরুরি।
শিশু তার মায়ের দুধ না পেলে অন্য কোন মায়ের বুকের দুধ যাতে পান করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউএইচও৷ এই প্রয়োজনের নিরিখেই হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের উদ্ভব৷ যেসব মায়েদের নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে কিংবা সন্তানকে খাওয়ানোর পরও যাদের অতিরিক্ত দুধ আছে তারা হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে তা সংরক্ষণ করতে পারেন৷ যেসব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত তারা সেখান থেকে দুধ পানের সুযোগ পায়৷
প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৩ সালে ব্রাজিলে৷১৯৮৫ সালে দেশটিতে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়৷ ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ব্রাজিলিয়ান নেটওয়ার্ক অফ হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকস৷ শুধু নিজ দেশে নয় গোটা লাতিন আমেরিকায় মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা দেয় তারা৷ ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই অঞ্চলে এমন ৩০১টি সংরক্ষণাগার রয়েছে যার ২১৮টিই ব্রাজিলে৷
ইউরোপের বিশটিরও বেশি দেশে মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণাগার রয়েছে৷ সব মিলিয়ে যার সংখ্যা ২৩৯টি বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন৷ আরো ১৫ টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে৷ এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ৩৭টি ব্যাংক আছে ইটালিতে৷ ফ্রান্সে ৩৬টি, সুইডেনে ২৮টি আর জার্মানিতে রয়েছে ২০টি৷
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশন অফ নর্থ আমেরিকা৷ তারা এই অঞ্চলের অলাভজনক মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণাগারগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে৷ বর্তমানে তাদের অধীনে মিল্ক ব্যাংকের সংখ্যা ২৯টি৷
আফ্রিকার তিনটি দেশে বর্তমানে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক রয়েছে৷ ১৯৮০ সালে প্রথম চালু হয় সাউথ আফ্রিকাতে, এরপর ২০১১ সালে আফ্রিকার কেপ ভার্দে এমন উদ্যোগ নেয়৷ সবশেষ চলতি বছরের আগস্টে কেনিয়ার নাইরোবিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশটির প্রথম হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক৷
এশিয়ায় প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক যাত্রা শুরু করে ভারতের মুম্বাইতে ১৯৮৯ সালে৷ বর্তমানে যার সংখ্যা প্রায় অর্ধশত৷ চীনেও এমন ব্যাংক আছে অনেকদিন থেকে৷ ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম তাদের প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে৷ ২০১৫ সালে থেকে এই উদ্যোগ চালু রয়েছে ফিলিপিন্সেও৷ চলতি বছর ইউনিসেফের সহযোগিতায় বিশ্বের অন্যতম বড় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেখানে৷
মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে তাবরিজ শহরে প্রথম মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ইরান৷ চলতি বছরের আগস্টে পঞ্চম ব্যাংকের উদ্বোধন করা হয়েছে সিরাজ শহরে৷ ২০১২ সালে তুরস্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটিতে এ ধরনের ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয়৷ তবে এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি৷
সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত মাতৃদুগ্ধ ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছে৷ ঢাকার মাতুআইলে অবস্থিত শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে বেসরকরাভিবে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে এই ব্যাংকে ৫০০ লিটার দুধ সংরক্ষণ করা যাবে৷ তবে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এখনও হয়নি৷এটা যদি হয় তবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে দুগ্ধ ব্যাংক হবে বাংলাদেশে। সূত্র : আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।